Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ইসলামী বিধিবিধান

মুহাম্মদ আতিকুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

 


অতঃপর যখন মূসা তার নিকট আসল এবং সকল ঘটনা তার কাছে খুলে বলল, তখন সে বলল, তুমি ভয় করো না। তুমি যালিম কওম থেকে রেহাই পেয়ে গেছ। নারীদ্বয়ের একজন বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনি তাকে মজুর নিযুক্ত করুন। নিশ্চয় আপনি যাদেরকে মজুর নিযুক্ত করবেন তাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত’। সে বলল, ‘আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার মজুরী করবে। আর যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, তবে সেটা তোমার পক্ষ থেকে (অতিরিক্ত)। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। তুমি ইনশাআল্লাহ আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত পাবে’। মূসা বলল, ‘এ চুক্তি আমার ও আপনার মধ্যে রইল। দু’টি মেয়াদের যেটিই আমি পূরণ করি না কেন, তাতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে না। আর আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি, আল্লাহ তার সাক্ষী”(সূরা আল-কাসাস ২৫-২৮)। ইসলামী শ্রমনীতিই ভানসাম্যপূনর্ণ ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গড়তে পারে। এ নীতি অনুযায়ী শ্রমিক ও পুঁজি মালিকের পারস্পরিক সম্পর্ক দ্ব›দ্ব-সংঘর্স ও শ্রেণী-সংগ্রামের সম্পর্ক নয়। সে সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের, পারস্পরিক সহযোগিতার ও একই কাজে সমান শরীকদারীর। এ প্রসঙ্গে আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, “মুমনিরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও” (জুমু‘আ:১০)। রাসূল সা. এ ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে প্রত্যেককে তার নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. ফরমাইয়াছেন: তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল বা সংরক্ষণকারী স্বরূপ এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হইবে। শাসক তার লোকজনের রাখাল স্বরূপ, তাকে তার শাসিতদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। দাস তার মনিবের সম্পদাদির রাখাল স্বরূপ, তাকে তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। মনে রাখবে, তোমাদের প্রত্যেকেই (কোন না কোনভাবে) রাখাল স্বরূপ এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (আল-আদাবুল মুফরাদ-২০৬) মালিক-শ্রমিকের সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য রাসূল সা. তাদের আচরণ সম্পর্কে বলেন, “তোমাদের কারোর খাদেম যখন তার জন্যে খাবার নিয়ে আসবে, তখন তাকে সঙ্গে বসিয়ে না খাওয়ালেও তাকে অবশ্যই এক মুঠি বা দুই মুঠি খাবার দেবে। কেননা সে-ই তার ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীল”(বুখারী,২৪১৮)। রাসূল সা. মালিকদের নির্দেশ দেন যে, তারা যেন কর্মচারী, শ্রমিক ও অধীনস্তদের সাথে সন্তান-সন্ততির ন্যায় আচরণ করে এবং তাদের ইজ্জত- সম্মানের কথা স্মরণ রাখে। হাদীসে এসেছে-“ তাদের এভাবে সম্মান করবে যেভাবে নিজের সন্তানদের করো এবং তাদেরকে সে খাবার দিবে যা তোমরা নিজেরা খাও”(ইবনে মাজাহ: আল-আদব)। বিদায় হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ভাষণেও আল্লাহর রাসূল সা. মালিক-শ্রমিক ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক পূনরায় ব্যক্ত করে তাদের মর্যাদা তুলে ধরেন এবং অধিকারের বিষয় সতর্ক করেন।ইসলামী বিধি-বিধান অনুযায়ী মালিক-শ্রমিকের কর্মের ফলাফল দুনিয়া ও আখেরাতে পূর্নমাত্রায় প্রদান করা হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,“ এবং মানুষের প্রাপ্য শুধু তা, যার জন্যে সে চেষ্টা ও শ্রম করেছে। এই চেষ্টা ও শ্রম অবশ্যই গুরুত্ব পাবে এবং চেষ্টা শ্রমকারীকে তার পূর্ণ মাত্রায় প্রতিফল অবশ্যই দেয়া হবে। (সূরা নাজম: ৩৯-৪১) আল্লাহ তাআলা আল-কুরআনের অন্য স্থানে বলেন, “প্রত্যেকের কাজ অনুপাতে তাদের মান-মর্যাদা নিরূপিত হবে, যেন আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দিয়ে দিতে পারেন। তাদের ওপর একবিন্দু জুলুম করা হবে না” (সূরা আহক্বাফ:১৯)। রাসূলুল্লাহ সা. মালিক-শ্রমিকের দায়-দায়িত্ব সঠিকভাবে প্রতিপালনের মাধমে তাদের ‘দ্বিগুন’ সাওয়াবের নিশ্চয়তা প্রদান করে উভয়ের মর্যাদ স্থাপন করেছেন। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে যে, নাবী সা. বলেছেন, যে লোক তার বাদীকে উত্তমরূপে জ্ঞান ও আদব শিক্ষা দেয় এবং তাকে মুক্ত করে ও বিয়ে করে, সে দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে। আর যে ক্রীতদাস আল্লাহর হক আদায় করে এবং মনিবের হকও আদায় করে, সেও দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে (বুখারী, ২৫৪৭)। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হলে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার সমূহ বাস্তবায়ন করে মালিক-শ্রমিকের মাঝে সু-সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। ইসলামী শ্রমনীতিতেই শ্রমের মর্যাদা ও শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে যে নীতি অবলম্বন করেছে তাতে নেই কোন অসঙ্গতি। নেই মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে কোন ভেদাভেদ। তাই আসুন ইসলামী বিধি-বিধানে শ্রম, শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক স্থাপনে যে সকল দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে তা প্রয়োগ করে শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ