পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত পুলিশ। এই সুযোগে রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিতে প্রকাশ্যে চলছে মাদক বেচাকেনা ও জমজমাট জুয়ার আসর। মাদক বিক্রেতারা জানায়, ঈদকে সামনে রেখে পুলিশ এখন ব্যস্ত। দু’সপ্তাহ আগে ব্যস্ত ছিল জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে। পুলিশের এই ব্যস্ততার সুযোগে মাদক বেচাকেনা বেড়েছে। কোনো কোনো এলাকায় নতুন করে জুয়ার আসর বসানো হয়েছে। কোথাও বন্ধ স্পট নতুন করে চালু হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, জুরাইন, হাজারিবাগ ও আনন্দবাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের বাড়তি আয়ের লক্ষ্যমাত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এসব এলাকায় পাইকারী ও খুচরা সব ধরনের বেচাকেনা আগের তুলনায় বেড়েছে। রমজান মাসে দিনের বেলায় কিছুটা সংযত দেখা গেলেও রাতের চিত্র ভয়াবহ। পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিতে প্রকাশ্যেই মাদক বেচাকেনা চলে। কদমতলীর মুরাদপুর, জুরাইন রেলগেইট, যাত্রাবাড়ীর কাজলার মোড়, কুতবখালী, ধোলাইপাড় এলাকায় প্রকাশ্যেই ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল বিক্রির খবর নিশ্চিত করেছেন ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। কদমতলীর মুরাদপুরের এক বাসিন্দা বলেন, এই এলাকায় থানার সোর্সরা আসামি ধরার নামে পুলিশের সঙ্গে গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। তারাই টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসার সুযোগ করে দেয়। আবার কেউ মাদক বিক্রিতে বাধা দিলে সোর্সরা তাদেরকে কৌশলে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। রমজানে দিনের বেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের কম দেখা গেলেও রাতেও এরা প্রকাশ্যেই বেচাকেনা করে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নাম ভাঙ্গিয়েও মাদক ব্যবসা চলে জানিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, দেখা যায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লে কাউন্সিলর নিজে থানায় গিয়ে তাদের ছাড়ানোর জন্য তদবির করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেলে রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকায় মাদকের ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দিনে রাতে অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হোরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য। এ কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করছে থানা পুলিশের কতিপয় সোর্স, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, ছাত্রনেতাসহ কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসা তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার এক মাদক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করে জানায়, এক সপ্তাহ আগে পুলিশ ব্যস্ত ছিল জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে। তখন ঢাকার বাইরে থেকে বড় বড় মাদকের চালান আসা বন্ধ ছিল। অভিযানের মধ্যে অনেকেই ঝুঁকি নিতে সাহস করেনি। তবে অভিযানের সময় খুচরা বিক্রি বেড়েছে। তখন পুলিশের নিয়মিত টহলেও ভাটা পড়েছিল। এই সুযোগে মাদকাসক্তরা যেমন নিরাপদে মাদক ক্রয় ও সেবনের সুযোগ পেয়েছে। তেমনি বিক্রেতারাও অবাধে বিক্রি করতে পারছে। যদিও এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি)। আলাপকালে কয়েকজন বলেন, ঈদে পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে একথা ঠিক। কিন্তু তাই বলে পাড়া-মহল্লায় নিয়মিত ডিউটি ছিল না তাতো নয়। একজন ওসি বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরে রমজানের আগে ঈদ উপরক্ষে যে সবা হয়েছিল তাতে ঈদে মার্কেটকেন্দ্রীক নিরাপত্তা, যানজট, ছিনতাইকারী, পকেটমার, অজ্ঞানপার্টি ইত্যাদি অপরাধ দমনের পাশাপাশি মাদক ব্যবসা বন্ধ করারও আদেশ ছিল। সুতরাং ঈদের অজুহাতে মাদক ব্যবসায়ীরা অবাধে ব্যবসা করবে বা করছে একথা সঠিক নয়। তবে পুলিশের এই দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি রাজধানীর গোপীবাগে মাদক আখড়া নামে পরিচিত পাড়ার অলি-গলিতে গিয়ে। ঘরের পুরুষরা একটু আড়ালে থাকলেও নারীরা দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে নিচ্ছেন। দু’জন মানুষ কোনমতে হাঁটতে পারে এমন অলিগলি পার হয়ে হাত বাড়ালেই চালের ড্রাম, ওষুধের কৌটা থেকে বেরিয়ে আসছে ইয়াবা, ফেন্সিডিল। কথা বলে জানা গেল, গোপীবাগের ভেতরে মাদক বিক্রেতারা বেশি কিছুদিন ধরে বেশ আয়েশেই সময় কাটাচ্ছে। তাদের ধারণা, ‘পুলিশ এখন ব্যস্ত’।
রাজধানীতে মাদক বিক্রেতাদের হিসাব অনুযায়ী চিহ্নিত সাড়ে ৬শ স্পট আছে। এসব স্পট সম্পর্কে পুলিশের সবই জানা। তারপরেও ব্যবসা চলে, কখনও গোপনে, কখনও প্রকাশ্যে। মাদক ব্যবসায়ীদের দাবি, গোপন ব্যবসায় ঝুঁকি বেশি। সে কারণে তারা পুলিশকে ম্যানেজ করেই স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করার চেষ্ট করে। পুরান ঢাকার একজন মাদক ব্যবসায়ী বলেন, ঢাকায় অবাধে মাদক ঢুকছে তাই আমরা বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছি। পুলিশসহ যে মাদকচক্র, তা ভাঙা মুখের কথা না। তিনি বলেন, অভিযানের নামে খামোখা কয়েকদিন পরপর আমাদের পেটে লাথি মারা হয়।
অন্যদিকে, ঈদকে সামনে রেখে আবার জমজমাট হয়ে উঠেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জুয়ার আসর। যাত্রবাড়ী, শ্যামপুর, মিরপুর, পল্লবী, মোহাম্মদপুর, আদাবর, খিলগাঁও, হাজারীবাগসহ পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় প্রকাশ্যে জুয়ার আড্ডা বসছে। এসব আড্ডায় লাখ লাখ টাকার কারবার চলে। অনেকে জুয়ায় আসক্ত হয়ে স্ত্রীর গহনা পর্যন্ত বন্দক রাখেন। গত মাসে দৈনিক ইনকিলাবে যাত্রাবাড়ীর মৎস্য আড়ৎ ও কাজলার পাড়ে সবুরের বাড়িতে জুয়ার আসর নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সেই সব জুয়ার আসর বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। ঈদকে সামনে রেখে আবার তা চালু হয়েছে। যাত্রাবাড়ীর পাইকারী আড়তের আল্লাহর দান মৎস্য আড়তে সমানে চলছে জুয়ার আসর। স্থানীয়রা জানান, রমজান মাসেও দিনে রাতে এই জুয়ার আসর চলে। সবুর চালায় এই জুয়ার স্পট। সবুরের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা দিয়ে সবুর এই স্পট চালায় বলে তাদেরকে জানিয়েছে। কাজলার পাড়ে সবুরের বাড়িতে আবারও জুয়ার আড্ডা বসছে নিয়মিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, সবুর জুয়ার আসর বসিয়ে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। উঠতি বয়সি যুবকরা জুয়ার আসরে গিয়ে টাকা-পয়সা খোয়াচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সবুরের আসরে মাদক সাপ্লাই দেয় রাজু। রাজু বিক্রি করে ইয়াবা ও গাঁজা। এসব মাদক আর জুয়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় চুরি ছিনতাই বেড়েই চলেছে। এই দুই স্পট ছাড়াও যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের পাশে বরকত উল্লাহ বুলুর পাম্পে জুয়ার স্পট চালায় প্রভাবশালী চাঁন। তাকে সহযোগিতা করে সোর্স আলম ও তোফাজ্জল। এরাও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই জুয়ার আসর বসিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেছেন, এর আগে জুয়ার অভিযোগ শোনার পর তিনি তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বিষয়টি আবার তদন্ত করে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বাংলা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযান অব্যাহত আছে এবং প্রতিনিয়ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কমিউনিটি পুলিশ, বিট পুলিশকে কাজে লাগিয়ে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। তবে রাজধানীবাসীকে যদি সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।