পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফয়সাল আমীন : টেকসই উন্নয়নের পথ সিলেটে সূচনা হয়েছিল বিশ্ব বরণ্যে কূটনীতিক সাবেক স্পিকার মরহুম হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর হাত ধরে। উন্নয়ন স্বপ্ন সত্যিকার অর্থে রূপায়িত হয়েছিল তার মাধ্যমেই। এরপর সিলেটের সামগ্রিক উন্নয়নের হাল ধরলেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান। উন্নয়নের বরপুত্র হিসাবে সমাদৃত হলেন তিনি। স্বপ্নের চাইতে উন্নয়নযজ্ঞ দেখতে লাগলো সিলেট বাসী। দলমত নির্বিশেষে তার প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ল সিলেটসহ সারাদেশে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনপদ সিলেটের মাটি ও মানুষ সে উন্নয়নে সমৃদ্ধ হতে উঠল। উন্নয়ন পরিকল্পনা এতোই বিস্তৃত ছিল যে, সময় ও সুযোগ ঘটলে সিলেটের উন্নয়ন মডেল হয়তো সারাদেশে জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে উঠত। কিন্তু ৪ দলীয় জোট সরকারের পতন ও পরবর্তী ওয়ান ইলেভেন সরকারকালীন থমকে যায় উন্নয়ন চাকা। এরপর ১৪দলীয় জোট নির্বাচনে জয়লাভের মধ্যে দিয়ে সিলেটের হাল ধরেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি তার পূর্বসূরীদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তে মনোযোগী হয়ে উঠেন। তারপরও উন্নয়ন নিয়ে একাধিক যৌক্তিক দাবী রয়েছে সিলেটেবাসীর। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সেই দাবীর ব্যাপারে বাস্তবমুখী সুরহা চান আপামর সিলেটবাসী। প্রবাসী অধ্যূষিত সিলেটবাসী ইতিমধ্যে নিয়মতান্ত্রিক দাবী তুলে আদায় করেছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পূর্ণাঙ্গতা। এখন লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটে আসতে পারছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিন এ রুটে কয়েকশ’ যাত্রী চলাচল করেন। কিন্তু পুর্নাঙ্গ রূপ লাভ করলেও ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর এখনও সিলেটের মানুষের কাক্সিক্ষত চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। বাংলাদেশের আরেক শহর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উড়োজাহাজ যাতায়াত করলেও সিলেটবাসী এখনও বাংলাদেশ বিমান নির্ভর। আর লন্ডনের যাত্রীরা সরাসরি বৃটেন থেকে সিলেটে আসতে পারলেও এখন সিলেট থেকে সরাসরি যাত্রা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ঢাকা হয়ে তাদের যেতে হচ্ছে বহির্বিশ্বে। ফিরতি পথের এ ভোগান্তি সিলেট প্রবাসীদের তিক্ত অভিজ্ঞতায় নীল করে দিচ্ছে। এছাড়া নানাবিধ জটিলতায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশী কোনো উড়োজাহাজ কোম্পানী ঠিকানা গড়তে পারেনি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রচেষ্টায় বিমানবন্দর এলাকায় রিফুয়েলিং সিস্টেম চালু হলেও বাইরের কোনো উড়োজাহাজ কোম্পানী না আসায় হতাশ হয়েছেন এ অঞ্চলের প্রবাসীরা। বিগত ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাই দুবাই কোম্পানীর একটি উড়োজাহাজ সরাসরি দুবাই থেকে এসেছিল। কিন্তু গ্রাউন্ড জটিলতার কারনে শেষ পর্যন্ত ওই কোম্পানী সিলেটে আর ফ্লাইট অপারেট করেনি। এছাড়া এয়ার এরাবিয়া নামের একটি উড়োজাহাজ কোম্পানী ওসমানীতেও ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু দুটি কোম্পানীর উড়োজাহাজই গ্রাউন্ড সার্ভিস জটিলতার কারনে শেষ পর্যন্ত সিলেট থেকে তাদের ফ্লাইট গুটিয়ে নেয়। ওই সময় ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল- তারা বাংলাদেশ বিমানের কাছ থেকে গ্রাউন্ড সার্ভিস পাচ্ছে না। দীর্ঘ দিনেও সরকারের পক্ষ থেকে এই জটিলতা নিরসনে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
অপরদিকে, সরকারের ঘোষণা রয়েছে- প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। কিন্তু সে আশা এখনও পূরণ হয়নি সিলেটবাসীর। ইতিমধ্যে রাজশাহী ও চট্টগ্রামবাসী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেও সিলেটে এখনও সিলেট মেডিকেল কলেজ ‘কলেজে’-ই গড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারনে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান ব্যহত হচ্ছে সিলেটে। এখনও জটিল রোগের চিকিৎসা সেবার জন্য সিলেটের মানুষকে দৌড়াতে হয় রাজধানীতে। কিন্তু সে চিকিৎসা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অনেকটা দু:স্বপ্ন। আর বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় অনেক ভালো মানের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও সিলেটে স্থায়ী হচ্ছে না। মেধা ও যোগ্যতার বিকাশে তারা উন্নতর আশায় স্থানান্তরিত হচ্ছে সুবিধাজনক স্থানে।
সিলেট মহানগরীর উত্তর অংশের প্রায় ৬ লাখ মানুষের জন্য মাত্র একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে। ওই স্টেশন থেকে দুরবর্তী স্থানে আগুন লাগলে তা ছড়িয়ে পড়ার বহু পরে সেখানে পৌঁছায়। এতে করে মানুষের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে প্রচুর। এই অবস্থা কাটাতে ইতিমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সিলেট মহানগরীর জন্য আরও ৪টি স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবনা এখনও প্রস্তাবনা আকারে রয়েছে। সরকার থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহন করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, সিলেট মহানগর আখালিয়া, খাদিমপাড়া, বিমানবন্দর সড়ক ও উপশহরে চারটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মানের প্রস্তুাবনা রয়েছে। যেসব স্থানে ফায়ার সার্ভিস স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা রয়েছে সেগুলো খুব গুরুত্বপূর্ন বলেও দমকল বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সিলেটবাসীর অন্যতম দাবি- রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এজন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সিলেট থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ঘোষণা অনুযায়ী আখাউড়া এলাকায় বাইপাস নির্মান করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি আর পূরণ হয়নি। বর্তমান সরকারের প্রস্তাবনায়ও সেটি রয়েছে। কিন্তু এখনও এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টঙ্গি থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল লাইন স্থাপনের কাজ চললেও সিলেটে ডাবল লাইন নির্মাণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। এদিকে, ডাবল লাইন না হওয়ার কারণে সিলেট থেকে ঢাকা পর্যন্ত দ্রুততম ট্রেন সার্ভিস শুরু হয়নি। সিলেটবাসীও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডাবল লাইনের দাবি ইতিমধ্যে তুলেছেন।
ওদিকে, ২০০৪ সালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ফোর লেন স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দুই লাইনেই কাজ সমাপ্ত করা হয়। ফলে ফোর লেন নির্মাণের দাবি অপূরণই থেকে গেলো। এই অবস্থায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেও সিলেটে এ সড়কপথটি দুঘর্টনার অন্যতম রুটে পরিনত হয়েছে। সর্বশেষ গেলো মাসে সিলেটে সফরকালে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী বছরের শুরু থেকে এর কাজ শুরু হতে পারে। এখন প্রস্তুাবনা তৈরীর কাজ চলছে। তবে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে ফোর লেনে উন্নীত করার ঘোষনাটি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই পেতে চান সিলেটবাসী।
আ’লীগ নেতাদের দৌড়ঝাঁপ
আগামী ২১ জানুয়ারি সিলেট সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেট পৌঁছার পর প্রথমে তিনি হযরত শাহজালাল, শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন। পরে ঐতিহাসিক আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করবেন। আর এ জনসভা ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী জনসভায় কয়েক লাখ উপস্থিতির নিশ্চিতের টার্গেটে সংশ্লিষ্টরা মাঠে নেমেছেন বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর উপলক্ষে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এমনকি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও প্রধানমন্ত্রীর সফর স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক করতে সীমাহীন আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচষ্টোয় সরগরম হয়ে উঠছে সিলেট। জেলার প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন, চা বাগান, এমনকি প্রতিটি গ্রামে গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রচার-প্রচারণা চলছে দেদারছে। ভাচর্ুৃয়াল দুনিয়াও বাদ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সফর ও সমাবেশ সফলের আহবান জানানো হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।