দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
রবিউল আউয়াল মাস। এ মাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের পৃথিবীতে আগমণ ও ইন্তেকাল হয়েছিল। এ মাসটি মহানবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.)-এর পৃথিবীতে আগমণের কারণে আনন্দ এবং ইন্তেকালের কারণে বেদনার মাস হিসেবে পরিচিত। এ মাসের ১২ তারিখ সুবহে সাদিকের সময় আরব দেশের মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশের এক ভদ্র পরিবারে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদুর রাসূলূল্লাহ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন এবং একই তারিখে ৬৩ বছর বয়সে মদিনা মুনাওয়ারায় ইন্তেকাল করেন।
রাসূল (সা.)-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত, প্রতিটি ক্রিয়াকর্ম বিশ^বাসীর জন্য সর্বোত্তম অনুকরণীয় আদর্শ। তিনি মানবতার হেদায়ত ও মুক্তির পথ-পদর্শক। জাহান্নামের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর মুক্তির পয়গাম ঐশী বাণী আল-কুরআন নিয়ে দেড় হাজার বছর আগে তিনি পৃথিবীতে আগমণ করেছিলেন। তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন, সত্য-অসত্যের পার্থক্য, জীবনযাপনের সর্বোত্তম পথ ও পদ্ধতি, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পন্থা, জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়।
প্রিয়নবী (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে যে পথ ও পদ্ধতি মানুষকে শিখিয়েছেনÑ তার নাম হচ্ছে ‘ইসলাম’। ইসলাম সর্বকালের মানুষের জন্য মহান আল্লাহ্ প্রদর্শিত জীবনাদর্শ ও পথ নির্দেশিকা। মানবতার কল্যাণ ও মুক্তি ইসলামেই নিহিত। ইসলাম হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এবং আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম। এছাড়া আর কোন ধর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে, তার পক্ষ থেকে তা কখনোই গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আমরা অন্তরে বিশ^াস করি এবং মুখে স্বীকার করিÑ “আল্লাহ এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।”
মহানবী (সা.) এর আগমনের পূর্বক্ষণে দুনিয়ার ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। সেই অজ্ঞতার যুগে মানুষের ছিলো না কোন সামাজিক অধিকার, মানুষ ভুলে গিয়েছিল তাদের সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য। খুনাখুনি রাহাজানি, মদ্যপান, নেশা, ধর্ষণ, অবৈধ কার্যকলাপ ছিলো তখনকার লোকদের নিত্যদিনের কাজ। সায়্যিদুল মুরসালীন রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসলামের বাণী প্রচার করে ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী জীবন দর্শনের মাধ্যমে একটি জাহেলি বর্বর সমাজকে আদর্শ সমাজে রূপান্তর করেছিলেন। তাঁর নবুওতী জীবনের মাত্র তেইশ বছরে মৃতবৎ মানবজাতির বৈপ্লবিক সংস্কার সাধন করে তাদেরকে মানবতার উচ্চ শিখরে অধিষ্টিত করেন। প্রেম-মমতা, ত্যাগ, পরোপকার, প্রভৃতির মাধ্যমে মায়া-মমতার একটি বেহেশতী সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর এই শিক্ষা ও চরিত্রের সৌন্দর্যের জোয়ার ছড়িয়ে পড়ল দুনিয়াজুড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পেলাম ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী জীবন দর্শনের সন্ধান। আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা হলাম সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, বিশ্বনবী, রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলূল্লাহ (সা.)-এর উম্মাত।
আমাদের কর্তব্য হলো, রাসূল (সা.) এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। তাঁর আদর্শ অনুসরণ-অনুকরণ করা। তাঁর সুন্নাহকে আকড়ে ধরা। তাঁকে জান-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসা। আল্লাহ তা’লা মুমিনদেরকে কুরআনের একাধিক আয়াতে রাসূল (সা.)-কে সৃষ্টিজগতের সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসতে বলেছেন। যদি কোন ব্যক্তির অন্তরে রাসূল (সা.)-এর প্রতি সর্বাধিক ভালোবাসা না থাকে, তাহলে লোকটি প্রকৃত মুসলমানই নয়। আল্লাহ তা’লা বলেনÑ “বলো, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তানাদি, তোমাদের ভাই, তোমাদের পরিবার-পরিজন, তোমাদের বংশ-গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বানিজ্য- যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং বাসস্থান- যাকে তোমরা পছন্দ কর, (তা যদি) আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করবেন না।” (সূরা আত তাওবাহ: ২৪
হাদীস শরীফে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ (পূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন না আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান এবং অন্যান্য সকল মানুষ থেকে প্রিয়তম হব।” (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং মুসলমানরা রাসূল (সা.)-কে নিজেদের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি থেকে বেশী ভালোবাসে। একজন প্রকৃত ঈমানদার মুসলমান সবকিছু সহ্য করতে পারলেও রাসূলের অপমান সহ্য করতে পারে না। যারা রাসূলের অপমান করে, ব্যঙ্গ-কটুক্তি করে, মুসলমানরা তাদেরকে বরদাশত করতে পারে না। রাসূলের ভালোবাসায় নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। এর প্রমান মুসলমানরা বার বার দেখিয়ে যাচ্ছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।