পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মন্ত্রণালয়ের নীরব সমর্থন
ফারুক হোসাইন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী রমজানের প্রথম দিন থেকেই সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কথা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এ রকম নির্দেশনা রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরও রমজান মাসে খোলা থাকছে স্কুল। অতিরিক্ত ক্লাস, বিশেষ ক্লাস ও কোচিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে শত কোটি টাকা। অন্যান্য শ্রেণির জন্য বাধ্যবাধকতা না থাকলেও পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবেই কোচিং বা বিশেষ ক্লাসে অংশ নিতে হচ্ছে। এজন্য এই এক মাসে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পরিশোধ করতে হচ্ছে ৮০০ থেকে দু হাজার টাকা পর্যন্ত। শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক কোচিং নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাণিজ্য করলেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে খোদ মন্ত্রণালয়ই। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নীতিমালা লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রমজানের প্রথম দিন থেকে স্কুল বন্ধ থাকার কথা থাকলেও আজ অবধি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। চলছে বিশেষ ক্লাস, কোচিংসহ নানা নামে বাণিজ্যিক এই কার্যক্রম। এর ফলে একদিকে যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশেই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে রমজানের মধ্যে প্রচ- রোদে এবং গরমে এই যানজটে অসহায় হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাশপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও উপস্থিত থাকতে হচ্ছে বাধ্যতামূলকভাবে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারী শিক্ষকদের। দিনভর ক্লাস, পরীক্ষা, কোচিংয়ে ব্যস্ত থাকার পর বাড়ি ফিরেই বসতে হচ্ছে ইফতারসহ অন্যান্য রান্নার কাজে। রাজধানীর আইডিয়াল ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সারাদিন স্কুলে কাজ করার পর আবার বাসায় গিয়ে কাজ করতে হয়ে। রমজান মাসে শান্তিমত একটু ইবাদত করবো তার আর সুযোগ হচ্ছে না। তারা অভিযোগ করে বলেন, স্কুল পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান শিক্ষকদের চাপে এবং চাকরি হারানোর ভয়ে তারা সব মুখ বুজে সহ্য করছেন। প্রতিবাদ করেন না কেন জানতে চাইলে তারা বলেন, মন্ত্রণালয় তো কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই নেয় না, উল্টো প্রতিবাদ করে বিপদে পড়তে হয় শিক্ষকদের। তারা আরও বলেন, মন্ত্রণালয়কে ম্যানেজ করেই প্রতিষ্ঠানগুলো এসব করছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা’ অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার কোনো শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। এমনকি শিক্ষকেরা বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারেও পড়াতে পারবেন না। তবে দিনে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। আর সরকার-নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে (সব বিষয় মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা) প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস করানো যাবে। কিন্তু কাগুজে এই নীতিমালা কেউ মানছেন না।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরেই ২৬টি রুম ২৬ জন শিক্ষককে বরাদ্দ দিয়ে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোচিং কার্যক্রম চলছে। ওই স্কুলের শিক্ষার্থীর কয়েকজন অভিভাবক বলেন, স্কুলে ক্লাস হয় না। এ জন্য বাধ্য হয়েই সন্তানকে কোচিং করাচ্ছেন। প্রতিটি বিষয়ের জন্য মাসে এক হাজার টাকা দিতে হয়। আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের মতিঝিল ছাড়াও অন্যান্য শাখাগুলোতেও একইভাবে চলছে কোচিং ও বিশেষ ক্লাস বাণিজ্য। মতিঝিলসহ অন্যান্য শাখার ৫৬টি রুমে শিক্ষকদের রুম বরাদ্দ দিয়ে এই বাণিজ্য চলছে। কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনেই শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজের ভেতরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন। একই অবস্থা খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, শামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ, ডেমরার মোল্লা হাবিবুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজ, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ, মিরপুরের মনিপুর স্কুল এন্ড কলেজ, উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজসহ রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের স্কুলগুলোর চিত্র। স্কুলভেদে পঞ্চম শ্রেণির কোচিং বা বিশেষ ক্লাসের নামে রমজান মাসে নেয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা ফি। অষ্টম শ্রেণির জন্য এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নেয়া হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার পৃথকভাবে ইংরেজি ও গণিত ১ হাজার ২০০ টাকা ও ১ হাজার ৬০০ দিতে হয়। শিক্ষার্থীরা পড়তে না চাইলেও শিক্ষকেরা তাদের কাছে পড়তে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা। এছাড়া অলিতে গলিতেও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা কোচিংয়ের ব্যবসা খুলে বসেছেন। এসব কোচিংয়েও পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে গুণতে হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে। সরকারের নীতিমালা লঙ্ঘন করে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও পড়াচ্ছেন শিক্ষকেরা। শুধু তা-ই নয়, যেখানে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়ানোর সুযোগ রয়েছে, সেখানে কোনো কোনো শিক্ষক এক ব্যাচেই ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন। কোনো খ্যাতিমান শিক্ষক স্কুলের মতো করেই এখানে ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছেন। স্কুল খোলা রেখে ক্লাস ও কোচিংয়ের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) মো. জাকির হোসেন ভূইঁয়া বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে ক্লাস, পরীক্ষা কোচিং নিচ্ছে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। ক্লাস বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সোহরাব হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে চাননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।