Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মূল্য কারসাজিতে ভোক্তারা জিম্মি

প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামে অভিযানেও থামছে না অতিরিক্ত মুনাফা আদায়
রফিকুল ইসলাম সেলিম : একটি লেহেঙ্গাতেই লাভ ১৯ হাজার ৬শ’ টাকা। ১৫ হাজার ৯শ’ টাকা ক্রয়মূল্যের লেহেঙ্গা বিক্রি করা হচ্ছে ৩৫ হাজার ৫শ’ টাকায়। একটি ফ্রক বিক্রিতে লাভ করা হচ্ছে ৬ হাজার ৪৯০ টাকা। ৫৪ টাকার চিনি ৭০ টাকা, ৫৩ টাকার ছোলা ৩২ থেকে ৩৭ টাকা লাভে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা। ৩৬ টাকার মটর ডাল ১৪ টাকা লাভে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। গোশত আর মাছের বাজারে চলছে নৈরাজ্য।
চট্টগ্রামে ঈদ বাজার থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্য সবকিছুতেই অযৌক্তিক মুনাফা। ক্রেতা-ভোক্তারা জিম্মি হয়ে পড়েছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রীতিমত মূল্য কারসাজির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাঁড়াশি অভিযানেও এসব অতি মুনাফাখোর চক্রের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। জেল-জরিমানা আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের হুমকি-ধমকির মধ্যেও থেমে নেই ‘মূল্য সন্ত্রাস’।
চলছে চোর-পুলিশ খেলা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হতেই পাল্টে যায় বাজারের চিত্র। ঠিক দামে বিক্রি হয় সবকিছু। আদালত বাজার ছেড়ে যাওয়ার পর সেই পুরোনো চিত্র, গলাকাটা দাম। ওজনে কম দেওয়া, পণ্যে ভেজালের মিশ্রণ সবকিছু চলে সমান তালে। বছরজুড়েই ভেজালবিরোধী অভিযান চলছে। তার পরও থেমে নেই ভেজালকারীদের অপতৎপরতা। ইফতারিতেও ভেজাল মেশানো হচ্ছে।
রোজা আগেই ব্যবসায়ীদের সাথে সভা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মূল্য কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সভায় হাজির হয়ে ব্যবসায়ী নেতারাও প্রকৃত দামে জিনিসপত্র বিক্রি করার অঙ্গীকার করেন। রোজার আগেই শুরু হয় ভেজালবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান। জেলা প্রশাসনের দশটি টিম মাঠে নামে। বাজারে নেমে নৈরাজ্যকর চিত্র দেখতে পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। প্রশাসনের সাথে বৈঠকে বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখার যে অঙ্গীকার করেন ব্যবসায়ীরা বাজারে গিয়ে তার উল্টো চিত্র চোখে পড়ে।
দ্বিতীয় রমজানে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়ে মীর গ্রুপকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আটক করা হয় ওই প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তাকে। সিলগালা করে দেওয়ায় হয় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তারা ৪০ টাকা কেজিতে চিনি কিনে প্রতিকেজিতে ২০ টাকা লাভে ৬০ টাকায় বিক্রি করছিল। একই অভিযানে কম দামে ছোলা কিনে বেশি দামে বিক্রির দায়ে মাসুদ ব্রাদার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানের পরদিন সঠিক দামে পণ্য বিক্রি হলেও কিছুদিন পর আগের দামে শুরু হয় বেচা-কেনা।
প্রায় প্রতিটি বাজারে পণ্যে ভেজালের পাশাপাশি ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ওজনে কম দেওয়া পণ্যে ভেজাল মিশ্রণের দায়ে জেল-জরিমানাও হচ্ছে। এর পরও থামছে না ভেজালের কারবার। ভেজালবিরোধী অভিযানে জরিমানা করা হয়নি এমন কোনো ভোগ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে না। চেইনশপগুলোতেও মূল্যকারসাজি চলছে। একদিনের অভিযানে নগরীর ৫টি অভিজাত চেইনশপকে এক লাখ টাকা করে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
নগরীর হোটেলগুলোতে অভিযান চালিয়ে পচা-বাসি খাবার বিক্রি ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ইফতারি তৈরীর দায়ে প্রতিদিনই একাধিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হচ্ছে। আজ জরিমানা দিয়ে কাল আবারও একই পরিবেশে তৈরী করছে ইফতার সামগ্রী। এর ফলে অভিযানে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব কিছুটা বাড়লেও ভোক্তারা কোনো সুফল পাচ্ছে না।
ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি এবার দেশে প্রথমবারের মতো ঈদবাজারে হানা দিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রথম দিনেই আদালত বাজারে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি দেখতে পান। অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের এই প্রবণতাকে ব্যবসা নয়, রীতিমত ডাকাতি হিসাবে মন্তব্য করেন। অভিযানের শুরুতে নগরীর নগরীর মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, সানমার শপিং কমপ্লেক্সের প্রতিটি দোকানে ভয়াবহ মূল্য কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যায়।
মিমি সুপার মার্কেটের ‘ইয়াং লেডি’ দোকানে গিয়ে দেখা যার মেয়েদের ফ্লোর টাচ নামক একটি ড্রেসের দাম রাখা হচ্ছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। রশিদে দেখা যায় তার এ কাপড়ের প্রকৃত ক্রয়মূল্য ৬ হাজার ৯৯৫ টাকা।
এভাবে একই মার্কেটের আঁচল, আকর্ষণ, আফমি প্লাজার সেলিব্রেশন্স, সুরুচি কালেকশন, পারফিউম ওয়ার্ল্ড, লন্ডন লুক এবং সানমারের নিউ বাসাবিসহ প্রায় ২০টি দোকানে গিয়ে দামের এমন ব্যাপক অসামঞ্জস্য দেখা যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই দিন দোকান মালিকদের সতর্ক করে। ওই ধারাবাহিকতায় রোববার নগরীর বিভিন্ন শপিং মল ও বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে অতিরিক্ত মুনাফা করায় দু’টি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গতকালও অভিযান চালিয়ে দু’টি কাপড়ের দোকানকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মূল্য কারসাজিতে ভোক্তারা জিম্মি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ