পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে যাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, পাকিস্তান অব্যাহতভাবে তাদের পক্ষাবলম্বন করেছে। তাদের এই অবস্থান একাত্তরে গণহত্যায় সম্পৃক্ততা ও এর দায় স্বীকার করে নেওয়ার শামিল। রোববার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম পিনু খানের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর আগে সংঘটিত ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য বা বাংলাদেশের জনগণের যে প্রচেষ্টা, পাকিস্তান তার বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর বিভিন্ন সময় পাকিস্তানের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঐদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছে যা একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ। পাকিস্তানের এ কর্মকা- ও মন্তব্য নিঃসন্দেহে সম্পূর্ণ অসঙ্গত, পক্ষপাতদুষ্ট এবং পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ও শিষ্টাচারবহির্ভূত। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তান সরকারের বিবৃতি প্রকৃতপক্ষে একাত্তরে গণহত্যায় সম্পৃক্ততা ও এর দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে নেওয়ার শামিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিদেশীয় চুক্তিতে বাংলাদেশে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা যাবে না, এমন কিছু উল্লেখ নেই। বরং পাকিস্তানই ১৯৭১ সালে গণহত্যার জন্য চিহ্নিত ও আটককৃত নিজ দেশের নাগরিকদের বিচারের আওতায় আনার বাধ্যবাধকতা অনুসরণে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানের এরূপ ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে প্রতিবারই তলব করে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে কঠোর প্রতিবাদলিপি প্রদান করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, অতি সম্প্রতি একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর তুরস্ক সরকার এ বিষয়ে বিবৃতি দেয়। ওই সময় ঢাকায় নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতকে পরামর্শের জন্য আংকারায় তলব করে। বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে এ সকল অপতৎরতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরকারের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। এ সকল অপতৎপরতা ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সরকার জোর কূটনৈতিক কার্যক্রম ও তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, পাকিস্তানের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বর্তমান সরকার সম্ভাব্য সব কিছুই করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দেনা-পাওনা অর্থাৎ উত্তরসূরি রাষ্ট্র হিসেবে অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের নিকট দীর্ঘ অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর একটি।
বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা আদায়ে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত সকল আনুষ্ঠানিক বৈঠকসমূহে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাওনার বিষয়টি পাকিস্তানের নিকট জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়েছে।
পাওনা আদায়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের কথা তুলে তিনি জানান, পাকিস্তানের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সম্ভাব্য সবকিছুই করবে।
তিনি জানান, ১৯৭৪ সালের স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পাকিস্তান সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে এই মর্মে বাংলাদেশ সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তানের নিকট হস্তান্তর করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাকিস্তান সরকার আজও তাদের বিচার সম্পন্ন করেনি।
তিনি জানান, সরকার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূল্যায়ন করে আসছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষায় পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সংযোগ কী মাত্রায় থাকবে তা নির্ধারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকল দিক বিবেচনায় রেখেছে এবং বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশ সব সময়ই সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণে বিশ্বাসী এবং সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছ থেকেও একই আচরণ আশা করে।
৫ বছরে বিদেশের কারাগার থেকে ৪৯ হাজার বাংলাদেশির মুক্তি
আবদুল মতিনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জানান, গত পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০১২-১৬ সাল পর্যন্ত বিদেশের কারাগার থেকে সাড়ে ৪৯ হাজার ৫০৩ জন বাংলাদেশি মুক্তি পেয়েছে।
বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের বরাত দিয়ে মন্ত্রী জানান, ৩১টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মুক্তি পেয়েছে মালয়েশিয়া থেকেÑ১৮ হাজার ৭২১ জন। সৌদি আরব থেকে ১৭ হাজার ৩৩৫ জন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৫ হাজার জন। মেক্সিকো থেকে মুক্তি পেয়েছে ১ হাজার ৯৮২ জন এবং এ সময়ের মধ্যে ভারত থেকে ৮৭৫ জন বাংলাদেশি মুক্তি পেয়েছে। কোনো দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কারাগারে আটক থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে অবহিত করলে তা যাচাই করে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।