Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

ধ্বংসের পথে সোনালি আঁশ

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

একসময়কার সোনালী আঁশ খ্যাত ও অমিত সম্ভাবনাময় পাট সেক্টর এখন রীতিমত ঝুঁকির মুখে। বছরজুড়ে দফায় দফায় চলছে রাজপথ রেলপথ অবরোধ, অনশন, হরতাল। বেড়ে চলছে সংঘাত সংঘর্ষ সহিংসতা। শ্রমিকরা ১১ দফা দাবিতে একের পর এক আন্দোলন চালিয়ে গেলেও সুষ্ঠ সমাধান দিতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে নানা সময় সরকারকেও পড়তে হচ্ছে বিপাকে। সর্বশেষ বছরের শেষ সময়ে শ্রমিক আন্দোলন চরম আকার ধারণ করেছে। সবমিলিয়ে পাট সেক্টরের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং পাট মন্ত্রণালয় ও বিজেএমসি’র অবহেলার কারণে আজ ধ্বংসের পথে সম্ভাবনাময় এ খাত। বিজেএমসি’র দেন দরবার সত্তে¡ও ১১ দফা দাবিতে পাটকল শ্রমিকরা আগামি ৩ ডিসেম্বর আবারও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ফলে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাট সেক্টর।

এদিকে খুলনা যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলে বর্তমানে ৩০ হাজার ৪৬২ মেট্রিক টন পাটপণ্য মজুদ রয়েছে। যার বাজারমূল্য ২৭০ কোটি টাকা। সুদানে রপ্তানি বন্ধ থাকার কারণে পাটপণ্যের মজুদ কমছে না। স্থানীয় বাজারগুলোতে পাটপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে উৎপাদিত পাটপণ্যের মজুদ কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি কার্যকরি মূলধন না থাকায় পাটকলগুলোতে কাঁচা পাটের কোনো মজুদ নেই। এর ফলে পাটকলগুলোতে বাজেট উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। মিলগুলোতে উৎপাদন ক্ষমতার ২০ ভাগ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিজেএমসির অদক্ষতায় মিলগুলোতে মূলধনের অভাব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মিলগুলোতে অসামঞ্জস্যতা বিরাজ করছে। উৎপাদনের সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিএজএমসি) খুলনা অঞ্চলের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মো. বনিজ উদ্দিন মিয়া বলেন, বর্তমানে খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের ক্রিসেন্ট জুট মিলে ৮ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন, প্লাটিনাম জুট মিলে ৬ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন, খালিশপুর জুট মিলে ৬ হাজার ৫৯৪ মেট্রিক টন ও দৌলতপুর জুট মিলে ৯৭৮ মেট্রিক টন, দিঘলিয়া শিল্পাঞ্চলের স্টার জুট মিলে ১ হাজার ১১৬ মেট্রিক টন, আটরা শিল্পাঞ্চলের আলিম জুট মিলে ১ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন ও ইস্টার্ন জুট মিলে ২ হাজার ৫৭ মেট্রিক টন, যশোরের নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চলের যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিতে (জেজেআই) ৩ হাজার ৩৯৬ মেট্রিক টন ও কার্পেটিং জুট মিলে ৬শ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে।

ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএ’র সাবেক সভাপতি মো. মুরাদ হোসেন বলেন, বকেয়াসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে শ্রমিকরা। ৩ ডিসেম্বরের ধর্মঘট সমর্থনে ২ ডিসেম্বর বিক্ষোভ মিছিল, ৩ ডিসেম্বর সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হবে। যা ৪ ডিসেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত চলবে। ৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় স্ব-স্ব মিলগেটে সভা, ১০ ডিসেম্বর আমরণ অনশন সমর্থনে ৮ ডিসেম্বর সকল মিলে একযোগে গেটসভা এবং আমরণ অনশন সফলের শপথ গ্রহণ, ১০ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে স্ব-স্ব মিলগেটে আমরণ গণঅনশন শুরু হবে।
খালিশপুর জুটমিলের সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, পাটকল শ্রমিকরা নিয়মিত মজুরি না পেয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ নিত্যদিনের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

প্লাটিনাম জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান বলেন, খুলনা ও যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ নেই, শ্রমিকদের ১০/১১ সপ্তাহের মজুরি ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রায় ৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে, পিএফ বাবদ বাকি ৮৭ কোটি টাকা, গ্রাচ্যুইটি বাবদ বাকি ২৩০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া পাটের দেনা ১৮৬ কোটি টাকা। অন্যখাতে প্রায় ৭২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।

বিজেএমসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারনে গত ১০ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোর লোকসানের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে যদিও দেশের বেসরকারি পাটকলগুলো লাভ করছে। এ পরিস্থিতির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিকরা এবং শ্রমিক নেতারা কারখানা পরিচালনায় দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব এবং কাঁচা পাট কেনায় অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকে দায়ি করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অব্যাহত ভাবে ভর্তুকি দিয়ে কারখানা চালানো যে সম্ভব নয় তা শ্রমিকরাও অনুভব করছেন। তাঁদের মতে রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের পাটকলগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে হলে এগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিজেএমসিকে গতিশীল করার জন্য বর্তমান বিশ্বায়নের যুগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এর পুণর্গঠন করতে হবে এবং একই সাথে কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি এগুলোকে সৎ ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার ব্যবস্থা করতে হবে।

তাঁরা বলছেন পরিবেশ বিধ্বংসী প্লাস্টিক বন্ধে স¤প্রতি যে বৈশ্বিক ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে সেই শূন্যস্থান প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন একমাত্র পাটই পুরণ করতে পারে। পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে দক্ষতার সাথে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী হারানো পাটের বাজার ফিরে পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

অপরদিকে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকল চরম আর্থিক সংকটে রয়েছে। এ কারণে নিয়মিত মজুরি ও বেতন পাচ্ছেন না শ্রমিক-কর্মচারি ও কর্মকর্তারা। এসব পাটকলের শ্রমিকদের ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ২ থেকে ৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের প্রায় ৫৩ কোটি টাকা মজুরি ও বেতন বকেয়া রয়েছে। ফলে চরম অর্থকষ্টে রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারিরা। এ অঞ্চলের প্রায় ৩১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারি পরিবারে চলছে হাহাকার। দূর্বিষহ দিন কাটছে তাদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ