Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঘটনা আড়াল করতেই ফাহিমকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা : বিএনপি

প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তী হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ডে নেয়া আসামি গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি
গতকাল শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ অভিযোগ করেন।
কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ফাহিমের মৃত্যু ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রিজভী আহমেদ বলেন, ফাহিমকে রিমান্ডে নিয়ে আরও কারা জড়িত সেটা উদঘাটন করা উচিত ছিল। তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া যেত। যাচাই-বাছাই করে জানা যেত এরা প্রকৃত জঙ্গি কি না। জানা যেত আর কারা কারা জড়িত। এটা জনসম্মুখে উদ্ভাসিত হতো তাদের নামগুলো জানা যেত।
তিনি বলেন, সরকার তাকে (ফাহিম) ক্রসফায়ারে হত্যা করল। হত্যা করা মানে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা। এটাকে সামনে আসতে দিল না। আমরা আগেই বলেছি, প্রতিটি সন্ত্রাসের সঙ্গে রাষ্ট্রের একটা সম্পর্ক আছে। আমাদের দলের চেয়ারপারসন বলেছেন, ‘উগ্রবাদী চক্রের সঙ্গে সরকার জড়িত।’ এই যে আজকে ঘটনাটিতে যে ঘন কুয়াশা তৈরি করেছে এর সঙ্গে সরকার জড়িত।
সম্প্রতি দেশব্যাপী পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান সম্পর্কে রিজভী বলেন, জঙ্গি দমনের নামে প্রহসনের এক চরম নাটক অনুষ্ঠিত করছে সরকারি দায়িত্বশীল লোকেরা। মামলা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে, কিন্তু কুপিয়ে হত্যাকারী প্রকৃত অপরাধীরা অধরাই থেকে যাচ্ছে। হত্যা রহস্যের কোনো কূল-কিনারাই  বের হচ্ছে না। অথচ সরকারিবাহিনী ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো গ্রাম, শহর, নগর, বন্দরে হামলা করেছে। বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা যারা গ্রেফতার হয়নি তারা দিশেহারা হয়ে প্রাণ ভয়ে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমিয়েছে।
সরকার জঙ্গি তৎপরতা দমন করতে যে নিষ্ঠুর পদ্ধতি গ্রহণ করেছে সেটিতে প্রকৃতপক্ষে জঙ্গিদের উৎপাত বন্ধ নয়; বরং সরকার যে একটা বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে সেটি এখন সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছে। তাদের সেই এজেন্ডাটা হচ্ছে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মীদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা, অভিযোগ করেন তিনি।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে শুরু করে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে সকল যন্ত্র সরকারের হাতে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, বিদেশী কুটনীতিক, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, দেশের বিভিন্ন অধিকার গ্রুপ সরকারের গণগ্রেফতারের স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এমনকি আটককৃত সন্দেহভাজন জঙ্গিরাও প্রকৃত জঙ্গি কী না এবং বছরব্যাপী চাঞ্চল্যকর খুনগুলোর সঙ্গে তারা জড়িত কী না এটা নিয়ে জনমনে সংশয় আছে। কারণ কোন খুনেরই তদন্তে এখন পর্যন্তু অগ্রগতি নেই।
বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ক্র্যাকডাউন এবং অপপ্রচার চালিয়ে দলটির সমূলে বিনাশ সাধন করার চক্রান্ত করা হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, এর আগেও নানা দেশি-বিদেশি চক্রান্তে দলটিকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। তাই চলমান দমন-পীড়নে বিএনপিকে ধ্বংস করা সরকারের শেষ প্রচেষ্টা। মূলত ভোটারবিহীন সরকারের প্রধান টার্গেট হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেই কারণেই চলমান দেশব্যাপী পুলিশি নির্যাতনের শিকার বিএনপির নেতাকর্মীরা।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী ইটভাটার মালিক মেরাজুল হক মেরাজকে এক বছর আগে হত্যার পর গড়াই নদীর বালির নিচে লাশ পুঁতে রাখা হয় উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, দুই দিন আগে তার কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ হত্যাকা-ে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা জড়িত। শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গি দমনের নামে দেশবাসীকে কঙ্কালে পরিণত করতে চাচ্ছে।
রিজভী বলেন, দেশে গণতন্ত্র অগ্রাহ্য করে জনসমর্থনহীন ক্ষমতা জবরদখলকারী সরকাররই শুধু একমুখী দৃষ্টিকোণ, উগ্র মনোভাব ও বেপরোয়া প্রকাশ ভঙ্গি দিয়েই দেশ শাসন করে। বর্তমান আওয়ামী শাসন সেই শাসনেরই প্রতিচ্ছবি। তাই জঙ্গিবাদ ও আওয়ামীবাদ যমজ দুই ভাই। কারণ এ দুই গোষ্ঠীই বন্য, ধূর্ত, হিংস্র পশুর মতো নিষ্ঠুর, স্বভাবগতভাবে ক্রুর, বেপরোয়া ও উদ্ধ্যত। শেখ হাসিনা খুনোখুনি, রক্তারক্তি পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে চায় এ জন্য যে, তার সিংহাসন পর্যন্ত কেউ  যেন পৌঁছাতে না পারে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভারতকে মাত্র ১৯২ টাকা নামমাত্র মূল্যে ট্রানজিট দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করেন, ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার নজরানা হিসেবে ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছে। মাত্র ১৯২ টাকা নামমাত্র মূল্যে ট্রানজিট দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দিয়েছে সরকার।
রিজভী অভিযোগ করেন, দেশের যান চলাচলে সড়ক-মহাসড়কে অসুবিধা থাকার পরেও ভারতকে ট্রানজিট দেয়া। এতে দেশে বিপন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে আশংকা করেন তিনি।
গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে অবিলম্বে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনেরও দাবি জানান রিজভী।
গত বৃহস্পতিবার ট্রানজিটের আওতায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে ভারত। এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দরে ট্রানজিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এর আওতায় শুক্রবার এক হাজার টন স্টিল শিট (রড) থেকে বাংলাদেশি ট্রাকে করে সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। মাশুলের বিনিময়ে এই প্রথম ট্রানজিটের আওতায় পণ্য পরিবহন করছে ভারত। এতে দেশটির প্রতি টনে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা মাশুল পরিশোধ করার কথা রয়েছে। তবে সড়ক ও নৌবন্দরের অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন না করেই ট্রানজিটের পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্রদলের দপ্ত সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘটনা আড়াল করতেই ফাহিমকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা : বিএনপি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ