Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ কি আইএসের পরবর্তী ‘হটস্পট’?

প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ১৬ কোটির বেশি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। ক্রমান্বয়ে দক্ষ জনশক্তির পরিমাণ বাড়ছে এখানে। এর পাশাপাশি জমির উর্বরতাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিতে সক্ষমতা অর্জনের দিক দিয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির মাপকাঠিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১৫ কোটিই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এখানে প্রগতিশীল মানুষের সংখ্যা কম নয়। তবে সম্প্রতি এক অশুভ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে এই ভূখ-ে। গত দুই বছরের বেশি সময়ে বাংলাদেশে হত্যাকা-ের অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মানুষদের মাঝেও আলোচিত হয়েছে। গত দুই বছরে বাংলাদেশে ৪০টি আলোচিত হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনার ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএন গতকাল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যার শিরোনাম, ‘ইজ বাংলাদেশ দ্য নেক্সট আইএস হটস্পট?’ অর্থাৎ, বাংলাদেশ কি আইএসের পরবর্তী হটস্পট হতে যাচ্ছে?
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে গ্রন্থ মেলা চলাকালে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের কাছে ওই হত্যাকা-ের পর একটি গোষ্ঠীর নিজস্ব ওয়েবসাইটে এর দায় স্বীকার করে বার্তা দেওয়া হয়েছিল। আইএসের দক্ষিণ এশিয়ার শাখা বলে নিজেদের দাবি করেছিল তারা।
এরপর ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গলা কেটে বা কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান সব ধর্মের মানুষই নিহত হয়েছে একই ধরনের হামলায়। এসব হামলায় প্রাণ দিয়েছেন লেখক, প্রকাশক, ধর্মগুরু, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এই ধরনের হামলায় বিদেশি নাগরিকদেরও মৃত্যু হয়েছে। জুন মাসের শুরুতে দুর্বৃত্তের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে প্রাণ দিয়েছেন পুলিশের এক এসপির স্ত্রী।
এসব হামলার প্রায় সবকটিতেই দায় স্বীকার করে বার্তা দেওয়া হয়েছে ওই গোষ্ঠীর ওয়েবসাইটে। তবে দায় স্বীকার করে বার্তা পাওয়ার পরও দেশের জঙ্গি উত্থানের বিষয়টি বারবারই অস্বীকার করছে সরকার, পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম দিকে এসব হত্যাকা-কে বিছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও পুলিশের স্ত্রী হত্যার ঘটনার পর একে টার্গেট কিলিং বলে অভিহিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে এসব হত্যাকা-ের সঙ্গে স্থানীয় ইসলামিক গ্রুপের সংশ্লিষ্টতার কথা জানানো হয়েছে।
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, অধিকাংশ হামলাকারীই নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) সদস্য। তবে এ দাবির সপক্ষে যথার্থ তথ্য নেই পুলিশের হাতে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক সংবাদমাধ্যম সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টালের নির্বাহী পরিচালক আজাই সাহনি বলেন, আইএস বাজারে লোকজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে না। আইএস সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমে হয়তো কয়েকটি হত্যাকা-ের দায় স্বীকারের খবর আসতে পারে। এর মাধ্যমে তারা সংগঠনের বিশালতা বোঝানোর চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে চাচ্ছে। কিন্তু এসব হামলায় যদি আইএসের সংশ্লিষ্টতা থেকেই থাকে তাহলে আসল অস্ত্র কোথায়? প্রশিক্ষিত ও যুদ্ধরত সেনারা কোথায়?
সাহনি বলেন, ‘ছুরিকাঘাত ও কোপানো বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিচু স্তরের সহিংসতার নজির রয়েছে। তবে এখন এটা এখন পরিষ্কার যে, বড় কিছু একটা ঘটছে। কারণ এগুলো এখন সংগঠিতভাবে হচ্ছে এবং ভুল বা সঠিক যেভাবেই হোক আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ছোটখাটো হামলাও বাদ যাচ্ছে না।
তবে সন্ত্রাসবাদে অভিজ্ঞ এশিয়া-প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সাজ্জান গোহেল বলেন, আইএসের সঙ্গে এখন জেএমবির সংশ্লিষ্টতা দেখা যাচ্ছে। জেএমবি বিদেশি, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের হামলার লক্ষ্য বানাচ্ছে। অপরদিকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মতো স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলি ব্লগার ও নাস্তিকদের টার্গেট করছে। এবিটির সঙ্গে আল-কায়েদার ভারতীয় শাখা আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের (একিউআইএস) সংশ্লিষ্টতা দেখা যাচ্ছে।
গোহেলের কথা যদি সত্য হয়  তাহলে আইএস ও আল-কায়েদার মধ্যে লড়াইয়ের ক্ষেত্র হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ কিংবা এতোদিনে হয়ে গেছে। আর এর উদ্দেশ্যটিও পরিষ্কার। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলমান জনগোষ্ঠীর এই দেশে ঘাঁটি গাড়তে চাচ্ছে তারা। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে গোহেল বলেন, আইএস তাদের প্রচারিত ম্যাগাজিন  ‘দাবিক’-এ বলেছে তারা বাংলাদেশে অনেক উচ্চপদস্থ লোকদের ওপর হামলা চালাতে যাচ্ছে। পরের হামলাগুলো হবে আরো বড় ও সুসংহত। গোহেল অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ  সরকার পুরো বিষয়টিকেই অস্বীকার করছে।
সিএনএনের সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক বিশ্লেষক পিটার বারগেন জানিয়েছেন, ছোটখাটো সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কাছে খ্যাতির জন্য ব্রান্ডিং বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, তালেবানের সাবেক সদস্যরাও নিজেদেরকে আইএসের সদস্য বলে দাবি করে। যদিও তাদের সঙ্গে আইএসের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ঘোষণা তাদেরকে আরো বড় ও বাজেভাবে উপস্থাপনে সাহায্য করে। পবিত্র রমজান মাসে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইএস। তবে এমন আশঙ্কাও আছে যে ছুরি দিয়ে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের কুপিয়ে হত্যার আদলে অন্য সন্ত্রাসীরাও কুপিয়ে নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে। এসব হত্যা বন্ধে সরকারের কিছু পদক্ষেপ আরো হাস্যকর। যেমন মাগুরায় ইতোমধ্যেই পুলিশ গ্রামবাসীর হাতে বাঁশের লাঠিও বাশি তুলে দিয়েছে। ‘প্রতিটি গ্রাম থেকে ২০ জন বাছাই করা হবে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে  সদা সতর্ক থাকা এবং সচেতনতার বৃদ্ধির জন্য এই আইডিয়া,’ বলছিলেন  মাগুরার পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম। সরকারের এই নীতির চূড়ান্ত এবং প্রকৃত রায় হবে  কোনটা সঠিক তা নিয়ে নয়, বরং হামলা সত্যিই থামানো গেল কিনা তার ওপর। সে পর্যন্ত কুৎসিত শিরোনাম বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœ হবে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকারকে দুর্বল করতে এবং নিজেদের অবস্থান জানান দিতেই এই ধরনের টার্গেট কিলিং করছে জেএমবির সদস্যরা। অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার জনগণকে ভয় পায়, তাই এই ধরনের নোংরা খেলা খেলছে তারা। সূত্র : সিএনএন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ কি আইএসের পরবর্তী ‘হটস্পট’?
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ