দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রেই শ্রমিকদের অধিকার আদায় ও মালিক-শ্রমিক সংহতি স্থাপনে বিভিন্ন সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিবসটি পালন করে থাকে। কার্যত কর্ম ও কর্ম তৎপরতার মাধ্যমেই বিশ^ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মালিক-শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বিভিন্ন সময় এ কর্ম তৎপরতা ব্যাহত হয় এবং অগ্রযাত্রা স্তিমিত হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজ অরপূণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ অসন্তোষের মূলে রয়েছে শ্রমিকের উপযুক্ত পারিশ্রকি না পাওয়া, চাকুরির নিরাপত্তাহীনতা, কর্ম ক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অতিরিক্ত কাজে বাধ্য হওয়া এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পাওয়া। যদিও শ্রমিকদের এসকল সমস্যা সমাধান ও অধিকার আদায়ে বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের দাবী আদায়ে কাজ করে থাকে, কিন্তু মালিক পক্ষের অতি মুনাফা লোভী আচরণের জন্য সাধারণ শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয় এবং মালিক-শ্রমিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংগঠনের নানারকম শ্রমনীতি রয়েছে, কিন্তু ইসলামী শ্রমনীতিই শোষণমুক্ত, ন্যায় ভিত্তিক ও বিশ^জনীন। এ ব্যবস্থায় শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে এবং ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। ইসলামী সমাজে সকল ব্যক্তই শ্রমিক। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককেই সাধ্যানুযায়ী পরিশ্রম করার নির্দেশনা দিয়ে ইরশাদ করেনে “নিশ্চয়ই আমি মানুষকে শ্রম নির্ভর করে সৃষ্টি করেছি” (সূরা বালাদ:৪) ইসলামী সাধারণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হযরত আদম আ. থেকে হযরত মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলই ছিলেন শ্রমিক। নবীগণ মেষ-পালনের কাজ করেছেন। আমাদের নবী সা.ও মেষ চরাতেন। তিনি বিবি খাদীজা রা.-এর কর্মচারীরূপে বাণিজ্য করতেন। তিনি কূপ থেকে পানি তোলা বাবদ প্রতি পাত্রের বিনিময়ে একটি করে খেজুর মজুরি হিসাবে ইহুদী জোতদারদেও কাছ থেকে নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বীর্ণত হয়েছে, আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত যে, নাবী সা. বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা এমন কোন নাবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী না চরিয়েছেন। তখন তাঁর সাহাবীগণ বলেন, আপনিও? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি কয়েক কীরাতের (মুদ্রা) বিনিময়ে মক্কাহবাসীর ছাগল চরাতাম”(বুখারী, কিতাবুল ইজারা)। মালিক-শ্রমিকের সুসম্পর্ক স্থাপনে ইসলামী বিধি-বিধান সমূহ অনন্য। এতে তাদেরকে একে-অপরের ‘সাহায্যকারীর’ মর্যাদা দেয়া হয়েছে যেমন, ঠিক তেমনই তাদের খোর-পোশ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ পরিবেশন নিশ্চিত করার পূর্ণ তাগিদও দেয়া হয়েছে। বস্তুত ইসলামের দৃষ্টিতে এ হচ্ছে শ্রমিক-মজুরের ন্যায্য অধিকার। এ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা যেতে পারে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,“আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও কোন কিছুকে তাঁর সাথে শরিক করবে না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। দাম্ভিক আত্মগর্বীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না (আন নিসা-৩৬)। এ প্রসঙ্গে মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ সা. বলেন, ক্রীতদাসরা হচ্ছে তোমাদের ভাই, সুতরাং তাদের সহিত সদয় আচরণ কর। তোমাদের একার পক্ষে যে কাজ করা অসম্ভব, তাহাতে তাহাদের সাহায্য গ্রহণ কর; আবার তাহাদের একার পক্ষে যে কাজ করা অসম্ভব, তাতে তোমরাও তাদের সাহায্য করবে(আল-আদাবুল মুফরাদ, ১৯০)। পরস্পরের সাহয্য-সহযোগিতা ও কল্যাণ কামনা করাই ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। আল-কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, “ভাল ও পরহেজগারীর কাজে একে অপরকে সাহায্য করো। গুণাহ ও সীমা লংঘনের কাজে একে অপরকে সায্য করো না”(মায়েদা:২)। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা. বলেন, “তোমরা মুমিনদেরকে পরস্পরের প্রতি অনুগ্রহ, মায়া-মহব্বত ও সৌহার্দ্য প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে এক শরীরের ন্যায় দেখবে। তার কোন অংশে কষ্ট অনুভূত হলে পুরো শরীওে কষ্ট অনুভূত হয়। (বুখারী, আল- আদব)রাসুলুল্লাহ সা. অধীনস্থদের নিজেদের ভাই হিসেবে উল্লেখ করে তাদের অধিকারের ব্যাপারে শতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের উপর সাধ্যাতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দিতেও নিষেধ করেছেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, মারূর ইবনু সুওয়াদা রহ. বলেন, একবার আমি আবূ যর গিফারী রা. এর দেখা পেলাম। তার গায়ে তখন এক জোড়া কাপড় আর তার ক্রীতদাসের গায়েও(অনুরূপ) এক জোড়া কাপড় ছিল। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, একবার এক ব্যক্তিকে আমি গালি দিয়েছিলাম। সে নাবী সা. এর কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। তখন নাবী সা. আমাকে বললেন, তুমি তার মার প্রতি কটাক্ষ করে লজ্জা দিলে? তারপর তিনি বললেন, তোমাদের গোলামেরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছেন, কাজেই কারো ভাই যদি তার অধীনে থাকে তবে সে যা খায়, তা হতে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা হতে যেন পরিধান করায় এবং তাদের সাধ্যাতীত কোন কাজে বাধ্য না করে। তোমরা যদি তাদের শক্তির ঊর্ধ্বে কোন কাজ তাদের দাও তবে তাদের সহযোগিতা কর।(বুখারী, ২৫৪৫) ইসলামী সমাজে প্রতিটি ব্যক্তি এমন মর্যাদা ও অধিকার ভোগ করে যা অলংঘনীয়। ব্যক্তির সম্মান সমষ্টির সম্মানেরই অংশ এবং ব্যক্তির প্রতি কটাক্ষ ও অসদাচরণ সমষ্টির প্রতি অসদাচরণেরই অংশ। কেননা, সমাজ একটি অখ- একক এবং তার মর্যাদাও অখ-। শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম তাদের কর্মঘন্টা, কর্মপরিবেশ ও পারিশ্রমিক প্রাপ্তির নিশ্চয়তাসহ তাদের সকল অধিকার বাস্তাবায়নেরও নির্দেশনা দিয়েছে। আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তাআলা কর্ম, মালিক-শ্রমিকের সুসম্পর্ক স্থাপন ও পারিশ্রমিকের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন।এ প্রসঙ্গে হযরত মুসা আ. এর মাদয়ান নগরীতে গমনের পর তার কর্ম তৎপরতার ও পারিশ্রমিকের বিষয়ে উল্লেখ করে ইরশাদ করা হয়েছে, “অতঃপর নারীদ্বয়ের একজন লাজুকভাবে হেঁটে তার কাছে এসে বলল যে, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, যেন তিনি আপনাকে পারিশ্রমিক দিতে পারেন, আমাদের পশুগুলোকে আপনি যে পানি পান করিয়েছেন তার বিনিময়ে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।