বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পিয়ারা নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা সা. সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তার শরীয়ত ও কিতাব পূর্ববর্তী সকল শরীয়ত ও কিতাবকে রহিত করে দিয়েছে। তার পরে কিয়ামত অবধি আর কোনো নবীর আগমন ঘটবে না। সুতরাং তার পরে কেউ নবী হওয়ার দাবি করলে সে নিঃসন্দেহে কাফির, যিন্দিক এবং তার অনুগত ব্যক্তিরাও কাফির ও মুরতাদ। এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআনে ও এজমায়ে উম্মতের মাধ্যমে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। যথা- (ক) আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাম্মাদ সা. তোমাদের মধ্যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৪০)। (খ) ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছুকে দীন হিসেবে অন্বেষণ করে, তার নিকট হতে তা আদৌ গ্রহণ করা হবে না। আর সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৮৫)।
হাবীবে কিবরিয়া হযরত মোহাম্মাদ সা.-এর পৃথিবীতে প্রেরণ ও নাবুওয়াত প্রাপ্তি ছিল বিশ্বময়। তিনি সমগ্র বিশ্বের নবী। তিনি যেমন ছিলেন উম্মাতের নবী, তেমনি ছিলেন নবীদেরও নবী। মহান রাব্বুল আলামীন আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন : (ক) আমি আপনাকে সকল মানুষের জন্য সুসংবাদদানকারীরূপে প্রেরণ করেছি। (সূরা সাবা : আয়াত ২৮)। (হাদিস শরীফে আছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বলেন, আল্লাহপাক হযরত মোহাম্মাদ সা.-কে আকাশের অধিবাসী ও নবীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। (নিরবাস : পৃ. ১১৪)।
রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেছেন, আমি কিয়ামতের দিন নবীদের ইমাম ও খতিব হব। (শরহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ২৮৬)। এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, হযরত মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. সর্বশেষ নবী। অতঃপর কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে আর কোনো নবী আসবেন না। সুতরাং তার পর মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদার কোনো ব্যক্তির নিকট যদি কেউ দলিল প্রমাণ চায়, তাহলে সেও মুসলিম উম্মাহর বহির্ভূত বলে গণ্য হবে। কেননা, এরূপ দাবির পক্ষে দলিল কামনা করা খতমে নবুওয়াতের বিশ্বাসে সন্দেহের নামান্তর। তবে খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি যদি নবুওয়াতের মিথ্যা দাবিদারকে নির্বাক ও পরাজিত করার উদ্দেশ্যে তার কাছে দলিল প্রমাণ চায় তাহলে তা কুফুরী হবে না। যেমন- হযরত ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর যামানায় এক ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবি করল। সে বলল, আমাকে একটু অবকাশ দিন। আমি আমার দাবির সপক্ষে দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করব। ইমাম আবু হানিফা রহ. বললেন, যে ব্যক্তি তোমার নিকট প্রমাণ তালাশ করবে, সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা সা. বলেছেন, আমার পর আর কোনো নবীর আগমন ঘটবে না। (মানাকিবে ইমাম আজম রহ. : খন্ড ১, পৃ. ১৬১ বহাওয়ালায়ে ইমাম বারাজী রহ.)।
জেনে রাখা ভালো যে, নবীগণের মধ্যে পারস্পরিক মান ও স্তরের ব্যবধান আছে। এক নবী অন্য নবীর ওপর অধিকতর মর্যাদার অধিকারী। তবে, সকলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন হযরত মোহাম্মাদ সা.। তিনি সকল নবীর শিরোমণি। কোরআনুল কারীমে আল্লাহপাকের ঘোষণা- (ক) তারা হলেন রাসূল সম্প্রদায়, তাদের কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহপাক কথা বলেছেন, আর কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ২৫৩)। (খ) রাসূলুল্লাহ সা. সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, যা নিম্নল্লিখিত আল্লাহপাকের বাণী থেকে প্রমাণিত হয়। তোমারাই হলে উত্তম উম্মত যাদেরকে মানুষের হেদায়েতের জন্য আবির্ভূত করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে ভালো কাজের উপদেশ দাও এবং মানুষকে মন্দ কাজ হতে বিরত রাখ। (নিরবাস : পৃ. ২৮৬)। (গ) সর্বসম্মত নির্ভরযোগ্য আকিদা হলো সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন আল্লাহপাকের প্রিয় হাবীব, আমাদের সম্মানীত নবী সা.। এর প্রমাণ স্বরূপ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহান আল্লাহপাক আকাশবাসী (ফিরিশতামন্ডলী) ও নবীগণের ওপর হযরত মোহাম্মাদ সা.-কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, জামে তিরমিজী)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।