পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার ঃ চার শতাধিক বিদেশি কোম্পানি দেশে ব্যবসা করলেও মাত্র ১৩টি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। আর বাকি কোম্পানিগুলো সরকারের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে দেশের পুঁজিবাজারে আসছে না। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশের পুঁজিবাজারে (বাজার মূলধনের দিক থেকে) ২৬ শতাংশে আটকে আছে বিদেশি কোম্পানির অবদান।
এ সুযোগে ভালো মুনাফা করে শতভাগ মালিকানা নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক (বিদেশি) এই কোম্পানিগুলো। আর ভালো কোম্পানির শেয়ারের অভাবে খারাপ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়ে প্রতিনিয়তই নিঃস্ব হচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীরা। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে গ্রামীণফোন কোম্পানি। এতে সাধারণ মানুষও পুঁজিবাজারের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে প্রতিনিয়তই লাভ বা মুনাফা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নতুন করে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী বিদেশি কোম্পানি বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
তাই বিনিয়োগকারী ও বাজারের স্বার্থ রক্ষায় দ্রুত এসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের সঙ্গে এক মত পোষণ করে সম্প্রতি সংসদের আলোচনায় ওইসব কোম্পানিকে বাজারে আনার দাবি জানিয়েছেন এমপিরাও।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, পুঁজিবাজারে অবদান রাখা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ, লিন্ডে বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বাটা সু, ফুওয়াং ফুড এবং ফুওয়াং সিরামিক। এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে গ্রামীণফোনের একাই অবদান ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ। আর বাকি ১২ কোম্পানির অবদান ১৪ শতাংশ। অপরদিকে লেনদেনের দিক থেকে ৫৫-৫৬ শতাংশ অবদান রয়েছে এই কোম্পানিগুলোর। এগ্রিলে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫৫ আর মে মাসে ৫৬ শতাংশ অবদান ছিল বিদেশি কোম্পানিগুলোর।
রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক বাংলাদেশের তথ্য মতে, দেশে ব্যবসা করে আসা বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে মুনাফার দিক দিয়ে সবার উপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি শেভরন। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করছে এ কোম্পানিটি। ১৮৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি তেল ও উৎপাদনমুখী শিল্পে প্রভাব বিস্তারকারী একটি প্রতিষ্ঠান। এর পরের স্থানে রয়েছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এদেশে স্থায়ী ব্যবসা শুরু করে। দেশের প্রসাধন সামগ্রীর বাজারে শীর্ষে রয়েছে কোম্পানিটি।
ব্যাংকিং খাতে বহুজাতিক কোম্পানির নেতৃত্ব দিচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) লিমিটেড ও সিটিব্যাংক এনএ। এছাড়াও রয়েছে সিমেন্স, এরিকসন, মবিল, নেসলে, এভেরি ডেনিসন, ইয়ংওয়ান, নোভারটিস বাংলাদেশ, কোস্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, জিআইজেড, গ্রে-অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেড, এশিয়ান পেইন্টস, এসিএস টেক্সটাইল, এমসিসি ট্রান্সপোর্ট, হোটেল আমরাই, নিউ ভিশন সলিউশন, ডেনিম এক্সপোর্ট, আরএকে পেইন্টস, ভিনারো ইন্টারন্যাশনাল ও সিপি বাংলাদেশের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিএসই’র পক্ষ থেকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে সরকার ও কোম্পানিগুলোকে প্রস্তাব করেছি। সরকারকে এসব কোম্পানির দাবিগুলো পূরণ করার জন্যও বলেছি। কিন্তু কোনো ধরনের সুখবর এখনো পায়নি।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান জানান, এ কোম্পনিগুলোকে পর্যায়ক্রমে পুঁজিবাজারে আনতে অর্থ-মন্ত্রণালয় ও কোম্পানির সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। এখনো কাজ করছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এরা পুঁজিবাজারে আসতে চায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনতে সরকারের চেষ্টা নেই। দেশি কোম্পানির মতো সরকার যদি বিদেশি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসার জন্য বাধ্যতামূলক আইন করলেই তো হতো। তাও না করলে, অন্তত পুঁজিবাজারে আনতে তাদের জন্য বিশেষ ছাড় দেয়া হবে, এমনকিছু লোভনীয় অফার দিলেই তো তারা বাজারে আসবে। ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে একদিকে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।