পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাভার উপজেলায় অবৈধভাবে দিব্যি চলছে শতাধিক ইটভাটা। এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি কোনো নিয়মই। পরিবেশ দূষণ করে লোকালয় ও ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। যেগুলোর নেই লাইসেন্স নবায়নের কোনো কাগজ এমনকি পরিবেশ ছাড়পত্র।
সরেজমিনে গতকাল দিনভর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কয়লার পাশাপাশি পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, প্লাস্টিক, টায়ার। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শ্রমিকরা জানান, এসব ভাটায় কাঠ ব্যবহার হয় না। সারা বছর কয়লা পোড়ানো হয়। তবে আগুন ধরানোর সময় কাঠের প্রয়োজন হয়।
ভাটাগুলোর পাশেই দেখা যায় ফলের বাগান, আলু ও ধানখেত। রয়েছে জনবসতি, মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
রাজধানীতে বায়ুদূষণ কমাতে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলার সকল অবৈধ ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু ভাটা মালিকরা হাইকোর্টের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করেই তাদের ইচ্ছে মতো পরিবেশ দূষণ করে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখের সামনে এসব অবৈধ ভাটা চালানো হলেও এ ব্যাপারে তাদের নেই কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ।
এসব ইটভাটার কারণে শুধু জমির উর্বরা শক্তিই বিনাশ করে না, এর চিমনিবাহিত ধোঁয়ায় চারপাশের জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া, বিভিন্ন ফল গাছের ফলন কমে যাওয়া, উৎপাদিত সবজি খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পরে।
বর্তমানে সাভার উপজেলায় নতুন-পুরাতন মিলে অন্তত ১৬০টি ইটভাটা রয়েছে। যার কোনটিরই পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। আর অর্ধশত ইটভাটার কাস্টম এক্সসাইজ অ্যান্ড ভ্যাটের লাইসেন্স নেই। অথচ স্থানীয় প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অভিযোগ আছে, স্থানীয় মালিকদের কেউ কেউ কৃষকদের ম্যানেজ করে জমি লিজ নিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করছেন। আবার অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স দেখিয়ে পৌরসভার ঘনবসতি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করেছে। ভাটার চিমনির উচ্চতা বাড়ালেও তা থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে রেহাই পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। কালো ও সাদা উভয় প্রকারের ধোঁয়ায় এলাকাবাসী আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগব্যাধিতে। এসব ভাটাগুলোতে কয়লা পেড়ানোর কথা বললেও কার্যত পোড়ানো হচ্ছে বনভ‚মির গাছ, আর গাড়ির পুরাতন টায়ার ও রাবার। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
উপজেলার ভাকুর্তা এলাকার এমটিবি ব্রিকস, এবিএন ব্রিকস, তাহা ব্রিকস, পৌর এলাকার গেন্ডা মহল্লায় অবস্থিত টিবিসি ব্রিকস, কর্নফুলি সুপার ব্রিকস, চাঁন অ্যান্ড ব্রিকস, আশুলিয়ার সনি ব্রিকস, তুরাগ ব্রিকস, ঋতু ব্রিকসসহ বেশিরভাগ ইটভাটায় কাঠ, গাড়ির পুরাতন টায়ার, রাবার ও প্লাস্টিকের দানা (গুড়া) পুরানো হয়।
তবে পৌর এলাকার চাঁন অ্যান্ড ব্রিকস কর্তৃপক্ষ বনগাঁও ইউনিয়ন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ওই এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের কথা বললেও মূলত পৌর এলাকার ঘনবসতিপূর্ণ মহল্লায় ইটভাটা স্থাপন করেছেন।
টিবিসি ব্রিকস ফিল্ডের ব্যবস্থাপক দীলিপ সাহা জানান, তাদের ভাটার লাইসেন্স রিনিউ করা নেই এমনকি পরিবেশের ছাড়পত্রও নেই। পরিবেশ দূষণ সর্ম্পকে তিনি বলেন, তাদের ভাটায় কালো ধোঁয়া বের হয় না, যদিও বের হয় তা ১২০ ফিট চিমনির উপর দিয়ে যায় ফলে পরিবেশ দূষণ হয় না। হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রসঙ্গে বলেন, এতো অল্প সময়ের মধ্যে ইটভাটা অন্যত্র নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। ভাটার পাশে জামিয়া ইসলামিয়া মিফতাহুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ওয়াক্কাস নোমানী জানান, ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হলে কি করবো, তারা কি আমাদের কথা শুনবে?
কর্ণফুলি ব্রিকসের ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান জানান, ঘনবসতি এলাকায় ইটভাটা রয়েছে, কিন্তু পরিবেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তাছাড়া এলাকায় কেউ এখনও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এমন কথা বলেনি। তিনি দাবি করেন তাদের ভাটার লাইসেন্স কিংবা পরিবেশের কোনো ছাড়পত্র নেই।
তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, পরিবেশ দূষণ ছাড়াও ভাটার কারণে জমি চিরতরে বা সাময়িকভাবে বন্ধ্যা পরিণত হয়। আগুনের তাপে জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও জমির ‘টপ সয়েল’ বা উর্বরা অংশ কেটে ইট বানানো হয়। ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলেও এই জমি আর পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে না। আবার ক্ষেত্রবিশেষে এ জমিকে চাষাবাদের উপযোগী করতে লেগে যায় দু’তিন বছর। তাই অপরিকল্পিত ইটভাটা জমির সর্বনাশ ডেকে আনে। যা কৃষিনির্ভর দেশের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ।
এদিকে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় অবৈধ ইটভাটা বানানোসহ আবাদি ভ‚মির জন্য হুমকি সৃষ্টির সব পথ বন্ধ করতে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।