Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫৪ বছর পর বরাদ্দকৃত ক্যাথল্যাব মেশিন গেছে অন্য হাসপাতালে!

প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
মো: শামসুল আলম খান : হাসপাতালের বয়স ৫৪ বছর। এ দীর্ঘ পথচলায় ৫শ’ শয্যার হাসপাতাল উন্নীত হয়েছে ৮শ’ শয্যায়। নির্মিত হয়েছে আধুনিক একটি ভবন। অথচ হৃদরোগ বিভাগে জুটেনি রোগীদের এনজিওগ্রাম ও হার্টে রিং পড়ানোর মেশিন ক্যাথল্যাব।
দেশের পুরাতন ৭টি হাসপাতালেই হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য এ মেশিন থাকলেও শুধুমাত্র নেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে! ফলে প্রতি বছরই হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়লেও এখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের কপালে জুটছে না হৃদরোগের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা।
বিশেষ করে ক্যাথল্যাবের অভাবে জটিল রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্য কোন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বছরের পর বছর এমন দৈন্যতা নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পথ চলছে অধুনালুপ্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় ৪ কোটি মানুষের চিকিৎসা সেবার প্রধান ভরসা এ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ।
সম্প্রতি সরেজমিনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন সব তথ্য।
জানা যায়, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শুধু ময়মনসিংহ জেলা নয়, ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৬ জেলার মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল হাসপাতাল। সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাজীপুরের একাংশের লোকও প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আসেন।
এ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে শয্যা সঙ্কট প্রকট না হলেও সবচেয়ে বড় সমস্যা একটি ক্যাথল্যাব মেশিনও না থাকা। অথচ এ মেশিনের মাধ্যমে হার্টে এনজিওগ্রাম করে রক্তনালীতে কোন ব্লক থাকলে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে রিং পড়িয়ে ছুটিয়ে দেয়া সম্ভব। এতে করে মরণাপন্ন রোগীরও জীবন বেঁচে যায়, জানান সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক তারিকুল ইসলাম খান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০ শয্যার হৃদরোগ বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। আর প্রতি মাসে এ সংখ্যা ১২শ’ থেকে ১৩শ’। অন্তত ক্যাথল্যাবের অভাবে এখানে প্রতি মাসেই অনেক রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয় এবং অনেক রোগীই প্রকৃত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অথচ এ বিভাগে রয়েছে পর্যাপ্ত চিকিৎসক।
কিন্তু ক্যাথল্যাবের মতো অত্যাধুনিক দামি মেশিন থাকলে অনেক রোগীকে আর ঢাকায় পাঠানোর প্রয়োজন নেই। তাৎক্ষণিক জটিলতা এবং আকস্মিক মৃত্যু থেকে বাঁচানো সম্ভব মনে করেন সংশ্লিষ্ট হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সাইফুল বারী।
সূত্র জানায়, গত ৩ মাসে হৃদরোগ বিভাগে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকির, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: তুষারের ভাইসহ অনেক ভিআইপি রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ক্যাথল্যাব থাকলে তাদের উন্নত চিকিৎসাসহ মৃত্যুর দূয়ার থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা যেতো, বলেন ওই বিভাগীয় প্রধান।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা: এম.এ.আজিজ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক দীন মোহাম্মদসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু এরপরেও এ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ৫৪ বছরের ভাগ্যে শিঁকেয় ছিড়েনি।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিস্ময়কর ঘটনাও ঘটেছে মাত্র মাসখানেক আগে। ভাগ্যাহত এ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের রোগীদের এ নাজুক পরিস্থিতি কাটিয়ে তুলতে বরাদ্দ হয়েছিল একটি ক্যাথল্যাব মেশিন।
কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটিও চলে গেছে অন্য একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ফলে ময়মনসিংহবাসীর ভাগ্যে শিঁকেয় ছিঁড়েনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, হৃদরোগ বিভাগে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা দিতে হলে ক্যাথল্যাব মেশিন দরকার। এটি না থাকায় কোন রোগীকে এনজিওগ্রাম ও হার্টে রিং পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা আশাবাদী অচিরেই আমরা একটি ক্যাথল্যাব মেশিন পাবো।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৫৪ বছর পর বরাদ্দকৃত ক্যাথল্যাব মেশিন গেছে অন্য হাসপাতালে!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ