Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের দখলে ৫০ হাজার একর জমি

প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৮ পিএম, ২১ জুন, ২০১৬

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : সীমান্ত নদী ভাঙনে দেশের মূল্যবান ভূমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। এপারের ভাঙনে ওপারে ভারতীয় অংশে জেগে ওঠা জমি আর ফেরত পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এভাবেই স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার একর জমি এখন ভারতের দখলে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের কাগজে-কলমে এর হিসাব থাকলেও বাস্তবে এসব জমির ওপর বাংলাদেশের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এভাবেই অভিন্ন ৫৪টি নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। এই পরিস্থিতির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, সীমান্ত নদী ভাঙন প্রতিরোধ কাজের জন্য তাদের পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। তবে পাউবো’র সাবেক কর্মকর্তাদের অভিমত হচ্ছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধার কারণেও অনেক সময় কাজ করা সম্ভব হয় না।
এ ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, সীমান্ত নদী ভাঙন প্রতিরোধ কাজ জোরদার করতে তারা বাজেট বরাদ্দ চেয়ে একাধিকবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। বরং গত অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে তাদের বাজেট আরও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত নদী ভাঙনের বিষয়টি লিখিতভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। তবে পাউবো এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এসব বক্তব্যের সাথে একমত নয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পাউবো’র কাজ নিয়ে খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রশ্ন তুলেছেন। পাউবো কেন শুষ্ক মৌসুমের কাজ বর্ষায় করে তা খতিয়ে দেখা উচিত। পাউবোর কাজ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বিতর্ক যাই থাকুক না কেন, দেশের পানি বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছেÑসীমান্ত নদীর ভাঙন থেকে দেশের মূল্যবান ভূমি রক্ষা করতে হলে অবশ্যই প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে সুরমা, কুশিয়ারা, ফেনী, সুমেশ্বরী, মুহুরি, করতোয়া, মহানন্দা, ধরলা, দুধকুমার, আত্রাই, তিস্তা, ইছামতী, কালিন্দীসহ বিভিন্ন সীমান্ত নদীতে ভাঙন চলছে। অব্যাহতভাবে এসব সীমান্ত নদী ভেঙে ওপারে বড় বড় চরে রূপান্তরিত হচ্ছে। এছাড়া ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মসজিদ, মন্দির, হাটবাজার, স্কুল, মাদ্রাসা, অফিস-আদালত, ব্রিজ-কালভার্ট, বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। কোনো কোনো এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা মানসম্পন্ন নয়।
প্রতি বছর সীমান্ত নদীগুলো কমপক্ষে দু’দফা ভাঙনের কবলে পড়ে। আবার কোনো কোনো বছর দু’দফায় বন্যা দেখা দিলে ভাঙন আরও তীব্র হয়। এবছরও বন্যার আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে করে চলতি বর্ষায় সীমান্ত নদীগুলোতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করবে।
এদিকে সীমান্ত নদী ভাঙনে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ কী পরিমাণ ভূমি হারিয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান জানে না পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাউবোর সাবেক এক মহাপরিচালক জানান, শুধু ইছামতী নদীর ভাঙনেই বাংলাদেশ সাড়ে ৪ হাজার একর ভূমি হারিয়েছে। আর সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে হারিয়েছে কমপক্ষে ৩৫ হাজার একর ভূমি। এছাড়া অন্যান্য সীমান্ত নদীর ভাঙন তো রয়েছেই। এ ব্যপারে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, নদীভাঙনের কবলে পড়ে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৫০ হাজার একরেরও বেশি জমি হারিয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সুরমা ও কুশিয়ারা সীমান্ত নদী ভাঙন রোধে কালক্ষেপণ করা হলে অচিরেই জকিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা কয়েকটি দ্বীপে পরিণত হয়ে পড়বে। এসব দ্বীপগুলোর পরিচিতি নিয়ে দেখা দিবে নানা সমস্যা। এবারের বর্ষায় কুড়িগ্রামে পানির তোড়ে দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, শংকোষ, ফুলকুমার নদ-নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। সাতক্ষীরার দেবহাটার সীমান্ত নদী ইছামতীর ভয়াবহ ভাঙনের মুখে ইতোমধ্যেই উপজেলার ৮টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙনে কুড়িগ্রামের সুবারকাঠি, জলখানা, ফকিরের হাট, মোগলবাঘা, হেমেরকুঠি, দলদলিয়া, গোনাইঘাট, কোনাইগাছ ও কাকতৈলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখনই আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে। রাজশাহীর চরখিদিরপুর ও চরখানপুরেও ভাঙন চলছে। গত দুই বছরে খিদিরপুরে বিজিবি ক্যাম্প ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। চাঁপাইনবাবগজ্ঞে মহানন্দা ও পদ্মা সমান তালে ভাঙছে।
এসব জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। তারা বলেন, অর্থ সঙ্কটের কারণে ভাঙন প্রতিরোধের সাময়িক কাজও তাদের পক্ষে সঠিকভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় অনেক এলাকায় ঠিকাদাররা আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কথার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। এ কারণে এসব ঠিকাদাররা  ভাঙন প্রতিরোধে নতুন করে অর্থ ঢালতে নারাজ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর কবির ইনকিলাবকে জানান, সীমান্ত নদী ভাঙনে বাংলাদেশ যাতে এক ইঞ্চি ভূমিও না হারায় এ জন্য যেখানেই ভাঙন, সেখানেই তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ। এক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী।
পাউবো মহাপরিচালক বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি কাজে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কী পরিমাণ অর্থ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছেন জানতে চাইলে বলেন, বর্তমানে বরাদ্দ রয়েছে ৩শ’ কোটি টাকার মতো। দেশের মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় এই বরাদ্দ কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা হওয়া প্রয়োজন।










































 



 

Show all comments
  • Athar Ali Kawsar ২২ জুন, ২০১৬, ১১:৫২ এএম says : 1
    আরো কতো কিছু ভারতের দখলে!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতের দখলে ৫০ হাজার একর জমি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ