পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আদালতের ওপর নির্ভর করে এবং ঘরে বসে থাকলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কখনোই হবে না। প্রতিদিন বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েও তার মুক্তি হবে না। তাকে মুক্ত করতে হলে রাজপথের আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। খালেদা জিয়া যে আন্দোলন করতে শিখিয়েছেন সেই আন্দোলন করুন তাহলেই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন, দেশের মানুষ মুক্তি পাবে। আন্দোলন করলেও জেলে যেতে হবে, না করলেও যেতে হবে। আন্দোলন না করলে ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্পদ রক্ষা করা যাবে না। গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যায় রাজধানীর নাট্যমঞ্চে ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে বিএনপিকে নাট্যমঞ্চে আলোচনা সভার জন্য অনুমতি দিয়েছিলো পুলিশ। তাই জুমার নামাজের পর থেকেই সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশনের অনুমতি নেই জানিয়ে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্তও নাট্যমঞ্চের অডিটোরিয়ামে তালা দিয়ে রাখা হয়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা মঞ্চের বাইরেই অবস্থান নিয়ে আলোচনা সভা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও গ্রহণ করতে থাকেন। পরে সাড়ে তিনটার সময় অডিটোরিয়ামের তালা খুলে দেয়া হলে সেখানেই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে দুপুরের পর থেকেই রাজধানীতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হলেও সেই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বিএনপির আলোচনা সভায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হন। আলোচনাস্থল অডিটোরিয়াম পরিপূর্ণ হয়ে বাইরের খোলা অংশেও অবস্থান নেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আন্দোলন করলেও জেল হবে, না করলেও হবে। জেলে যেতে হয় যাই, তাহলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি। তাকে জেলে রেখে আমরা প্রতিদিন বক্তৃতা দেই, বক্তৃতা দিলে তিনি মুক্তি পাবেন না। মুক্ত করতে হলে খালেদা জিয়া যে আন্দোলন করতে শিখিয়েছেন সেই আন্দোলন তার জন্য করুন। দেশের মানুষ মুক্তি পাবে, খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে। আদালত নয়, রাজপথেই খালেদা জিয়ার মুক্তির ফয়সালা হবে। সরকার পতন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন যে নামেই করেন দু’টোই একই।
তিনি বলেন, মামলা-মোকদ্দমা আর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করলেও রক্ষা করা যাবে না। যারা যেতে চায় তারা যাক। গিয়ে যখন আসে তখন আমরা ফুলের মালা দিয়ে মাথায় নিয়ে নাচি। যাদের ধৈর্য্যরে বাধ কেটে গেছে তারা চলে যাক, তাদের নিয়ে আমাদের সময় কাটানোর দরকার নাই। কিন্তু আমারা যারা আছি তাদের মধ্যে কোন মোনাফেকি মনোভাব আছে কিনা? তাদের মধ্যে কোন ২ নাম্বরি চিন্তা আছে কিনা? আমরা সঠিকভাবে রাজপথে নামতে চাই কিনা তা ভাবতে হবে।
নেতাকর্মীরা দায়িত্ব নিলে খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, মামলা থাকবে, স্বৈরতন্ত্রের নিয়ম এগুলো দিয়ে মানুষকে চাপা দিয়ে রাখা। আমরা যদি এই চাপে নুহ্য হয়ে যাই তাহলে স্বৈরতন্ত্র আরও বেশি ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হবে। তারেক রহমান বিদেশে, খালেদা জিয়া জেলে, আরও হাজার হাজার নেতাকর্মী আছি, আমাদের কি কোন দায়িত্ব নাই? সেই দায়িত্ব যদি পালন করি তারেক রহমান দেশে আসবেন, খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন।
তিনি বলেন, আমরা কেন আদালতের দারস্থ হবো? রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের মুক্তি কখনও আদালত নির্ভর হওয়া সম্মানজনক নয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমান ৬৯’র গণঅভূত্থানের মাধ্যমে মুক্ত হয়েছিলেন। আমাদের একজন সহকর্মীর ৫ বছর জেল হলো, তিনি ৭ দিনের মাথায় হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট হয়ে জামিন পেলেন, কিন্তু খালেদা জিয়ার জেল হওয়ার পর রায়ের কপি, নথি তলব দিয়ে সময় পার হয়েছে। আদালত আদালতের মতো চলে না, চলে শেখ হাসিনার নির্দেশে। সেই আদালতের ওপর নির্ভর করে তার মুক্তির কথা কেন ভাববো?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিচ্ছে, তারা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, সুশাসন থেকে বঞ্চিত করছে। নিজেদের দুর্নীতি এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেটাকে ঢাকার জন্য নিজেদের চুঁনোপুটিদের ধরতে হচ্ছে। এই চুনোপুঁটি ধরে এবং ক্যাসিনো গল্প সাজিয়ে মূল দুর্নীতি থেকে আপনারা (সরকার) জনগণের দৃষ্টিকে আড়াল করতে পারবেন না।
সরকার পতনে সকলকে রাস্তায় নামার তাগিদ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এরা একদম ফ্যাসিস্ট একটা সরকার, একনায়ক একটা সরকার। এর থেকে মুক্তি পেতে হবে-এর কোনো বিকল্প নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে, আমাদের অধিকারগুলোকে ছিনিয়ে আনতে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে- এর কোনো বিকল্প নাই।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারকে এককভাবে পরাজিত করা যায় না। সকল শক্তিগুলো একজায়গায় আনতে হয়। সকল দেশপ্রেমিক শক্তি, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা এই একনায়ক ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো। তার জন্য দরকার ইস্পাতকঠিন ঐক্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা সরকারে আছেন, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন নাই, জোর করে ক্ষমতায় আছেন তারা বলেন, ৭ নভেম্বর আমরা মানি না। আমাদের সিনিয়র নেতারা বলেছেন, মানবেন কেনো? আপনারা তো এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেনা বলেই মানেন না।
প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছেন তার হিসাব কোথায়, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছেন তার হিসাব কোথায়? শেয়ার মার্কেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছেন তার হিসাব কোথায়? তাদের হিসাব মাফ করার জন্যে আপনাদের কেউ মন্ত্রী, কেউ উপদেষ্টা, কেউ আপনাদের নিজেদের আপনজন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৭ নভেম্বর যে অবস্থা দেশের হয়েছিলো আজকেও আমাদের ঠিক একই ভাবে আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসন, গায়ের জোরের শাসনের কারণে বাংলাদেশে আজকে ঠিক একই অবস্থা বিরাজ করছে। আজকে বাংলাদেশ একটি স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সরকারের রোল মডেল হয়েছে, দুর্নীতির রোল মডেল হয়েছে, অত্যাচার-অনাচার-চাঁদাবাজীর রোল মডেল হয়েছে, ক্যাসিনোর রোল মডেল হয়েছে। এই দেশে উপর থেকে সমাজের সর্বস্তরে পঁচন লেগেছে এই অনির্বাচিত সরকার কায়েম করে ক্ষমতা চালানোর কারণে। তাই আমাদেরকে এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। রক্ষা করতে হলে গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা ছাড়া গণতন্ত্র আসবে না, এই সরকারের পতন হবে না। আপনাদের সাথে আমিও বিশ্বাস করি, রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটাতে হবে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টর মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা ব্যর্থ হয়েছি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে। আদালতের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তার জামিনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় নাই। হয়ত জামিন হবে না। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি রাজপথের আন্দোলনে আসতে হবে। বাড়িতে বসে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। আন্দোলনের সময় এসে গেছে এখন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আন্দোলনের ডাক আসলে রাজপথে আপনাদের নামতে হবে, আমরা যারা সিনিয়র আছি আমরা আপনাদের পাশেই থাকবো। আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারের পরিবর্তন করতে হবে।
যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল বলেন, দেশের ৯৫ ভাগ জনগণ শেখ হাসিনাকে ঘৃণা করে। কিন্তু এটার প্রতিক্রিয়া রাজপথে দেখা যায় না। কারণ কি, অনেকে বিএনপিকে দোষারোপ করেন। অনেকে বলেন বিএনপিকে রাজপথে দেখি না, বিএনপিকে দিয়ে কিছু হবে না, বিএনপি কেন সরকারকে হটাতে পারে না, বিএনপি কিছু করে না। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৭৪ বছর বয়সে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করে যাচ্ছেন। তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন, দেশপ্রেমিক একজন মানুষের মাতৃভূমি ছেড়ে বিদেশে অবস্থান করা কতটা অস্বাভাবিক যতটা একটি মাছকে পানি থেকে তুলে ডাঙায় রাখলে দেখা যায়। আমাদের নেতাকর্মীরা এমন কেউ নেই যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। আমাদের প্রতিপক্ষ যদি শুধু আওয়ামী লীগ হতো, তাহলে জনগণকে বলতাম নাকে তেল দিয়ে ঘুমান সকালে সব ফকফকা হয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- আমাদের প্রতিপক্ষ তো আওয়ামী লীগ নয়, আওয়ামী লীগ চেপে বসেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের কাধে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তিদের বলছে আমরা থাকলে তোমরা আছো, না থাকলে তোমরা নাই। সুতরাং বিএনপির ওপর নির্যাতন করেই আমাদের সবাইকে টিকে থাকতে হবে। এর সাথে আধিপত্যবাদী শক্তি সমস্ত অবৈধ চুক্তি করে আজকে এই ক্ষমতাসীনদের সাহায্য করে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে বিএনপিকে একা লড়তে হচ্ছে। আমরা চাই জনগণ আমাদের পাশে এসে দাঁড়াক। জনগণ আসবে।
সোহেল বলেন, দেশে যা হচ্ছে তা কি শুধু বিএনপির ওপর হচ্ছে? শুধু বিএনপি না, সারাদেশের মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে। আবরার ফাহাদ, নুসরাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা হয়েছে তারা কেউ বিএনপি করতো না, তাদেরকে এই সরকারের হাতে নির্যাতিত হতে হয়েছে। তাই সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।
যারা বিএনপি ছেড়ে যাচ্ছেন তাদের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, যারা বিএনপিতে ব্যবসা করতে এসেছিলেন তারা ব্যবসা করতে না পারলে চলে যাবেন এটাই স্বাভাবিক, চলে যান। নির্যাতন সহ্য করতে না পারলে চলে যান। সমস্যা নাই। আমরা কিছুই বলবো না। কিন্তু সরকারকে খুশি করার জন্য বিএনপিকে নিয়ে উল্টা পাল্টা বলবেন তা হবে না। আমরা তা সহ্য করবো না। আপনারা কি ছিলেন আমরা তা খুব ভালো করে জানি। আঙুল ফুলে কিভাবে কলাগাছ হয়েছেন তাও জানি। এখন বিএনপি খারাপ হয়ে গেছে। চুপচাপ ভালো লোকের মতো চলে যান, কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু যাবার সময় উল্টা-পাল্টা কথা বললে আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা নিতে পারবো না।
প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা মহানগর উত্তরের বজলুল বাসিত আনজু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান।
উপস্থিত ছিলেন- আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, বিলকিস জাহান শিরিন, শিরিন সুলতানা, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, রেহানা আখতার রানু, আবদুস সালাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মোরতাজুল করীম বাদরু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কাজী আবুল বাশার, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুর রহীমসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।