Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভুলতে বসেছে পুলিশ, পারছে না তাবাসসুম-মাহির

প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : মাহমুদা খানম মিতুকে পুলিশ ভুলতে বসেছে। তবে মমতাময়ী মাকে কিভাবে ভুলে থাকবে শিশুকন্যা তাবাসসুম (৪) ও পুত্র মাহির আক্তার (৭)। পনের দিন হয়ে গেল তারা মাকে দেখছে না। আদর করে তাদের কোলে নিচ্ছে না মা। মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে না। মা হারানো কষ্ট তারা প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করছে। মাহিরের কষ্ট সবচেয়ে বেশি। কারণ সে নিজের চোখে দেখেছে খুনিরা তার মাকে কুপিয়ে হত্যা করছে। এই ভয়ানক বিভৎস ভয়ালস্মৃতি তার শিশুমনকে তাড়া করছে। এখন বাবাই যেন তাদের সব। বাবুল আক্তার মা হারা দুই সন্তানকে বুকে আগলে রাখছেন পরম স্নেহ মমতায়। জীবনবাজি রেখে অসংখ্য মানুষের জীবন নিরাপদ রেখেছেন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর জীবনের নিরাপত্তা দিতে না পারার কষ্টে তিনি এখন গুমড়ে কাঁদেন। মাহমুদা খানম মিতুর স্বজনদের চোখের পানি হয়তো শুকিয়ে গেছে, তবে হৃদয়ের ক্ষত এখনও আছে।
মিতুর খুনিরা পনের দিনেও গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্বজন-সুহৃদেরা। পুলিশের ভূমিকায় হতাশ তারা। নগরীর ও আর নিজাম রোডের বাসিন্দা মিতুর একজন বন্ধু ক্ষোভের সাথে বলেন, পুলিশ ইচ্ছা করলে কী না পারে। পনের দিনেও তারা মিতুর খুনিদের ধরতে পারেনি এটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। একজন পুলিশের সুপারের স্ত্রীর খুনিদের ধরতে যদি এতদিন লাগে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অবস্থা কি হবে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশ পুলিশের কর্মকর্তারাও। মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পনের দিনেও চাঞ্চল্যকর এই খুনের রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়া দুঃখজনক। তদন্ত তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা লজ্জিত, আমরা কিছুই করতে পারছি না। তবে নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বসে নেই, কাজ চলছে। খুব শিগগির না হলেও খুনিরা ধরা পড়বে। উদঘাটন করা যাবে খুনের রহস্য। এ বিষয়ে সিএমপির কর্মকর্তারা মিডিয়ার সামনে আনুষ্ঠানিক কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ফুটেজ থেকে খুনিদের সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। খুব শিগগির তাদের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাবে। প্রয়োজনে তাদের ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ করে তাদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হতে পারে।
অসম সাহসী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু গত ৫ জুন নগরীর সিইসি মোড়ের অদূরে ও আর নিজাম রোডে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন। মোটর সাইকেল আরোহী খুনিচক্রের তিন সদস্য তাকে উপর্যপুরি কুপিয়ে ও গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। খুনের পর সড়কের পাশের সিসিটিভির ফুটেজ ধরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পুলিশের পাশপাশি আরও ৫টি সংস্থা তদন্তে সহযোগিতা করছে। তদন্তে সহযোগিতা ও আসামি ধরতে কাজ করছে পুলিশের আরও ৬টি টিম। তবে বাস্তবে এখনও তদন্তে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। কারা খুনি কেনই বা এই পরেজগার, পর্দানশীন গৃহবধূকে খুন করা হলো তার কিছুই জানে না পুলিশ।
হত্যাকা-ের পরপর পুলিশ দাবি করে খুনের ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত থাকতে পারে। কারণ বাবুল আক্তার কয়েকটি অভিযানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সফল হয়েছেন। দুটি জঙ্গি আস্তানা থেকে তিনি বেশকিছু অস্ত্র গ্রেনেড জব্দ এবং কয়েকজন জঙ্গিকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয়েছেন। জঙ্গিরা এর প্রতিশোধ হিসাবে এই খুনের ঘটনা ঘটাতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত এই খুনের সাথে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণ মিলেনি।
সন্দেভাজন হিসাবে হাটহাজারীর মুসাবিয়া দরবারের খাদেম আবু নসর গুন্ন ও বায়েজিদ এলাকার শীতলঝর্ণা থেকে আটক শাহ জামান রবিনকে রিমান্ডে নেয়া হয়। তাদের কাছ থেকে এখনও কোন তথ্য মিলেনি। একটি চিরকুটের সূত্র ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় কারাগারে বন্ধি জঙ্গি বুলবুলকে অন্য একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। তার কাছ থেকেও তেমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেনি। আলোচিত মিতু হত্যা মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবির সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, কাজ করছি, উল্লেখ করার মতো কোন অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন আসামি রবিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে খুবই সন্ত্রাসী প্রকৃতির। তবে এই খুনের ঘটনায় তার কাছ থেকে কোন তথ্য মিলেনি।
স্ত্রী মিতু খুনের পর থেকে ঢাকার বাসায় আছেন বাবুল আক্তার। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এডিসি ডিবি থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হিসাবে পুলিশ সদরদপ্তরে বদিল হন তিনি। জানা গেছে তিনি এখন সন্তানদের বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাবুল আক্তারের স্বজনরা জানান, দুই সন্তান মাকে মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারছে না। তারা মায়ের কষ্ট খুব বেশি অনুভব করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভুলতে বসেছে পুলিশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ