Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ আমেজে ভাটা দর্জিপাড়ায়

প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ঈদের আমেজ ভাটা পড়েছে দর্জিপাড়ায়। সারাদেশের ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর এখন রমরমা অবস্থা। অথচ দর্জিপাড়ার চাকা সে অনুপাতে ঘুরছে না। সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, দর্জিপাড়ায় চলছে ক্রান্তিকাল। প্রতি বছর রমজানে কোয়ালিটি টেইলার্সগুলো সাধারণত পাঁচ থেকে দশ রোজার মধ্যে অর্ডার নেয়া বন্ধ করলেও এ বছর খরিদ্দারের অভাবে তারা চাঁদরাত পর্যন্ত অর্ডার নেয়ার কথা বলছেন। এ ব্যাপারে টেইলার্স মালিকরা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ ব্যয় কমাতে ঝুঁকে পড়েছে রেডিমেড পোশাকে। দর্জিপাড়ায় পোশাক তৈরিতে উচ্চ মজুরিও এর অন্যতম কারণ। এ কারণে দর্জিপাড়া থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। একই সঙ্গে দর্জি শিল্পের ওপর ভ্যাট আরোপ নিয়েও বিপাকে ব্যবসায়ীরা। কারণ এই ভ্যাট কাস্টমার দিতে চায় না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অনেকের মতে, শ্রমিকদের বোনাস, বকশিশ ও বেতন প্রদানই কষ্টকর হবে এ বছর।
বাংলাদেশ ড্রেস মেকার অ্যাসোসিয়েশনের সূত্র মতে, বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০ হাজারেরও বেশি টেইলার্স আছে। এই পেশায় আড়াই লাখ শ্রমিক প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ পোশাক তৈরি করছে। এগুলো দেশে তৈরি না করলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। অথচ সরকার তাদের কোনো ধরনের সাহায্য করছে না। তাদের মতে, লাভ না হওয়ায় অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। আবার অনেককে অচিরেই বন্ধ করতে হবে। এছাড়া রয়েছে ভ্যাটের বোঝা।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার রমনা ভবন, এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া-চাঁদনীচকসহ আশপাশ এলাকার নামকরা টেইলার্সগুলো সরেজমিন ঘুরে এবং কারিগর ও তত্ত্বাবধায়কদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দর্জিপাড়ায় একটি শার্ট তৈরিতে মজুরি নেয়া হয় কমপক্ষে ৪ শ’ টাকা। এভাবে একটি প্যান্টের মজুরি ৫০০ টাকা এবং স্যুটের মজুরি সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। তবে দোকানভেদে এই মজুরি কিছুটা বাড়তে পারে।  
রমনা ভবনের প্যারাডাইজ টেইলার্সের এমডি ও বাংলাদেশ ড্রেস মেকার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সাইফুল ইসলাম শাহীন জানান, প্রতি বছর ১০ রমজান পর্যন্ত অর্ডার নেয়া হয়। কিন্তু এ বছর ২৫ রোজা পর্যন্তও অর্ডার নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি অর্থনৈতিক মন্দা ও ১৫ শতাংশ ভ্যাটকে এ ব্যবসার মন্দার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এমনিতেই মানুষ রেডিমেড পোশাকে ঝুঁকছে। যারাও আসছেন টেইলার্সে কারিগরদের মজুরি, ভ্যাটসহ বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে অনেক পড়ে যায়। যা অনেককে রেডিমেড শার্ট-প্যান্টের দিকে ধাবিত করে। তিনি বলেন, রমনা ভবন ছাড়াও মিরপুরে তার ২টি শোরুম আছে। প্রতিটিরই একই অবস্থা। তারপরও অন্যান্য টেইলার্সের চেয়ে তার অবস্থা কিছুটা ভালো বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কারণে পোশাক তৈরিতে উচ্চ মজুরিও প্রভাব পড়েছে এ খাতে। এই বর্ধিত দামে খরিদ্দাররা দর্জিপাড়ায় এসে পোশাক বানানোর উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।
রমনা ভবনের ব্লু মুন টেইলার্সে গিয়ে দেখা গেছে, একজন খদ্দেরও নেই। প্রতিষ্ঠানের মালিক মোখলেসুর রহমান কাঞ্চন জানান, আগের বছরের চেয়ে ব্যবসা খারাপ। অর্ডার নেই, তাই বসে আছি। একই সঙ্গে মানুষের হাতে টাকা নেই। এছাড়া এ বছর চাঁদ রাত পর্যন্ত অর্ডার নেয়া হবে বলে জানান।
এম আকবর টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশ ড্রেস মেকার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম আকবর বলেন, টুকটাক চলছে। আগের অবস্থা নেই। তারপরও চালিয়ে যেতে হয়। একই সঙ্গে আমরা ভ্যাট নিতে পারি না। অথচ ভ্যাট দিতে হয়। ভ্যাট নিয়ে কর্মকর্তাদের উৎপাত সবসময়ই আছে। তিনি বলেন, আমরা ভ্যাটের আওতায় পড়ি না। কারণ এই কাপড়ের জন্য আগেই ট্যাক্স দেয়া হয়। আমাদের দাবি প্যাকেজ ভ্যাট কিন্তু তা মানা হচ্ছে না।
একই ভবনের সানলাইট, মিডল্যান্ড, আইডিয়াল, সেঞ্চুরি, ফাইভমাস্টার, ম্যানচেস্টার, ড্রেস কিং এসব নামকরা টেইলার্সেও ঘণ্টাব্যাপী ক্রেতার আনাগোনা ছিল না। সবারই একই কথা অর্ডার ভালো না। এদিকে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ঝিল টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিক্স, রেমন্ড, মকবুলস, ফপ্স, গোল্ড স্টার, সেঞ্চুরি, টপটেনসহ অধিকাংশ দোকানে একই অবস্থা বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে দর্জিপাড়ার ভাটা অবস্থা প্রভাব পড়েছে রমনা ভবনের থান কাপড়ের দোকানেও। অধিকাংশ দোকানে কাপড়ের ব্যবসাও কমে গেছে। নিউ ফেন্সি কর্নার, চয়নিকা, সিকদার, শুভ বিতান, সুরমা, অপূর্ব ফেব্র্্িরক্সসহ অধিকাংশ দোকান ক্রেতাশূন্য দেখা গেছে।
নিউ ফেন্সি কর্নারের স্বত্বাধিকারী সরদার পলাশ জানান, দোকানে কাস্টমার নেই। এ অবস্থা বজায় থাকলে তাদের ব্যবসা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তিনি জানান, হরতাল থাকলেও বেচা-বিক্রি ভালোই ছিল। এবার তার অর্ধেকও বিক্রি নেই। মানুষের অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। যার প্রভাব পড়েছে এই বাজারেও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ আমেজে ভাটা দর্জিপাড়ায়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ