পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধর্মহীন শিক্ষানীতি পাঠ্যবইয়ে নাস্তিক্যবাদ তৌহিদি জনতা রক্ত দিয়ে প্রতিহত করবে -আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী
চট্টগ্রাম ব্যুরো : হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, পাঠ্যপুস্তকে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা, ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি-২০১০ ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৬ ইসলামীপ্রিয় তৌহিদি জনতা রক্তের বিনিময়ে হলেও প্রতিহত করবে। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মহীন শিক্ষানীতি ও বিতর্কিত শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, একটি মহল সাম্প্রদায়িক উস্কানি শুরু করেছে। যারা এ এরূপ উস্কানি দিচ্ছে তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী নয়। গতকাল (শনিবার) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পাঠ্যপুস্তকে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন বাতিল, গুপ্তহত্যা, গুম, খুন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিবের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, বিতর্কিত ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসারে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে ক্রমান্বয়ে ইসলামি ভাবধারার পাঠসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার টেক্সট প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আমরা সেসবের যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ বিগত ১৬ মে স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট পেশ করেছি। কিন্তু অত্যন্ত ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে সরকার ও দেশবাসীর নিকট কিছু তথ্য তুলে ধরা জরুরি মনে করছি। কারণ, বিগত ১৩ জুন জমিয়তুল মোদার্রেছীনের ইফতার মাহফিলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘শিক্ষানীতি ধর্মবিরোধী নয়’ এরকম অসত্য কথা বলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেছে। অথচ শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রণীত প্রায় সকল শ্রেণীর পাঠ্যসূচিতে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ এখন প্রমাণিত সত্য।
দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতিসত্ত্বার বিরুদ্ধে এটা ভয়াবহ চক্রান্ত। দেশব্যাপী অভিভাবক মহলে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িতকতা ও উগ্র নাস্তিক্যবাদ উস্কে দিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারের ভিতরেই ঘাপটি মেরে থাকা বাম ও রামপন্থী একটি কুচক্রী মহল এই কাজ করেছে। স্কুল-কলেজের বর্তমান ইসলামবিচ্ছিন্ন শিক্ষাব্যবস্থাকে আইন ভিত্তিদান এবং কওমি মাদরাসাসমূহকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে সরকার প্রস্তাবিক শিক্ষা আইন-২০১৬ নামে একটি বিতর্কিত খসড়া আইন প্রকাশ করে তড়িঘড়ি পাস করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমান ইসলামবিদ্বেষী ও মুসলমানদের প্রতি বর্ণবাদী মনোভাব পোষণকারী তথাকথিত সেক্যুলার লেখকদের লেখা প্রায় প্রত্যেক শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত গল্প ও কবিতার সংখ্যা সর্বমোট ১৯৩টি। এর মধ্যে হিন্দু এবং উগ্র ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের লেখার সংখ্যা হলো ১৩৭টি। এমনকি অবশিষ্ট লেখাগুলোর মধ্যেও ইসলামী ভাবধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কোনো লেখা নেই।
একটি সংঘবদ্ধ গুপ্তঘাতকচক্র দেশে সিরিজ টার্গেট কিলিং-এ মেতে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক হত্যাকা-ের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। সর্বশেষ হত্যাকা-ে দেশের সংঘ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কয়েকজন লোক যুক্ত হয়েছে। পাবনার অনুকূল চন্দ্র ঠাকুর সেবাশ্রমে নিত্যরঞ্জন পা-ে নিহত হওয়ার পর ভারতীয় হাইকমিশননের কূটনীতিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরপরেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত এবং অভিনেতা পীযুষ বন্দোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে পুলিশ কর্মকর্তা এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু প্রকাশ্যে দিবালোকে রাজপথে সন্ত্রাসীদের হাতে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। গত কয়েক বছরে দেশে যেসব গুম, খুন, নাশকতা ও হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে তাতে দেশবাসী শঙ্কিত ও আতঙ্কিত। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অধীনে একজন মানুষও আঁততায়ী, সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিনা বিচারে নিহত হোক, এটা কোন বিবেকবান মানুষ কামনা করে না। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে এসব হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা ও জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা, কৃষ্টি-কালচার, সভ্যতা সংস্কৃতি সুরক্ষায় সরকারের প্রতি ১০ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ ধর্মহীন শিক্ষানীতি-২০১০ এবং বিতর্কিত শিক্ষাআইন-২০১৬ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, নূরানী-মক্তব, হাফেজি মাদরাসা ও কওমী মাদরাসা নিবন্ধনের আওতাভুক্ত রাখতে হবে, পাঠ্যপুস্তকে পরিকল্পিতভাবে যুক্ত করা ইসলামবিদ্বেষী ও হিন্দুত্ববাদী রচনা, গল্প ও কবিতা বাদ দিতে হবে এব বাদ দেয়া ইসলামী ভাবধারার রচনা, গল্প ও কবিতা পুনঃস্থাপন করতে হবে, শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষার প্রাধান্য এবং দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে, হক্কানী উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে ইসলাম শিক্ষার পাঠ্যবই রচনা করে পাঠ্যসূচিভুক্ত করতে হবে, পাঠ্যপুস্তক রচনা ও সম্পাদনায় বিশেষজ্ঞ আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, আধুনিক ও যুগোপযোগী করার নামে কওমী মাদরাসা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে, গুপ্তহত্যা, গুম, খুন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, লিফলেট, প্রচারপত্র বিলি, বয়ান, আলোচনা এবং ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও ওলামায়ে কেরামের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি, আগামী ঈদের পর দেশের শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তীতে কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মইনুদ্দিন রুহী, হেফাজত আমিরের প্রেসসচিব মাওলানা মনির আহমদ, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা হাকীম আবু তাহের আরবী, মওলানা ইউনুস, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা আবু রায়হান, মাওলানা কুতুবুদ্দিন, মাওলানা ফরিদুল হক, মাওলানা মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।