দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন ঃ রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর সাহাবীগণ কি সত্য ও ন্যায়ের প্রতিক?
উত্তর ঃ আরবি শব্দ ‘সুহবত’ থেকে ‘সাহাবী’ শব্দটি এসেছে। আভিধানিক অর্থ সহচর, সাথি, সঙ্গি, অনুসারী ও বন্ধু অথবা সাহচর্যে অবস্থানকারী। ইসলামী পরিভাষায় ‘সাহাবা’ শব্দটি দ্বারা ঈমানের অবস্থায় রাসুল (সা:)-এর সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং মুমিন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন তাদেরকেই সাহাবী বলা হয়। ইবনে হাজার আসকালানি (রহ:)-তাঁর ‘আল-ইসাবা ফী তাময়ীযিস সাহাবা’ গ্রন্থে সাহাবায়ে কেরামগণের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘সাহাবী সেই ব্যাক্তি যিনি রাসুল (সা:)-এর প্রতি ঈমানসহকারে তাঁর সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং ইসলামের ওপর ইন্তেকাল করেছেন। সৃষ্টিকর্তা সুস্পষ্ট ভাষা বর্ণনা করেন- রাসুল (সা:) আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্ট কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদার প্রভাবের চিহ্ন পরিস্ফুট থাকবে (সুরা:ফাতাহ,আয়াত-২৯)। অন্যত্রে সৃষ্টিকর্তা বলেন- অত:পর আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাদেরকে পছন্দ করেছি তাদেরকে কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছি। তবে তাদের মধ্যে কেউ নিজের প্রতি জুলুমকারী, কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী এবং কেউ আল্লাহর হুকুমে কল্যাণকর কাজকর্মে অগ্রগামী। এটা একটা বড় অনুগ্রহ (সুরা:ফাতির,আয়াত-৩২)। সাহাবায়ে কিরামগণ সম্পর্কে আরও বর্ণনা পাওয়া যায় যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ সকল মুসলমানদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন (যাহারা আপনার সফর সঙ্গী), যখন তাঁহারা আপনার সাথে গাছের নিচে অঙ্গীকার করছিলো এবং তাঁদের অন্তরে যা কিছু (ইখলাস ও মজবুতি) ছিল তাও আল্লাহর জানা ছিল, আর আল্লাহ তাঁদের অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে একটি নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন। (যা খায়বরের বিজয়কে বুঝানো হয়েছে) আর প্রচুর গনিমতও দান করলেন (সুরা:ফাতাহ,আয়াত-১৮)।
সাহাবীগণ সত্যে ও ন্যায়ের প্রতিক। রাসুল (সা:) বলেছেন, আমার সাহাবায়ে কেরাম হলেন তারকার ন্যায়। তাদের যে কোনো একজনকে অনুসরণ করলে তোমরা হেদায়ত পাবে (জামিউল অসুল ফী আহাদীসির রাসুল)। তাঁদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদার হিসেবে স্তরভেদ থাকতে পারে, তবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মত অনুযায়ী সমস্ত সাহাবায়ে কেরামগণ জান্নাতী । কেননা দুনিয়ার জমিনে যত বড় আল্লাহ ওয়ালা, বড় জ্ঞানী, গুণী ও সাধক হননা কেন রাসুল (সা:)-এর কোন একজন সাহাবীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা এবং কিয়াস একমত। সাহাবীরাই রাসুল (সা:) ও তাঁর উম্মাতের মধ্যে প্রথম মধ্যসূত্র। পরবর্তী উম্মাত আল্লাহর কালাম কুরআন, কুরআনের ব্যাখ্যা, রাসুল (সা:)-এর পরিচয়, তাঁর শিক্ষা, আদর্শ, মোটকথা দ্বীনের সবকিছুই একমাত্র তাঁদেরই সূত্রে, তাঁদেরই মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। অতএব তাদের উপেক্ষা করলে, বাদ দিলে অথবা তাঁদের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি হলে দ্বীন, শরীয়তের মূল ভিত্তিই ধ্বসে পড়ে। কুরআন ও হাদীসের প্রতি অবিশ্বাস দানা বেঁধে ওঠে। সৃষ্টিকর্তা বর্ণনা করেন- আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্য (সাহাবায়ে কেরাম) লোকেরা যেমন ঈমান এনেছে তোমরাও তেমনি ঈমান আন। তখন তারা বলে, আমরা কি বোকাদের মত ঈমান আনতে পারি? জেনে রেখো, আসলে তারাই বোকা, তবে তারা তা জানে না (সুরা:বাকারাহ,আয়াত-১৩ ও ১৩৭)। কোন কোন সাহাবীর জীবদ্দশায় রাসুল (সা:) তাঁদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। ইবনে হাজার আসকালানি (রহ:)-তাঁর ‘আল- ইসাবা’ গ্রন্থে স্পেনের ইমাম ইবনে হাযমের মন্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন- ‘সাহাবীদের সকলেই নিশ্চিতভাবে জান্নাতী (আল ইসাবা)। ‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে। তারাই (সাহাবীগণ) সত্যনিষ্ঠ বা সত্যবাদী’ (সুরা:হুজুরাত,আয়াত-১৫)। ‘এমন সব লোকই (সাহাবীরা) সত্যিকারের মুমিন (যাঁদের ভেতর ও বাহির এক রকম এবং মুখ ও অন্তর ঐক্যবদ্ধ)। তাদেরজন্য রয়েছে সৃষ্টিকর্তার নিকট সুউচ্চ মর্যাদা ও মাগফিরাত এবং সম্মানজনক রিযিক (সুরা:আনফাল,আয়াত-৪)। ‘মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যাঁরা নিষ্ঠার সাথে তাঁদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যার নিম্ন দেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তাঁরা চিরস্থায়ী হবে। এটা মহা নেয়ামত (সুরা:আত-তাওবা,আয়াত-১০০)। আল্লাহ তাঁদের উপর সন্তুষ্ট এবং তাঁরা তাঁর (আল্লাহর) উপর সন্তুষ্ট। এটা তারই জন্য, যে আপন প্রতিপালককে ভয় করে (সুরা:বাইয়্যেনাহ,আয়াত-৮)।
হাদিসে বর্ণিত, ‘আমার পরে তোমরা তাঁদেরকে সমালোচনার লক্ষ্যে পরিণত করো না। তাঁদেরকে যারা ভালোবাসে, আমার মুহাব্বতের খাতিরেই তারা ভালোবাসে, আর যারা তাঁদেরকে হিংসা করে, আমার প্রতি হিংসার কারণেই তারা তা করে’ (মিশকাত)।
উত্তর দিচ্ছেন ঃ মুফতি মুহাম্মাদ আকতার আল-হুসাইন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।