দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন ঃ পরামর্শ ভিত্তিক কাজে কি আল্লাহ খুশি থাকেন ?
যে কোনো একটি ভাল কাজ শুরু করার পূর্বে পরামর্শ করে নিলে, ঐ কাজের সাফল্যে নিশ্চিত। কারণ পারস্পরিক পরামর্শ কাজের গতি বৃদ্ধি করে। আশপাশের সকলের অংশ গ্রহন নিশ্চিত করে। পরামর্শ ভিত্তিক কাজ করলে ভ‚ল-ক্রটি কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরামর্শ করে কাজ করলে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের সকল সহকর্মী ও সহযোগীরা খুশি থাকেন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে মুমিনদেরকে পরামর্শ করে কাজ করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্লাহর ওপর তায়াক্কুল করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তায়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান:১৫৯)।
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে পরামর্শের গুরুত্ব অপরীসিম। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা পরামর্শ ভিত্তিক কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাই একে অপরের সাথে পরামর্শ করার অর্থই হলো আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করলে সাফল্যে আসবেই। ইহাতে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই। এককভাবে চিন্তা করে কাজ করলে এতে ভ‚ল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়া প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা চিন্তা, মত, পথ ও দর্শন রয়েছে। তাই যে কোন কাজের শুরুতে পরামর্শ করে নিলে, ঐ কাজটি আরো বেশি সমৃদ্ধশালী হয়। এরশাদ হয়েছে, ‘এদের অধিকাংশ গোপন সলা-পরার্শের ভেতরেই কোন কল্যাণ নিহিত নেই, তবে যদি কেউ কাউকে কোন দান-খয়রাত, সৎকাজ ও অন্য মানুষের মাঝে সংশোধন আনয়নের আদেশ দেয় তা অন্য কথা; আর আল্লাহ পাকের সন্তুুষ্টি অর্জনের লক্ষে যদি কেউ এসব কাজ করে তাহলে অতি শীঘ্রই আমি তাকে মহাপুরস্কার দেব।’ (সূরা নিসা:১১৪)। ‘আর যারা তাদের প্রভ‚র ডাকে সাড়া দেয়, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, যাদের কাজকর্মগুলো পারস্পরিক পরামর্শই হয় তাদের (কর্ম) পন্থা, আমি তাদের যে রিজিক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।’(সূরা শুরা:৩৮)।
কাজের শুরুতে কিংবা কাজের ফাকে পরামর্শ করে নিলে, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়। যে কোন কাজে পরামর্শ করার মাধ্যমে মুমিনের উদারতা ও বিনয়ের প্রকাশ পায়। পরামর্শ নেয়ার মাধ্যমে অপরের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শণ করা হয়। কারো সাথে সলা-পরামর্শ করলে ঐ ব্যক্তি নিজেকে সস্মানিতবোধ করে। ঐ কাজের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে দাম্ভিক ও অহংকারী ব্যক্তি কখনো অন্যের সাথে পরামর্শ করে না। অন্যকারো মতামতকে মূল্যায়নও করে না। দাম্ভিক ব্যক্তি স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন বিধায় সকলে মনে মনে থেকে ঘৃণা করে। এছাড়া দাম্ভিক ব্যক্তিকে সমাজের কেউ মন থেকে পছন্দ করে না। আল্লাহ তায়ালাও দাম্ভিক ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না। এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে।’ (সূরা নিসা:৩৬)।
হাদিস শরীফেও পরামর্শ ভিত্তিক কাজের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। হযরত রাসূল (সা) বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাহাবাদের পরামর্শ করেছেন। হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি এস্তেখারা করল, সে কোনো কাজে ব্যর্থ হবে না, যে পরামর্শ করল, সে লজ্জিত হবে না, আর যে মধ্যমপন্থা অবলন্বন করল, সে দারিদ্রে নিমজ্জিত হবে না।’ (আল-মুজামুস সগীর)। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বর্ণনা করেন, ‘হযরত রাসূল (সা) লোকদের সামনে খুতবা দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর তিনি বললেন, যারা আমার পরিবারের কুৎসা রটনা করে বেড়াচ্ছে, তাদের সম্পর্কে তোমাদের কাছে আমি পরামর্শ চাচ্ছি। আমি কখনও তাদের কোনোরূপ মন্দ কিছু দেখিনি।’ (বোখারি)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেন ‘যখন তোমরা তিনজন এক সঙ্গে থাক, তখন একজনকে বাদ দিয়ে দুজন কোনো সলা-পরামর্শ করবে না যে পর্যন্ত না তোমরা অনেক লোকের মধ্যে মিশে যাও। কারণ এভাবে সলা-পরামর্শ করাটা তাকে দুঃখ দিতে পারে।’ (মুসলিম)। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক । আমীন
উত্তর দিচ্ছেন ঃ ফিরোজ আহমাদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।