পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : মাত্র কয়েক মাস হলো সরকার সাধারণ মানুষের পরিবহনের অন্যতম প্রধান অবলম্বন সিএনজি অটো রিক্সায় ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে মিটার সিস্টেম চালু করেছিল। এক বছরও যায়নি। সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়া এবং মিটার সিস্টেম ভেঙে পড়েছে। শুধু তাই নয়, সিএনজি চালকরা তাদের পুরানো অভ্যাসে ফিরে গেছে। ভাড়ায় তারা কোন স্থানে যাবে আর কোন স্থানে যাবে না সেটিও তারাই ঠিক করছে। তাদের দেখাদেখি রিক্সাওয়ালারাও এখন তাদের ভাড়া এক লাফে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি করেছে। পরিবহন ক্ষেত্রে এই অনাচার এবং মালিক ও শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিকটস্থ পুলিশ বক্স, কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশ এবং রাস্তায় টহলদানরত পেট্রোল পুলিশকে বলেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বরং পুলিশ সাহেবরা সিএনজি এবং রিক্সাওয়ালাদের সাথে আপোষ করে চলাচল করার পরামর্শ দিচ্ছে।
ভারতের উদাহরণ আমেরিকা, ইংল্যান্ড প্রভৃতি উন্নত দেশে রয়েছে ট্যাক্সি সার্ভিস। কেউ কোন ট্যাক্সি খালি দেখে হাত তুলে সেই ট্যাক্সিকে থামায়। ট্যাক্সিওয়ালা নিজেই দরজা খুলে দেয়। আপনি ট্যাক্সিতে ওঠার পর চালক আপনাকে জিজ্ঞেস করে, স্যার, আপনি কোথায় যাবেন? আপনি গন্তব্য বললে সে মিটার ডাউন করে এবং আপনার গন্তব্যস্থলে আপনাকে পৌঁছে দেয়।
অমুক জায়গায় যাবো না, তমুক জায়গায় যাবো না ইত্যাদি বলার কোনো সুযোগ সেই সব দেশে নাই। ঐ ট্যাক্সিটি যখন রুট পারমিট নেয় তখন তাকে তার নির্ধারিত রুটে যেতেই হবে। ভাড়া নিয়ে দরদস্তুর করার কোন সুযোগ নাই। আপনি আপনার গন্তব্যস্থলে নামার আগে মিটার বক্সে দেখবেন, কত ডলার বা কত টাকা উঠেছে। যত টাকা মিটারে উঠবে সেখান থেকে এক পয়সা কম বা বেশি দেওয়ার সুযোগ নাই। অবশ্য আপনি যদি খুশি হয়ে তাকে অতিরিক্ত কয়েকটি ডলার দেন, সেটি আপনার মর্জি।
এসব তো গেলো পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোর কথা। প্রতিবেশী ভারতের কলকাতা, হায়দারাবাদ, চেন্নাই এসব শহরের কথাই ধরুন। সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে ভারতকে এখনও পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোর পর্যায়ে ফেলা যাবে না। তারপরেও এই প্রতিনিধি হায়দারাবাদ এবং দক্ষিণের আরও দুটি শহরে তাদের ট্যাক্সি এবং অটো সার্ভিস দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। হাত তুলে একটি অটোকে ডাকলে পিছে পিছে আরো দু’চারটি অটো এসে দাঁড়ায়। ট্যাক্সির ক্ষেত্রেও তাই। ট্যাক্সি বা অটোতে উঠে আপনার দরাদরির প্রয়োজন নাই। পশ্চিমাদের মতই তারাও আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে এবং মিটার অনুযায়ী ভাড়া নেবে। বিদেশের ট্যাক্সি এবং অটো রিক্সা সম্পর্কে এই সংবাদে যা কিছু বলা হচ্ছে সেটি এই প্রতিনিধি নিজে দেখেছেন এবং নিজেই ঐসব পরিবহনে যাত্রী হিসেবে চলাফেরা করেছেন।
বাংলাদেশে ঐসবের কোন বালাই নাই
বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায়, এই দিকটি এখন আপনার কাছে কষ্ট কল্পনা বলে মনে হয়। রাস্তায় যদি খালি অটো রিক্সা দেখেন তাহলে তার চালক আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, আপনি কোথায় যাবেন। আপনি গুলশান, বনানী, মহাখালী, যেটাই আপনার গন্তব্য হিসাবে বলুন না কেন, ওদের এক জবাব, “যাবো না”। যদি কোন অটো চালক ‘বড়ই মেহেরবানী’ করে যেতে রাজী হয় তাহলে সে বলবে ২৫০ বা ৩০০ টাকা লাগবে। আপনি বলবেন, মিটারে যাবো। ওরা বলবে, মিটারে গেলে পোষায় না। দু’মাস আগেও মিটারে যা উঠতো তার ওপর অতিরিক্ত ২০ টাকা দিলে তারা আপনাকে বহন করতো। এখন মাত্র কয়েক মাসে তারা সরকারের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে।
পুলিশও কিছু করছে না
যখন মিটার সিস্টেম চালু হয় তখন যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বড় গলা করে বলেছিলেন, এই মিটার সিস্টেম সিএনজি ওয়ালারা মানতে বাধ্য। প্যাসেঞ্জার যেখানেই যেতে চাইবে সেখানেই যেতে তারা বাধ্য থাকবে। তিনি আরো বলেছিলেন যে, কোন সিএনজি চালক যদি আপনার গন্তব্যে যেতে না চায়, অথবা মিটারের চেয়ে বেশি ভাড়া দাবি করে তাহলে নিকটস্থ পুলিশ বা ট্র্যাফিক পুলিশের সাহায্য নেবেন। মাননীয় মন্ত্রীর অবগতির জন্য আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি যে, পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ দিলে পুলিশ এড়িয়ে যায়। আপনি যদি চাপাচাপি করেন তাহলে পুলিশ বলে, ভাই, ঝামেলা করে কি লাভ? ওদের সাথে বরং ‘ভাও’ করে চলুন। এই দৃশ্য কলাবাগানের, এই দৃশ্য মর্ডান হাসপাতাল, ল্যাব এইড হাসপাতাল, গ্রীন রোডের গ্রীন লাইফ হাসপাতাল, বনানীর ১১ নং রোড, মহাখালীর ডিওএইসএস- সর্বত্র। আমাদের এই রিপোর্টের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য মন্ত্রী বাহাদুর তার অধীনস্থ অফিসারদেরকে পরিচয় গোপন রেখে চেক করতে বলতে পারেন।
গরীব ও মধ্যবিত্তের উপায় কি?
বড় বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হওয়ার প্রয়োজন নাই। মধ্যম সারির নেতা হলেই গাড়ি কেনা যায়। ৩০/৪০ লাখ টাকা দিয়ে এলিয়ন বা প্রিমিও গাড়ি তারা কিভাবে কেনেন তারাই সেটি ভাল বোঝেন। যারা গাড়ি হাঁকান তাদেরতো এই রিক্সা আর বেবির দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। পথে হয়তো যানজটে আটকে থাকতে হয়। কিন্তু সেখানেও গাড়ির এসি ছেড়ে দিয়ে তারা রিলাক্স করতে পারেন। কিন্তু বেচারা গরীব আর মধ্যবিত্তের কি হবে? তাদের সম্বলতো ঐ বাস, অটো রিক্সা আর রিক্সা।
ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা এখন ১ কোটি ৭৫ লাখ। প্রয়োজনের তুলনায় কি সরকারি খাত, অথবা কি বেসরকারি খাত, উভয় খাতেই গণপরিবহনের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক অনেক কম। এই প্রচ- গরমে বাসে উঠলে বসার সিট পাওয়া যায় না। অসহায় মানুষ বাসে ভীড়ের চাপে গাড়ির পাদানিতে পা দিয়ে বাদুড় ঝোলা হয়ে বাসে চলাফেরা করেন। সিএনজির কথা একটু আগেই বলেছি।
সিএনজির দেখাদেখি রিক্সাওয়ালারাও তাদের ভাড়া গত ২/৩ মাসে এক লাফে ডাবল করেছে। কলাবাগান থেকে আগে ১০ টাকা দিয়ে ল্যাবএইডে যাওয়া যেত। এখন তারা ৪০ টাকা হাঁকে। দরাদরি করে ৩০/৩৫ টাকায় ‘ভাও’ করতে হয়। তারা ভাড়া বাড়িয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ গুণ। এই অবস্থায় ঢাকা মহানগরীর সাধারণ মানুষ, যাদের সংখ্যা অন্তত দেড় কোটি তাদের যাতায়াত ও পরিবহনের সুবিধার জন্য সরকারের কোন মাথা ব্যথা নাই। এই দেড় কোটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সুবিধা অসুবিধা দেখার জন্য কেউ নাই। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক তাও তার এলাকাকে ‘পোশ’ এরিয়া বানাচ্ছেন। সেখানে রাস্তা ঘাটের সংস্কার হচ্ছে, উন্নত মানের বর্জ্য ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণে কোন কাজ হচ্ছে না। এখানে সাঈদ খোকন সাহেব থুথু ফেলা বা ময়লা ফেলার জন্য রাস্তার এখানে সেখানে বালতি টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন এবং সস্তা বাহবা কুড়াবার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। আনিসুল হক দলীয় রাজনীতি কম করছেন, কাজ বেশি করছেন। সাঈদ খোকন কাজ কম করছেন, রাজনীতি বেশি করছেন।
এর আগের বারেও দেখা গেছে, বেবি ট্যাক্সিতে মিটার লাগানো হয়েছিল। এবারে যা ঘটেছে, সেবারও তাইই ঘটেছিল। কিছুদিন পরেই মিটার সিস্টেমের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল এবং তারপর আস্ত মিটারটাই লাপাত্তা। এই সরকার যদি গণতান্ত্রিক সরকার হয়, আওয়ামী লীগ যদি জনগণের দল হয়, তাহলে ২৪ ঘন্টা রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত না থেকে, তাদের মূল্যবান সময়ের একটি অংশ জনদুর্ভোগ দূর করার দিকে খরচ করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।