Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজানের সঠিক ফুড প্ল্যানিং

প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শারমিন সূলতানা নূপুর

এখন চলছে শান্তি, নাজাত, রহমত, আত্মশুদ্ধি, বরকত ও মাগফিরাতের মাস। সুবহে সাদেকের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকাকে রোজা বলে। রোজা শেষে বাহারি খাবারের মধ্য দিয়ে ইফতারি শুরু হয় এবং রাতের ও সেহরির জন্য থাকে আলাদা খাবারের মেন্যু। রোজায় খাবার নিয়ে ভালোভাবে প্ল্যানিং করতে হয়। আর এর দায়িত্ব থাকে যিনি প্ল্যান ও রান্নার দায়িত্বে থাকেন তার ওপর। মেন্যু তৈরির সময় ঘরের প্রতিটি সদস্যের কথা ভাবতে হবে। সেই সাথে এক ঘেয়েমি ভাবটা যেন খাবারের ক্ষেত্রে সৃষ্টি না হয় প্ল্যান করার সময় তাও চিন্তা করতে হবে। আমরা একবেলা না খেয়ে থাকি সত্যি, কিন্তু তাই বলে রোজার শেষে ইফতারির পরে যা ইচ্ছা তা খেতে পারি না। তাতে রুচি নষ্ট হতে পারে। পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে, ফলে শরীরে ক্লান্তি ভাব তৈরি হয়, রোজা রাখতে কষ্ট হয়। তাই আসুন আমরা আমাদের স্বাস্থ্য রুচি, সুস্থতার কথা চিন্তা করে তৈরি করে ফেলি খাবারের জন্য সুন্দর পরিকল্পনা বা মেন্যু। রমজানে সন্ধ্যায় ইফতারি করে রোজা খুলতে হয়। আর মাঝে খাবার শেষে সেহরির খাবার খেয়ে রোজা রাখতে হয়। ইফতারি ও সেহরির মাঝখানে রাতের খাবার। তিন বেলাতে তিন ধরনের খাবার থাকা দরকার। তাতে খাবারের প্রতি আগ্রহ জাগে। খাবারে অবশ্যই যতটুকু সম্ভব কম তৈল ও মসলা ব্যবহার করবেন। তৈলাক্ত খাবার যতটুকু কম খাওয়া যাবে তত বেশি শরীর সুস্থ থাকবে। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও তৈলযুক্ত খাবার শরীরে বদহজম ভাব তৈরি করে। তাই সুস্থ থাকতে পরিমিত ও প্রয়োজন মতো মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। এতে নিজে ও অন্যকে সুস্থ থাকতে সহযোগিতা করবে। সেহরির ও রাতের খাবারের মধ্যে বিপরীত খাবার দেবেন। পাতলা ভুনা বা ঘন ইত্যাদি ঘরের সদস্যদের রুচি বুঝে করলে খাবারে এক ঘেয়েমি ভাব তৈরি হবে না। বৈচিত্র্যতাই সুখরোচক ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফল ও সালাত মেন্যুতে অবশ্যই রাখতে হবে।
ইফতারি : সারাদিনের সংসারের কাজের পাশাপাশি না খেয়ে পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। তার মধ্যে ইবাদত বন্দেগী তো রয়েছেই। তো স্বাভাবিক শরীরটা তো কিছুটা ক্লান্ত লাগবেই। এই ক্লান্তিবোধ দূর করতে শুধু পানি নয়, সাথে যোগ করুন নানা ধরনের শরবত। হতে পারে রুহ আফজা, নিউট্টিসি, লেবুর শরবত, ইউসুবগুলের ভূসি, ট্যাঙ্কসহ নানা ধরনের শরবত। এ ছাড়াও খেতে পারেন ডাবের পানি, বেলের শরবত ও নানা ফলের তৈরি হরেকরকম জুস। এর পাশাপাশি রাখতে পারেন মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন-জিলাপি, খেজুর, মিষ্টি খুরমা, ফিরনি, পায়েসসহ নানা ধরনের ফল। ফল শরীরের জন্য খুবই উপকারী। যারা দামি ফল খেতে না পারবেন তারা কমদামি দেশীয় ফল খাবেন। তাতেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। আম, আপেল, বাঙ্গি, মাল্টা, কলা, পেঁপে, কমলাসহ নানা ধরনের ফল। মিষ্টি জাতীয় ফলের পাশাপাশি রাখতে পারেন কিছুটা ঝাল জাতীয় খাবার যেমনÑ ছোলা, বুট, পিয়াজু, ডালের কড়া, আলুর চপ, হালিম, চটপটি, বেগুনি, সবজি বড়া ইত্যাদি। এগুলোর বেশির ভাগই তৈল জাতীয়, তাই যতটুকু সম্ভব হয় অবশ্যই তৈল ও চর্বি জাতীয় খাবার কম খাবেন।
ইফতারিতে মাঝে-মধ্যে স্যুপেরও স্থান দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতেও খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি করে।
রাতের ও সেহরির খাবার : সেহরি এবং রাত দুই বেলাতে দুই রকম মনমানসিকতা থাকে। তাই খাবারটা ভিন্ন হওয়া উচিত। তাতে দুই বেলার প্রতিই আগ্রহ বিরাজ করবে। দুই বেলার খাবারটা একেবারেই দুরকম হওয়া উচিত। রাতের খাবারে যদি বড় মাছ দেয়া হয় তাহলে সেহরিতে কলিজা ভুনা, রাতে গোশত হলে সেহরিতে বড় মাছ ভুনা, রাতে ডাল টক বা ছোট মাছ থাকলে দুধ, কলা, ডিম ভুনা রাখতে পারেন সেহরিতে। শাক ভর্তা, সালাত যদি রাতের মেন্যুতে থাকে তাহলে সেহরিতে রাখতে পারেন ভাজি, নিরামিষ ও সালাত। ভারী বা পাতলা খাবার দুবেলাতে ভালো লাগবে না। রাতের খাবার যদি ঝোল বা পাতলা জাতীয় হয় তাহলে বিপরীতে সেহরিতে রাখবেন ভুনা বা ঘন জাতীয় খাবার। সালাত সব বেলাতে রাখার চেষ্টা করবেন যদিও এসময় দাম বেশ চড়া, তবুও বেশি না হলেও অল্প করে প্রতি বেলাতে রাখার চেষ্টা করবেন। সালাত হজমে সাহায্য করে। সবসময় যারা গর্ভবতী বা অসুস্থ তারা বেশ সমস্যায় পড়ে থাকেন। না পারেন ছাড়তে আবার না পারেন রোজা রাখতে। যাই হোক যেহেতু বার মাসের মধ্যে একটি মাত্র মাসে অনেক বেশি দয়া রহমত, বরকত আল্লাহ দিয়ে থাকেন তো আমাদের উচিত এই সুযোগটি কাজে লাগানো। যারা গর্ভবতী বা অন্য কেউ অর্থাৎ ভাত খেতে ইচ্ছে না করলে তারা লেবু বা আচার দিয়ে ভাত খাবেন। তাতে শরীরের ব্যাকুলতা কমে আসবে। ঠিকমতো খাবার পেলে শরীর দুর্বল হয় না। রাতের খাবার নয়, সব বেলাতেই ফল ও সালাত খাওয়া উচিত। তাতে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীর গঠনে সাহায্য করে।
ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ফল সাধারণত টক হয়ে থাকে। এগুলো রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সালাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে, বিধায় এগুলো ত্বক ও চোখ ভালো রাখে। যে কোনো কিছু কাটার পূর্বে বটি, ছুরিসহ হাতও ভালো করে ধুয়ে নেবেন। প্রতিটি খাবারের মাঝে কিছুটা সময়ের ব্যবধান রাখবেন। তাতে হজম ও আগ্রহ দুই কাজই করবে। তারাবি নামাজ মানেই অনেক নামাজ। তাই তারাবির ফাঁকে ফাঁকে হালকা পাতলা কিছু কিছু করে খেতে পারেন। তাতে দুর্বলতা কেটে যাবে নামাজও ঠিকমতো পড়া হবে। অলসতা দূরীভূত হবে। সব কিছুতে পানিটা বেশি করে খাবেন। খাবারের মান ও নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে খাবার গ্রহণ করবেন। শাকসবজি ও নিরামিষ বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত। বাচ্চা ও বৃদ্ধদের খাবারের প্রতিও দৃষ্টি রাখতে হবে। দিনের তেল দিনেই ব্যবহার করতে হবে একই তেল বারবার ব্যবহার করা উচিত নয়। বার বার একই তেল ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। আমাদের সব কিছুতে সংযমি হওয়া উচিত। আমাদের খাবারের মেন্যুগুলোতে যদি প্রয়োজনমত ¯েœহ, ক্যালসিয়াম, শ্বেতসার, আমিষ ভিটামিনসহ সব ধরনের পুষ্টিমান থাকে তাহলে বুঝতে হবে মেন্যুটির পরিকল্পনা পরিপূর্ণ হয়েছে। অবশ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও একটি বড় ব্যাপার। আসলে সবকিছু মিলিয়ে আমিও আমাদের সবার সুস্থ ও সুন্দর থাকাটার স্বার্থক চেষ্টাই হচ্ছে সঠিক পরিকল্পিত ফুড প্ল্যানিংয়ের বাস্তবায়তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজানের সঠিক ফুড প্ল্যানিং
আরও পড়ুন