পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : এবার কুশিয়ারা নদী খননের বিনিময়ে ফেনী নদীর পানি ভাগাভাগিকে শর্ত হিসাবে জুড়ে দিয়েছে ভারত। শর্তে রাজি না হওয়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধার মুখে আটকে আছে সিলেটের আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজ। দীর্ঘ পনেরো বছরেও এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে ভারত ফেনী নদীর পানির সাথে তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগিকে শর্ত হিসাবে জুড়ে দিয়েছিল। ওই সময় তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তির বিনিময়ে ভারত ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য ফেনী নদী থেকে প্রায় দুই কিউসেক পানি চায়। বাংলাদেশ ভারতের এমন প্রস্তাবে সম্মতি দেয়ার পরও তিস্তা চুক্তি আটকে দিয়েছিল ভারত। ভারতের পানি আগ্রাসনের অংশ হিসাবে সেই ফেনী নদীর পানির বিষয়টিকেই এবার কুশিয়ারার সাথে জুড়ে দেয়া হল বলে যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা যায়।
এদিকে বিএসএফের বাধার কারণে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রতি বছরই আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। সেইসাথে বাড়ছে এই প্রকল্পের ব্যয়। চলতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহে আবারও সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীন কুশিয়ারা নদীর আড়াই কিলোমিটার এলাকা খননকে কেন্দ্র করে একাধিকবার জকিগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফ ও বিজিবি’র মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। দু-একবার গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। হয়েছে দু’দেশের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক। কিন্ত ভারত তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরেনি।
সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের উদ্দেশ্য
যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে কুশিয়ারা নদী খননের উদ্যোগ নিলে ওই সময়ই প্রথমবাবের মত বিএসএফের বাধার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। পরবর্তীতে ২০০১ সালে এখানকার সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য সিলেটের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা। যার মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ সংশ্লিষ্ট ছয় উপজেলার ১২ লাখ কৃষককে নানাভাবে উপকৃত করা। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বার্ষিক বর্ধিত কৃষি উৎপাদন হবে ৮৬ হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন।
জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, কানাইঘাট, সিলেট সদর বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ এই পাঁচ উপজেলার কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে মোট ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর ও নীট চাষযোগ্য ৩৫ হাজার ৬শ’ হেক্টর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ১০ হাজার ৬শ’ হেক্টর এলাকাকে সেচ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গৃহীত হয়। ২০০১-০২ অর্থবছরে গৃহীত প্রকল্পটি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তখন এর ব্যয় ধরা হয় ১১১ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।
প্রকল্পের আওতায় রয়েছে সুরমা নদীর বাঁ তীর এবং কুশিয়ারা নদীর ডান তীরের ১৫৫ কি.মি. বাঁধ পুনর্নির্মাণ, ২০ কি.মি. নতুন বাঁধ নির্মাণ ও জকিগঞ্জ থেকে কুশিয়ারার উজানে নদী খনন। এছাড়া রয়েছে ৫৬ কি.মি. দৈর্ঘ্য পানি নিষ্কাশন ও ১৭৩ কি.মি. সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ৫টি পানি নিষ্কাশন স্লুইস, দুটি ব্রিজ, একটি পাম্প স্টেশন এবং ৮১২টি সেচ কাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যাচার
কুশিয়ারা নদী খনন কাজে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বারবার বাধার সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে ভারতের একাধিক মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে। এসব খবরের মূল উদ্দেশ্যই আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্প নিয়ে মিথ্যাচার করা।
এই প্রকল্প নিয়ে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সংবাদ ছিলÑবিজেপি সরকারে এলে সীমান্ত সুরক্ষায় বাড়তি জোর দেওয়া হবে বলে নির্বাচনী ইস্তাহারে বলা হয়েছিল। করিমগঞ্জের কুশিয়ারা নদী-সীমান্ত পরিদর্শন করেন বিএসএফের অতিরিক্ত মহানির্দেশক এ পি মাহেশ্বরী। তিনি করিমগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সাড়ে তিন কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্তও ঘুরে দেখেন। সেইসঙ্গে সুতারকান্দি স্থলসীমান্তও ঘুরে দেখেছেন। করিমগঞ্জ শহরের সরিষা থেকে দেওপুর পর্যন্ত নদী সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানো এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, এই উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটছে। করিমগঞ্জের নদী সীমান্তে বাংলাদেশ কাজ করছে। বিএসএফের বাধার কারণে বাংলাদেশ এসব কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে করিমগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া বসাতে গিয়ে স্থানীয় মানুষের প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে ১৫০ মিটারের ছাড় দিতে গেলে করিমগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ধর্মস্থান, জেলা দায়রা জজের আদালত, সন্তর বাজার প্রভৃতি এলাকা বেড়ার বাইরে চলে যাবে।
আর ভারতের আসাম থেকে প্রকাশিত অহমিয় ভাষার দৈনিক ‘অসমীয়া প্রতিদিন’-এর সংবাদ হচ্ছেÑবাংলাদেশ কুশিয়ারা নদী থেকে অতিরিক্ত পানি নিতে নদী খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নদীটিতে এখন খনন কাজ চলছে। এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের খড়াপীড়িত সিলেট অঞ্চলের মানুষদের জন্য নদী খনন করে কৃত্রিম উপায়ে জলধারা সৃষ্টি করে কুশিয়ারা নদী থেকে অতিরিক্ত পানি নেয়ার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ। আর এই পরিকল্পনায় যদি বাংলাদেশ সফল হয় তাহলে আসামের বারাক উপত্যকা ধ্বংসের মুখে পড়বে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কুশিয়ারা নদী খনন করে অতিরিক্ত পানি নিতে ১৯৯১ সালে একবার ‘ষড়যন্ত্র’ করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সে সময় ভারত সরকারের আপত্তির কারণে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কুশিয়ারা নদীতে বাংলাদেশের খনন কাজের বিষয়ে উদ্বিগ্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সীমান্তবর্তী করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠির সঙ্গে নদী খননের কিছু ছবিও দিয়েছে বিএসএফ। কিন্তু স্থানীয় জেলা প্রশাসন বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো কর্মকর্তাই বিএসএফের উদ্বিগ্নের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না। এক্ষেত্রে আশংকা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, কুশিয়ারা নদীতে খনন কাজে সফল হতে পারলে বাংলাদেশ এই নদীটি থেকে সব পানি নিয়ে নেবে। যার ফলে খড়ার কবলে পড়বে আসামের বারাক উপত্যাকার তিনটি জেলা করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও কাছাড়। এ জেলাগুলোর পানির একমাত্র উৎস হলো এই কুশিয়ারা নদী।
পানি বিশেষজ্ঞদের অভিমত
দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত চাতুরির মাধ্যমে কুশিয়ারা নদী খনন কাজ আটকে দিয়েছে। এতে করে ১৫০ কোটি টাকার পুরো প্রকল্পটি ঝুলে আছে গত পনেরো বছর যাবৎ। তারা জানান, ভারত যেখানে বারাক নদীর উজানে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ করছে, সেখানে কুশিয়ারা নদীর নাব্য বাড়াতে আড়াই কিলোমিটার এলাকা খনন করলে ভারতের করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও কাছাড় কীভাবে পানিশূন্য হবে, তা বোধগম্য নয়।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, কুশিয়ারা নদীর খনন কাজে বাধা দেয়ার পেছনে ভারতের যে উদ্দেশ্য ছিল তা এখন স্পষ্ট। ইতোমধ্যেই ভারত এই নদী খননের শর্ত হিসাবে ফেনী নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়টি জুড়ে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর কবির ইনকিলাবকে বলেন, আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজ নিয়ে বিএসএফের সাথে যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে তা নিরসনে আলোচনা চলছে।
যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন জানান, কুশিয়ারা নদী খনন নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। এ নিয়ে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যেও বৈঠক হয়। আমরা বারবার বলেছি, এই খনন শুধু নদীর ভরাট হওয়া তলদেশ থেকে পলি সরানোর জন্য। এতে করে নদীতে কিছুটা হলেও নাব্য থাকবে। শুষ্ক মৌসুমে এই নদী এমনিতেই শুকিয়ে যায়। তাছাড়া বাংলাদেশ এই নদীর পানি কীভাবে সরিয়ে নেবে তা বোধগম্য নয়। আমরা এ বিষয়টি ভারতকে অবহিত করেছি।
আর পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, ভারতের সাথে আলোচনার মাধ্যমেই আমরা সকল সমস্যার সমাধান করতে চাই। তিনি জানান, বাংলাদেশের স্বার্থহানি হয় এমন কোনো শর্ত আমরা মেনে নেব না। সেটা ভারতই হোক কিংবা অন্য যে কোনো দেশ হোক।
কুশিয়ারার ভাঙনে লাভবান ভারত
এদিকে কুশিয়ারা নদীতে ভাঙন প্রতিরোধ কাজ করতে না পারায় প্রতিবছরই এই নদী ভাঙছে। এতে করে মূল্যবান ভূমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ভেঙে যাওয়া ভূমি গেজে উঠছে ওপারে ভারতীয় অংশে। এতে করে লাভবান হচ্ছে ভারত। পরিকল্পিতভাবে কুশিয়ারা নদীর উজানে বাঁধ, গ্রোয়েন ইটভাটা নির্মাণ করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে সিলেটের মূল্যবান এসব ভূমি গ্রাস করা হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কুশিয়ারা ও সুরমার ভাঙনেই বাংলাদেশ প্রায় ৪ হাজার একর ভূমি হারিয়েছে। ভারতের দখলে চলে যাওয়া এসব ভূমি এখন শুধু কাগজে-কলমেই বাংলাদেশের। কার্যত ভারতীয় নাগরিকরাই এতে চাষবাস করছে।
বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি মূল্যবান ভূমিতে স্থায়ীভাবে দখল নিতে ভারত কোনো কোনো এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া পর্যন্ত দিয়েছে। জানা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় বিনা বাধাতেই কাঁটাতারের এসব বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। বেড়ার ভেতরে বাংলাদেশের জমির ভেতর নির্মাণ করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এসব টাওয়ারের ওপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের দিকে ভারী অস্ত্র তাক করে বসে থাকে। আর সিলেটের জকিগঞ্জে বাংলাদেশের জমিতে ভারত শুধু কাঁটাতারের বেড়া দিয়েই বসে থাকেনি। নির্মাণ করেছে ভারী যান চলাচলের জন্য কংক্রিটের রাস্তা।
ওপারে জেগে ওঠা মূল্যবান এসব ভূমি ফেরত আনার ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কূটনৈতিকভাবেও জোরালো কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। আর যৌথ নদী কমিশনের পক্ষ থেকে যখনই এসব বিষয় তোলা হয়েছে, তখনই নানা অজুহাতে তা পাশ কাটিয়ে উল্টো ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে ভারত। ভারত এই চুক্তিটি বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখানোর মূল কারণ হচ্ছে, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে নদীর মধ্য স্রোত বরাবর সীমানা ভাগাভাগির খেসারত দিতে যেয়ে বাংলাদেশকে হাজার হাজার একর ভূমি হারাতে হবে। এর ভয়াবহতা আঁচ করে যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগেই ভারতকে জানানো হয়েছে, ১৯৭৪ সালের চুক্তিটি এখন অবাস্তব ও অযৌক্তিক। কারণ, সীমান্ত নদীগুলো এখন আর সেই জায়গায় নেই। গত ৪০ বছরে সকল সীমান্ত নদীই এখন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করেছে।
যদি নদীর মধ্য রেখা বরাবরই সীমানা নির্ধারণ করতে হয়, তাহলে চুক্তির সময় নদী যে স্থানে ছিল সেখানটা ভিত্তি ধরেই সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। সীমান্ত নদীর মধ্য স্রোত বরাবর সীমানা চিহ্নিত করনের আর একটি অন্তরায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে খুব জোড়ালোভাবেই তুলে ধরা হয়েছিল যৌথ নদী কমিশনের ৩৬তম বৈঠকে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল-সীমান্ত নদীর সীমানা ধরা হবে কোন সময়টাকে ভিত্তি ধরে? এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জানায়, সীমান্ত নদীগুলো শুষ্ক মৌসুমে এক জায়গায় থাকে, আর বর্ষা মৌসুমে আরেক জায়গায় চলে যায়। কাজেই ভাগাভাগির প্রশ্ন আসলে বর্ষা মৌসুমকেই ভিত্তি ধরতে হবে। ভারত বাংলাদেশের এই প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি।
সিলেটের যেসব এলাকা ভারতের দখলে
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের নথিপত্রে থাকা বাংলাদেশের ভূখ- পুরো অলিগড় গ্রামটাই এখন ভারতের দখলে। শুধু অলিগড় গ্রামই নয়-মাজরগাঁও, উজিরপুর, অমলশিদ, গজুকাটা, লক্ষ্মীবাজার, সুলতানপুর, মানিকপুর, পূর্ব জামচর, সেনাপতির চক, ভালুয়া, উত্তরকূল, মুন্সিবায়ার, দিঘালি, ভূইয়ামুড়া, শুক্রাকান্দি, লোহারমহল, হায়দরাবন্দ সহ ২৯টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা ভেঙ্গে ওপারে জেগে উঠেছে। ভারত বাংলাদেশের এসব ভূখন্ড কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে দখলে নেয়ারও সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। ওপারে জেগে উঠা বাংলাদেশের এসব ভূখন্ডে স্থানীয় অধিবাসীরা যখনও যাওয়ার চেষ্টা করে তখনই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেছে।
ভারতের আসাম রাজ্য হতে বারাক নদী সিলেট জেলার জকিগঞ্জের অমলশিদ নামক স্থানে এসে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সুরমা নদী নামে ডান দিক দিয়ে এবং কুশিয়ারা নদী নামে বাঁ দিক দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কুশিয়ারা নদীর উৎসমুখ অমলশিদ হতে গজুকাটা পর্যন্ত সাড়ে ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত অভিন্ন সীমান্ত নদী হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাঝখানে টুকেরগাঁওয়ে দেড় কিলোমিটার ভারতীয় অংশে প্রবাহিত হচ্ছে বলে ভারতের দাবি। বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারত কুশিয়ারা নদীর ওই দেড় কিলোমিটার ব্যবহার করতে দেয়া না।
ফলে স্থানীয় অধিবাসীরা অন্তত ১৫ কিলোমিটার বাঁক ঘুরে সড়ক পথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, টুকেরগাঁও অংশ বাংলাদেশের হলেও ভারত দীর্ঘদিন ধরেই তাদের দখলে রেখেছে। তারা জানান, বৃটিশের ভূমি নকশা অনুযায়ী এটি বাংলাদেশের হলেও ভারত এর নিয়ন্ত্রন ছাড়তে নারাজ। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর থেকেও ভারতের কাছে এ ব্যাপারে আপত্তি জানানো হয়েছে। কিন্ত ভারত এই আপত্তি আমলে নেয়নি।
অপরদিকে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুরমা নদীর অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে সাড়ে ২৬ কিলোমিটার। দু’দেশের মধ্যে সুরমা নদীর সীমান্ত চিহ্নিত করার পরও ভারত এই নদীর ভাঙনে ওপারে জেগে ওঠা ভূমি বাংলাদেশকে ফেরত দিচ্ছে না।
ফেনী নদীর পানি ও ভারতের কূটনীতি
বাংলাদেশের সাথে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই ভারত দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম মহকুমার ১৭টি সীমান্ত পয়েন্টে নোম্যান্সল্যান্ডে ৩০টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎচালিত লো লিফট পাম্প মেশিন স্থাপন করে ফেনী নদী থেকে প্রায় ৫০ কিউসেক পানি তুলে নিচ্ছে। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে স্থাপিত পাম্প হাউজের মাধ্যমে একতরফা পানি তুলে নেয়ার ফলে এই শুষ্ক মৌসুমেও পানি শুকিয়ে ফেনী নদী পরিণত হয়েছিল ধুধু বালুচরে। মৃতপ্রায় এ নদী থেকে ভারত চুক্তির মাধ্যমে আরো ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি তুলে নেয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে সম্মতি দেয়া হয়েছে। তবে ভারত তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে দেয়ায় এই নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের সাথে কোন চুক্তিতে উপনীত হয়নি।
এদিকে ফেনী নদী থেকে এভাবে পানি প্রত্যাহারের কারণে মীরসরাই ও সোনাগাজী এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প ‘মুহুরি প্রজেক্ট’ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। কারণ মুহুরি সেচ প্রকল্পের প্রায় ৭০ ভাগ পানির উৎসই হচ্ছে ফেনী নদী। ‘আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে যেকোন স্থায়ী অবকোঠামো নির্মাণ অবৈধ। অথচ ১৯৮২ থেকে ২০০২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ফেনী নদীর পানি তুলে নিতে এ পাম্প হাউজগুলো স্থাপন করেছে ভারত। ২০০৩ সালের আগস্টে বাগানবাজারের সীমান্তবর্তী যতীরচরের বিপরীতে সাবরুমের ছোটখীল নামক স্থানে নদীর জলসীমা থেকে মাত্র ৩০ গজের মধ্যে নোম্যান্সল্যান্ডে বিএসএফের প্রহরায় একটি পাম্প হাউজ নির্মাণ করে। সীমান্ত আইন পরিপন্থী এ নির্মাণ কাজে তৎকালীন বিডিআর বাধা দিলে বিএসএফ তাদের ওপর গুলিও চালিয়েছিল।
এদিকে পাউবোর এক কর্মকর্তা জানান, ভারত ফেনী নদীর পানি প্রবাহের মাঝখানে ৫ মিটার ডায়া এবং ২০ মিটার গভীর পাকা কূপ নির্মাণ করে সিসি পাইপ বসিয়ে পাম্প মেশিনের সাহায্যে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি তুলে নিতে চাইলেও বাংলাদেশ এ পদ্ধতিতে পানি দিতে আপত্তি জানায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যৌথ নদী কমিশনের সাবেক সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের বিষয়টি ছিল শর্তযুক্ত। যেহেতু তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি, তাই ফেনী নদী থেকে পানি নেয়ার বিষয়টিও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।