বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলাম এমন একটি ধর্ম যার আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িদিকগুলোর মধ্যে অত্যন্ত চমৎকার সামঞ্জস্য বিদ্যমান। মানবতার উন্নয়ন, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় সংহতি এবং নিরাপত্তার জন্য নৈতিকতাবোধ ও আধ্যাত্মিক সাধনার সঙ্গে সঙ্গে পার্থিব বিষয়গুলোর প্রতি ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।
জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনের নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করে একটি নিরাপদ প্রগতিশীল জাতিগঠনে ইসলামের এ উদারতার নীতির নজির সত্যিই বিরল। নানা প্রকারের কুসংস্কার, জড়তা, নৈতিক দুর্বলতা ও গর্হিত কার্যকলাপ পরিত্যাগ করে ইসলামের উদার নীতি ও মহান শিক্ষা অনুসারে সমাজকে কলুষমুক্ত, সুসংহত ও সমৃদ্ধিশালী করে তোলার জন্য আল্লাহর কোরআন ও তার রসূল (সা.) এর হাদীসে বহু উপায়-তদবীরের কথা উল্লেখিত হয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষার কথাই ধরা যাক। মুসলমানদের কোনো রাষ্ট্রের উপর বহিঃশক্তি আক্রমণ করে তা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করলে তা পূর্ণ শক্তিবলে ব্যর্থ করে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পবিত্র কোরআন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকার নির্দেশ দান করেছে।
সুরা হাদীদে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন : (হে মোমেনগণ) ‘তোমরা এমনি শক্তি সৃষ্টি কর যে তোমাদের আস্তাবলগুলোতে ঘোড়া এরূপভাবে বেঁধে রাখবে যেন আল্লাহর দুশমন ও তোমাদের দুশমনগণ তোমাদের নাম শুনে বিচলিত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ- শত্রুদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তোমরা বৈষয়িক শক্তি সঞ্চয় কর’।
এই আয়াত হতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আত্মরক্ষা ও শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য মুসলমানদের সব সময় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। আদিকালে যেহেতু যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ঘোড়ার প্রচলনই ছিল বেশি, তাই কোরআনে ঘোড়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবার অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘আমি লৌহ সৃষ্টি করেছি, এতে প্রভ‚ত লাভও আছে আবার বহু অকল্যাণও এর দ্বারা সাধিত হয়।’
সূক্ষèভাবে বিচার করলে দেখা যাবে যে, আল্লাহর এই উক্তিতে লৌহ সৃষ্টির আসল উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। বর্তমান যুগে এর দ্বারা মানুষ প্রত্যক্ষভাবে একদিকে যেমন নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে,অন্যদিকে এর অপব্যবহাওে নানারকমের ধ্বংসাত্মক কার্যও সাধিত হচ্ছে। কোরআনের এই চিরন্তন বাণী মুসলমানদের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের উজ্জ্বল নিদর্শন।
ইসলামের প্রথম যুগের ইতিহাস হতে জানা যায় যে, মুসলমান শত্রুর আক্রমণ হতে আত্মরক্ষা কল্পে যাবতীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করা অন্যতম দায়িত্ব মনে করতেন। তাই সে যুগে সামরিক শিক্ষা ও সামরিক শক্তি অর্জনের জন্য কোনো প্রকারের ত্রুটি করা হত না।
হিজরতের পর রসূলুল্লাহ (সা.) মদীনার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। আর যখনই যুদ্ধের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, সে জন্য সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁকে অবস্থা-অনুযায়ী ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হয়েছে। ‘খন্দক’ এর যুদ্ধে অবলম্বিত রণকৌশলের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়।
হযরত বারা (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.) কে ‘খন্দক’ এর যুদ্ধে তাঁর শরীর হতে মাটি পরিষ্কার করিতে দেখেছি। খননকার্যে লিপ্ত থাকায় তাঁর চোখে-মুখে ধুলাবালি লেগে গিয়েছিল। আমি তাঁকে উৎসাহ ও প্রেরণাদায়ক কবিতা পাঠ করতেও দেখেছি। তিনি মাটি উঠিয়ে উঠিয়ে বাইরে নিক্ষেপ করছিলেন। এর ফলে তাঁর শরীর কাদাযুক্ত হয়ে গিয়েছিল।’
এই ঘটনা হতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আত্মরক্ষার জন্য যেখানে অবস্থা অনুযায়ী কোনো উত্তম ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হয়,সেখানে সৈন্যদের মনোবল অক্ষুন্ন ও চাঙ্গা রাখার জন্য উৎসাহ ও প্রেরণাদায়ক কবিতা বা সঙ্গীত পাঠ করা যেতে পারে।
হযরত ইমরান ইবনে হোসেন বর্ণনা করেন, যখন ইসলামের মোজাহেদগণের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে বিধর্মীদের মোকাবেলা হত তখন তারা সর্বপ্রথম দুশমনের উপর আক্রমণ করতেন। অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলে বীরত্বের সাথে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। হজরত আবু আইয়্যুব আনসারী (রা.) বর্ণনা করেন যে, মুসলমান ধৈর্য্য ও দৃঢ়তার সাথে দুশমনের মোকাবেলা করে সত্যের জন্য যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছে, সে কবরের বিপদ-পরীক্ষা হতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করল। হযরত উসমান (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি হযরতকে বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহর পথে একদিন মুসলিম সীমান্ত রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকা অন্যান্য নফল এবাদতে দীর্ঘ সময় লিপ্ত থাকা অপেক্ষা উত্তম। এ সকল হাদীস হতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা সহজেই অনুমান করা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।