বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রচলিত কায়েমী স্বার্থবাদী শ্রেণি সাম্রাজ্যবাদ, আঞ্চলিক সম্প্রসারণবাদ, ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ও অগ্নিউপাসক, ধর্ম ও সংস্কৃতি এবং উশৃঙ্খল বস্তু ও ভোগবাদী সমাজ ইত্যাদি সবকিছু মোকাবেলা করে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত নিষ্পেষিত মানবতাকে মুক্তির বাণী শোনাতে এসে তাকে দুঃখ, কষ্ট, সংগ্রাম, সাধনা, যুদ্ধ ও সংঘাতের একটি কঠিন জীবন পার করতে হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি উত্তম আচরণ, পরম ধৈর্য, ক্ষমা ও উদারতার মধ্য দিয়ে তার বৈরী পরিবেশকে অতুলনীয় অনুক‚ল পরিবেশে রূপান্তরিত করতে পেরেছিলেন।
কিন্তু তাঁর বাণীটি যেহেতু কেবল আরব ভূমির জন্য নয়, কেবল তাঁর গোত্র ও অঞ্চলের জন্য নয়, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়, অতএব তাকে বিশে^র বড় বড় সব শক্তির প্রতি এ বার্তা পৌঁছে দিতে হয়েছে। তিনি খ্রিষ্টজগতের প্রধান কেন্দ্রগুলোতে, পারস্য সম্রাটের কাছে, কাছ ও দূরের বিভিন্ন আরব-আফ্রিকান শাসকদের কাছে কূটনৈতিক পত্র প্রেরণ করেন। এ পত্র ছিল মদীনারাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বিকৃতির পত্র।
আল্লাহর রাসূল হিসাবে বিশ্বমানবতার নতুন বিশ্বব্যবস্থার নতুন বার্তা মেনে নেয়ার আহ্বানের পত্র। রাসূলের নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব স্বীকার করে আল্লাহর বান্দাদের মানবাধিকার প্রদানের তাগাদাপত্র। মহানবী কল্যাণরাষ্ট্রের সাথে নিরাপত্তা চুক্তির পত্র। কোনোরূপ সাড়া না দিলে মানুষের মৌলিক অধিকার ও মুক্তির জন্য লড়াইয়ের জন্য তৈরি থাকার পত্র। এ বিশাল বিপ্লবের গোড়াপত্তন করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পার্থিব জীবনের দিনগুলো পূর্ণ করেন।
তাঁর ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদীন ও পরবর্তী নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরাধ্য কাজ দুর্বার গতিতে অগ্রসর হতে থাকে। মাত্র কয়েক দশকে তখনকার পৃথিবীর প্রায় সবটুকুই ইসলামের ন্যায়বিচার ও সুশাসনের আওতায় এসে ধন্য হয়। বিশ্বব্যাপী বিজিত দেশ ও মানুষ এর আগে কখনো এমন তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিয়েছে বলে ইতিহাসে পাওয়া যায় না। মজলুম মানবতা প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ কেবল ইসলামের হাতেই লাভ করেছিল।
পারস্য বিজয়ের সময় সাহাবীদের প্রতিনিধি পারস্য সেনাপতির কাছে গেলে সম্রাট সাহাবীকে প্রশ্ন করেছিল, তোমরা মরুবাসী ভুখানাঙা লোকেরা কেন আমাদের দেশ দখলের জন্য ছুটে এসেছ? কেন আমার সাম্রাজ্য অবরোধ করে রেখেছ?
সাহাবী জবাবে বলেছিলেন, আমরা আসিনি, আল্লাহ আমাদের পাঠিয়েছেন। উদ্দেশ্য তিনটি :
এক. আমরা আল্লাহর বান্দাদেরকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে নিতে চাই।
দুই. নানা ধর্ম ও মতবাদের জুলুম ও শোষণ থেকে তাদের মুক্ত করে ইসলামের ন্যায়বিচার ও সুশাসনের পথ দেখাতে চাই।
তিন. তাদের পার্থিব জীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে এক খোদার সহজ ও শান্তিময় দিকগুলোর সাথে পরিচিত করতে চাই।
পাঠক লক্ষ করলে দেখবেন, একজন অতি সাধারণ সাহাবী এখানে কোরআন-সুন্নাহর উদ্ধৃতি বা নেতৃবর্গের দোহাই উল্লেখ না করে নিজ উপলব্ধি থেকে বিশ^মানবতার মুক্তির জন্য প্রেরিত মহান ইসলামের বিপ্লবী বার্তাটি কত সহজ-সরল ভাষায় তার নিজস্ব ভাষ্যে পারস্য সম্রাটকে শোনালেন।
এখানে আকিদার কথা রয়েছে। শিরকের বিরুদ্ধে তাওহীদের জয়ধ্বনি রয়েছে। ধর্ম, মতবাদ ও সংস্কৃতির শোষণের প্রতি ইশারা রয়েছে আর এসব থেকে মুক্ত হয়ে ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও সুশাসন লাভের নিশ্চয়তার আহ্বান রয়েছে। আর রয়েছে অর্থনৈতিক ও আধ্যাত্মিক মুক্তির বার্তা। পার্থিব জীবনের সকল মানবিক দুর্বলতা, সংকীর্ণতা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, দম্ভ-অহংকার, ঘৃণা, শত্রুতা, সাম্প্রদায়িকতা, কৃপণতা প্রভৃতি দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত উন্নত আধ্যাত্মিক অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে এ জগতের আবিলতা থেকে নিষ্কৃতি লাভের মাধ্যমে জীবনের প্রশস্ত ও উদার অঙ্গনে বিচরণের যোগ্যতা অর্জন, যা মানব জীবনের চরম স্বার্থকতার মহান উপলব্ধি। পাঠক আজকের বিশ^মানবতার জন্যও কি এ আহ্বান পূর্ণত ও নিশ্চিতভাবে অপরিহার্য নয়?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।