Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক খুনের ‘পলাতক’ রানা সংসদে যান, কেউ ‘দেখে না’

প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক খুনের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’ ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা সংসদে হাজিরা দিয়ে গেলেও দায়িত্বশীল কেউ তাকে দেখার কথা স্বীকার করেননি।
গত সোমবার অধিবেশন কক্ষের ৪ নম্বর লবিতে রাখা হাজিরা বইয়ে সই করে চলমান অধিবেশনে যোগ না দিয়েই কয়েক মিনিটের মধ্যে লবি ছেড়ে বেরিয়ে যান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের এই সংসদ সদস্য। লবিতে কর্মরত সংসদ সচিবালয়ের একাধিক কর্মচারী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংসদের মূল গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ও লবির গার্ডরা জানান, রানা সোমবার বেলা ১১টার পর নিজস্ব গাড়ি নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেন।
তবে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় সংসদের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস) কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম ও ডেপুটি সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস (অপারেশন) সেলিম খান উভয়ে বলেছেন, তারা কিছু জানেন না। এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়াও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, আমানুর রহমান সংসদে এসে হাজিরা দেয়ার বিষয়টি আজই (মঙ্গলবার) শুনলাম। তবে তিনি অধিবেশনে যোগ দেননি। দিলে আমার  চোখে পড়ত।
টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি রানাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করে আসছে পুলিশ। খুনের মামলার আসামি রানাকে গ্রেপ্তারে গত ৬ এপ্রিল টাঙ্গাইলের আদালত পরোয়ানা জারি করে। রানা ধরা না পড়ায় গত ১৬ মে তার মালামাল বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়। পালিয়ে থাকা রানা সর্বশেষ গত বছরের ৫ জুলাই সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। ফলে অনুপস্থিতির কারণে সংসদ সদস্যপদ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে তার। সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী, সংসদ এলাকায় কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি নিতে হবে।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সদস্য ফারুক আহমেদকে। হত্যার তিনদিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।
পরে নাহার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ফারুক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। সে জন্যই তাকে হত্যা করা হয়। টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই রানা, মুক্তি, কাঁকন ও বাপ্পা এই হত্যাকা-ে জড়িত। রানাদের চাচা শামসুর রহমান খান শাহজাহান আওয়ামী লীগের নেতা ও সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ভাতিজারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন।
ফারুক হত্যাকা-ে গ্রেপ্তার খান পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আনিসুল ইসলাম রাজা এবং  মোহাম্মদ আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রানাদের চার ভাইকে জড়িয়ে বক্তব্য  দেয় বলে পুলিশ জানায়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের ওসি গোলাম মাহফিজুর রহমান অভিযোগপত্র দেন। এতে রানা ও তার অপর তিনভাইসহ মোট ১৪ জনকে আসামি করা হয়। রানা ও তার ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি এই মামলায় আগাম জামিন নিতে উচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন।
তখন তাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে তাতে স্থগিতাদেশ আসে।
আসামিদের মধ্যে রানা ও মুক্তির অপর দুই ভাই টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জাহিদুর রহমান খান কাঁকন এবং ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সানিয়াত খান বাপ্পা ইতোমধ্যে দেশ  ছেড়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। রানা ও মুক্তি দেশে থাকলেও তাদের বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য, তাদের ধরতে অভিযান চলছে, কিন্তু তাদের এখনও পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুক্তিযোদ্ধা ফারুক খুনের ‘পলাতক’ রানা সংসদে যান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ