পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ইসলামিক স্টেটের প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি মার্কিন বিমান হামলায় রাক্কায় নিহত হয়েছেন বলে কয়েকদিন আগে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে তার নিহত হওয়ার সত্যতা এখনো সমর্থিত হয়নি। গত বছরেও জানুয়ারি ও অক্টোবরে আরো দু’বার তার হত্যার খবর প্রচারিত হয়। দু’বারই তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়।
তার সর্বশেষ নিহত হওয়ার খবর প্রসঙ্গে ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরোধী আন্তর্জাতিক জোটে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক বলেন, বাগদাদি বেঁচে নেই, একথা আমাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তবে গত বছরের শেষ থেকে আমরা তার কোনো কথা শুনতে পাইনি। বাগদাদির নিরবতা বা তার মৃত্যু জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াইরতদের সকলের জন্য সুসংবাদ বলে গণ্য হবে। ২০১৪ সালে তিনি ইরাক ও সিরিয়া তার অধিকৃত বিস্তীর্ণ এলাকাকে খিলাফত এবং নিজেকে বিশ্ব মুসলিমের খলিফা বলে ঘোষণা করেন।
কিন্তু কিছু সামরিক অফিসার ও মুসলিম আলেমের জোর যুক্তি হচ্ছে যে বাগদাদি জীবিত ও আইএসের প্রধান থাকলে তা মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের জন্য ভালো হতে পারে।
জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জেনা জর্ডান- এর ‘২০১৪ স্টাডি’-তে প্রধান সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে হত্যার জন্য হামলার বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, “হত্যা আল কায়েদার সামর্থ নির্মূল করতে পেরেছে বলে মনে হয় না, বরং তা উল্টো ফল হিসেবে তা গ্রুপকে আরো উৎসাহিত বা শক্তিশালী করেছে।
‘সাংগঠনিক প্রণোদনা’র ভিত্তিতে তিনি এ দাবি করেছেন যা কিনা সন্ত্রাস বিরোধী কর্মীদের তুলনায় বাণিজ্য বিষয়ক স্নাতকদের কাছেই অধিকতর প্রিয়। জেনা জর্ডান এ যুক্তি মানেন না যে প্রচ- বিশ্বাসে বলীয়ান একটি সংযোজক গ্রুপ লাদেন বা বাগদাদির মত ক্যারিশমাটিক একক নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল। এর বদলে বহু গোপন গ্রুপ উচ্চ পর্যায়ে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের মত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। এসব সংগঠনের প্রশাসনিক দায়িত্ব ও কর্মকান্ডের সুস্পষ্ট ভাগ রয়েছে, বিধি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং আকস্মিক ভাবে নেতা বা নেতৃবৃন্দের অপসারণের ঘটনায় শূন্যতা পূরণ করে। এসব বিষয় তুলনামূলক ভাবে বিকেন্দ্রীকৃত আল কায়েদার চেয়ে ইসলামিক স্টেটের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।
সুতরাং বাগদাদিকে হত্যা করা হলে তা যুদ্ধে বিজয় বলে বিবেচিত হবে ঠিকই, কিন্তু তা ইসলামিক স্টেটের জন্য মরণাঘাত হবে না। তারপর এ নিয়ে বিতর্ক আাছে। ‘ওয়ার অন দি রকস’ ওয়েব সাইটে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হারোরো ইনগ্রাম এবং মন্টিরেরির মার্কিন নৌবাহিনী কলেজের শিক্ষক যুদ্ধ ফেরত কেইগ হোয়াইট সাইড বলেন, ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব হচ্ছে সহজাতভাবেই ক্ষণস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল। তারা উদ্বিগ্ন যে আল বাগদাদি না থাকলে তার স্থানে সামরিক ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষ আরো শক্তিশালী কেউ নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারেন।
তারা উভয়েই ২০০৬ সালে আবু মুসাব আল জারকাবির মৃত্যুর পর ইসলামিক স্টেটের অন্ধকার সময়ের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ছিলেন প্রচলিত ধারার এক ক্যারিশম্যাটিক নেতা। মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আল জারকাবির আল কায়েদা ইন ইরাক গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। এ গ্রুপটি ছিল মার্কিন বিরোধী সবচেয়ে ভয়ংকর উপদল। তিনি তার হত্যাকা-ের জন্য শুধু শিয়াদের মধ্যেই নন, আল কায়েদা নেতৃত্বের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করেন। তার পর গ্রুপের নেতা হন আবু ওমর আল বাগদাদি (আল বাগদাদির কোনো আত্মীয় নন)। জারকাবির যুদ্ধ দক্ষতা তার ছিল না, তবে তার ছিল দূরদৃষ্টি। তিনি অন্য জিহাদি গ্রুপগুলোর সাথে বিরোধ মিটিয়ে ফেলেন এবং মার্কিন বাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহারের সুবিধা নিতে গ্রুপকে নতুন করে সাজান।
আবু বকর আল বাগদাদিকে সরানো হলে তার উত্তরসূরি আরো বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করতে পারেন, বিশেষ করে তিনি যদি নিজেকে মুসলিম জাহানের খলিফা ঘোষণা না করার সিদ্ধান্ত নেন। তার অর্থ হবে আল কায়দা ও তার সিরীয় শাখা আল নুসরা ফ্রন্টসহ অন্যান্য সুন্নী জিহাদি গ্রুপগুলোর সাথে মতপার্থক্য কমিয়ে আনার একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি।
তাহলে আইএস নেতাদের হত্যার বিকল্প কি? একটি জিহাদি গ্রুপকে পঙ্গু করার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে তার মধ্য পর্যায়ের পরিচালকদের হত্যা করা। জার্নাল স্টাডিজ ইন কনফ্লিক্ট অব টেরোরিজম-এ পিটার নিউম্যান, রায়ান ইভানস ও রাফায়েলো পানতুচ্চি বলেন যে নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায় ও মাঠের সৈনিকদের মধ্যকার সাংগঠনিক কাঠামোতে যেসব লোকদের দেখা যায় তারাই হচ্ছে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে রাখার ক্ষেত্রে সংযোগ টিস্যু। ফরাসি পন্ডিত ম্যাথু গুইডার বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট টেকনিক্যাল ক্যাডার ও মাঝারি পর্যায়ের কমান্ডারদের হত্যার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
ইসলামিক স্টেট বাহিনী ইরাকের ফাল্লুজা ও সিরিয়ার রাক্কা হারানোর সম্মুখীন হয়েছে, আল বাগদাদির মহাকৌশল ক্রমশই ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। তাকে আঘাত হানা ও তার স্থলাভিষিক্তকে আবার হত্যার লক্ষ্যবস্তু করার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাকে ইনগ্রাম ও হোয়াইটহেডের পরামর্শ মত ‘খিলাফত বিহীন খলিফা’ করার পন্থা গ্রহণ করা। সূত্র ব্লুমবার্গ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।