পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারেক সালমান : জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের পরেও দেশজুড়ে একটার পর একটা গুপ্ত হত্যাকা-ের ঘটনায় বিব্রত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হত্যাকা-ে জড়িত জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের দমনে দেশজুড়ে চলছে গণগ্রেফতার। এসব হত্যাকা- প্রতিরোধে মাঠে নামছে ১৪ দলীয় জোট, নাগরিক সমাজ-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সকল শ্রেণী-পেশার সাধারণ মানুষ। এরপরও থামছে না হত্যাকা-। আলোচনা-সমালোচনায় মুখর মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল। চিন্তিত সাধারণ মানুষও। বিশেষ করে প্রতিটি হত্যাকা-ের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা বিশেষ গোষ্ঠীর দায় স্বীকার নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের প্রকৃত পরিচয় নিয়ে। এসব ঘটনার পেছনে আসলেই কি উগ্রপন্থী গোষ্ঠী, নাকি দেশের কোনো চক্র জড়িতÑ নানাজনে ঘুরপাক খাচ্ছে সে প্রশ্নও।
এদিকে, সরকারের কঠোর অবস্থানের পরও একের পর এক এমন পরিকল্পিত গুপ্তহত্যাকা- নানা মহলে উঁকি দিচ্ছে নানা প্রশ্ন। কারও কারও মতে, দেশে অস্থিরতা তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে এবং সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলতেই এমনটি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এ চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগসাজশ রয়েছে কি নাÑ সে কথাও বলছেন কেউ কেউ। মহলগুলোর দাবি, বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে এটি এক ধরনের ষড়যন্ত্র। এর মধ্য দিয়ে দেশকে জঙ্গিদের ঘাঁটি বানানোর নামে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমর্যাদা নষ্ট করার একটা ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। দেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বিভিন্ন সময় সংঘটিত বিভিন্ন গুপ্তহত্যার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে এমন আভাস দিয়েছেন।
অবশ্য দেশে চলমান গুপ্তহত্যার বিষয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, যারা পুলিশের পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের পাই পাই করে হিসাব নেয়া হবে। এ সময় তিনি সব ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, যারা প্রকাশ্যে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন তারাই এখন কৌশল বদলে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী’ শ্লোগান নিয়ে যারা মানুষ হত্যাকে উসকে দেন, বর্তমানের গুপ্তহত্যা তাদের কাজ। দেশের অগ্রযাত্রা রুখতেই এই নীলনকশা। এ যাবৎ যারাই জঙ্গি তৎপরতা চালিয়েছে তাদের সঙ্গে দুটি রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার এসব ঘটনার প্রতিরোধে জনমত গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। সরকার মনে করে এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। এ নিয়ে যাতে ভিন্নপক্ষ কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে সে লক্ষ্যে মাঠে নামছে বিভিন্ন সংগঠন। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকার সমর্থক কয়েকটি সংগঠন সম্প্রতি রাজধানীতে কয়েকটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সমাবেশে তারা সাম্প্রতিক হত্যাকা-ের জন্য পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে দায়ী করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা আর সাম্প্রতিক হত্যাকা-গুলো একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা। গত সপ্তাহের বুধবার সকালে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ-ওলামালীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন এসব কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এছাড়াও গুপ্ত হত্যা ও জঙ্গি দমনে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ এসব কর্মসূচির বিষয়ে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিএনপি-জামায়াত চক্রান্ত করছে। এই মুহূর্তে বড় সমস্যা হচ্ছে জঙ্গিবাদ। আগুন সন্ত্রাস-পেট্রোলবোমা আর গুপ্তহত্যা যাই বলেন, তার উৎসস্থল একটাই। সেটা জামায়াত-বিএনপি। তারা সরকার উৎখাতে ব্যর্থ হয়ে এখন গুপ্তহত্যা করছে। ছাত্রলীগ এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবসময় মাঠে ছিল, আগামীতেও রাজপথে থেকে তাদের মোকাবিলা করবে। যেখানেই নাশকতার চেষ্টা করবে সেখানেই দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
জানা গেছে, সম্প্রতি চলমান পরিকল্পিত হত্যাকা-ের ফলে সরকার কিছুটা হলেও বিব্রত অবস্থায় পড়েছে। তবে এসব অপরাধ দমনে সরকারের শক্ত অবস্থান সরকারের প্রতি মানুষের এক ধরনের আস্থারও জন্ম দিয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজনকে আটক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘কথিত’ বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি সউদী আরব থেকে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ‘কেউ রেহাই পাবে না’ বলে ঘোষণাও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে জঙ্গি দমনে সরকার আরও কঠোর অবস্থানে যাবে বলেই মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে ও সরকারকে বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলতে সারা দেশে গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। সরকারের ওপর অনাস্থা আনতে ধর্মীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। ঘাতকরা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাভিত্তিক হত্যাকা- চালাচ্ছে।
দেশের দুটি দল এসব হত্যাকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেÑ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আজাদ চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন কর্মকা-ে এটি স্পষ্ট যে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের ওপর হামলার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা দৃশ্যমান। পাশাপাশি বিএনপি সে দলের সঙ্গে জোট অব্যাহত থাকায় তাদের ওপরও এর দায়ভার বর্তায়। বিএনপি সরাসরি এসব নৃশংসমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
দেশে আইএসের সদস্য রয়েছে, নতুবা জঙ্গিবাদী ঘটনার পরক্ষণেই আমেরিকায় অবস্থিত আইএসের ওয়েবসাইটে তার ব্যাখ্যা বা দায়ভার স্বীকার করা সম্ভব হতো না। এসব কারণে শুধু সরকারের ওপর নয় রাষ্ট্র ও অর্থনীতির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষাবিদ। এদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারকাজ শুরু করার দাবি জানান তিনি। এসব গুপ্তহত্যা ও চক্রান্তের বিপরীতে জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পর গত সোমবার রাত থেকে এ অভিযান শুরু হয়। এর মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যদের নির্মূল করে দিতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উগ্রপন্থীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ তারা। এরই মধ্যে অভিযানে সারাদেশ থেকে প্রায় ১৬ হাজার বিভিন্ন শ্রেণীর অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা ও রাজশাহীতে জেএমবির তিন জঙ্গি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এর আগে ঢাকা ও গাজীপুরে পৃথক অভিযানে পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অন্তত পাঁচ সন্দেহভাজন উগ্রপন্থী নিহত হয়েছিল। এ অভিযানে উত্তরাঞ্চলসহ জঙ্গিপ্রবণ জেলাগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা এগুলো প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছি। গ্রামে গ্রাম-পুলিশ, শহরে পুলিশ ছাড়াও কমিউনিটি পুলিশ প্রতিরোধ করবে। এ ছাড়া সামাজিক আন্দোলনেরও ডাক দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক নেতারাও তাদের বক্তব্যে প্রতিরোধের ডাক দিচ্ছেন। সর্বদলীয় এবং সর্বধর্মীয় ঐক্যের মাধ্যমেই প্রতিরোধ করা হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, এদেশে সংঘটিত সমস্ত হত্যাকা-ের বিচার করা হবে। গুপ্ত হত্যায় যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, জ্বালাও পোড়াও সন্ত্রাসী খেলায় ব্যর্থ হয়ে খালেদা জিয়া আজ গুপ্ত হত্যায় লিপ্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশবাসীকে শেখ হাসিনার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে বললেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।