দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
সুফিবাদের পরিভাষাগত ব্যাখ্যা
১. আত্ম তত্ত¡, আত্মশুদ্ধি, আত্ম সংশোধন, আত্ম সংযম ও আত্ম সাধনার নাম সুফিবাদ।
২. রাসূল (সাঃ) এর জ্ঞানের উত্তরাধিকারী সুফি ত্বরিকাসমূহের প্রতিষ্ঠাতা হযরত আলী (আঃ) বলেন, যে নিজেকে চিনেছে, অনন্তর সে তার প্রভুকে চিনেছে, এই চিনা জানার নাম সুফিবাদ।
৩. সুফিবাদ একমাত্র পথ ও পন্থা। যার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত আদর্শ, শেষ লক্ষ্য ও আল্লাহ্্র জ্ঞানে ও মহিমায় পৌঁছাতে পারে।
৪. আল্লাহ্্র স্বভাবে আল্লাহ্্র প্রভাবে পরিচালিত হওয়ার নাম ‘সুফিবাদ’।
৫. সারা সৃষ্টিজগত যখন কোন মানুষের চোখে আল্লাহ্কে জানার ও বোঝার জন্য পাঠক্রম বা ঝুষষধনঁং হয়ে উঠে, তখন তা সুফিবাদ।
একজন সুফি পূর্ণ মানব (চবৎভবপঃ গধহ) যখন পূর্ণ মানবে পরিণত হন তখন তিনি ভ্রমণ করেন আল্লাহ্্র সাথেও আল্লাহ্্র মধ্যেই। তিনি আরোহন করেন স্বর্গে। আবার অবতরণ করেন মর্ত্যে তবে আল্লাহ্্র সাথে। এখানেই একজন পূর্ণ মানব বা সুফির সার্থকতা। মহাকবি ইকবাল বলেন, ঋষবব ঃড় এড়ফ ধহফ ঝঃৎবহমঃযবহবফ নু এড়ফ ধহফ ৎবঃঁৎহ ঃড় ঃযুংবষভ. এই সময় সুফিগণ আল্লাহ্্তেই বিলীন থাকেন। এটি একটি মহাক্ষণ। যে ক্ষণটিতে আমরা ইসলামের প্রথম যুদ্ধে বদর প্রান্তে মহা নবীজীর (সাঃ) মধ্যে লক্ষ্য করলাম। “বদর যুদ্ধে তোমরা তাদের বধ করোনি, আল্লাহ্ই তাদের তা করেছেন এবং তুমি যখন (কাকঁর) নিক্ষেপ করেছিলে, তুমি নিক্ষেপ করোনি, আল্লাহ্্ নিক্ষেপ করেছিলেন (সূরা আনফল-৮: ১৭)।
“যাহারা তোমার হাতে বায়আত করে তাহারা তো আল্লাহ্্র হাতে বায়আত করে। আল্লাহ্্র হাত তাহাদের হাতের উপর, অতঃপর যে উহা ভঙ্গ করে, উহা ভঙ্গ করিবার পরিণাম তাহারই এবং যে আল্লাহ্্র সহিত অঙ্গীকারপূর্ণ করে তিনি অব্যশই তাহাকে মহা পুরুস্কার দিবেন (সূরা ফাতাহ্ ২:১০)।
এই পর্যায়ে সুফিবর হযরত মনসুর হাল্লাজ বলেছেন, ‘আনাল হক’ আমিই মহা সত্য। আরো অনেক সুফ্ িএরূপ কথা বলেছেন। অথচ আব্বাসীয় খলিফা মুক্ততাদির বিল্লাহ্্ (৯০৮-৯৩২) এর আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কথিত এক শ্রেণির আলেম এক শ্রেণির ফতোয়া অনুযায়ী হযরত মনসুর হাল্লাজকে (রহঃ) ধর্মদ্রোহী হিসেবে অকথ্য নির্যাতনপূর্বক শহীদ করা হয় (৯২২ খৃঃ)।
প্রসঙ্গত বলা যায় যে, এভাবে উমাইয়া আব্বাসীয় শহীদ রাজ বংশের খিলাফতের তল্পীবাহক এক শ্রেণীর আলেম পবিত্র কুরআনের বিকৃত ব্যাখ্যা, জাল হাদিস ও মিথ্যা ইতিহাসের মাধ্যমে ইসলামের নামে এক ধরনের শরিয়ত প্রণয়ন করেন। যা আজ পর্যন্ত মুসলিম সমাজে চালু আছে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ ইসলামকে‘এজীদী ইসলাম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সুফিবাদ বনাম শরিয়ত
পবিত্র কুরআনে স্রষ্টার সাথে বান্দার মহা মিলনের বিষয়টি কোন রূপ রূপক বা আভাস ইঙ্গিতে নয় বরং; দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লিখিত থাকা সত্তে¡ও এই সম্পর্কের দাবীদার একজন মহান আল্লাহ্্র অলিকে তথাকথিত শরিয়তের রক্ষাকারী হিসাবে কাজীর ফতোয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় হত্যায় (ঔঁফরপরধষ গঁৎফবৎ) প্রমাণিত হয় যে, কুরআন ও বিদ্যমান শরিয়ত এক নয়, বরং কুরআনে কোন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত থাকা সত্তে¡ও ফকীহ্্দের বানানো ইসলামী শরিয়ত কুরআনের উপরে অগ্রগণ্য বা সর্বজন মান্য হিসাবে বাধ্য করা হয়েছে। এ বিষয়টি স্পষ্টীকরণের জন্য শরিয়ত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হচ্ছে।
পবিত্র কুরআনে শরিয়ত সম্পর্কে বলা হয়েছে: আমি তোমার প্রতি (রাসূল) সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি যা ইহার পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষক রূপে। সুতরাং, আল্লাহ্্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে তুমি তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও এবং যে সত্য তোমার নিকট আসিয়াছে তাহা ত্যাগ করিয়া তাহাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করিও না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরিয়ত ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করিয়াছি...(সূরা মায়িদা ৪৮)। আলোচ্য আয়াতের নির্দেশ অনুযায়ী পার্থিব সমস্যার সমাধানের জন্য এই কিতাবক্ েভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই কিতাব কোন সাধারণ গ্রন্থ নয় যে, যে কোন সাধারণ আরবী ভাষাভাষী ব্যক্তিই এর সঠিক ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। তাই এই মহাগ্রন্থের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দায়িত্ব আল্লাহ্্ স্বয়ং গ্রহণ করে তা ঘোষণার দায়িত্ব হযরত মুহম্মদকে (সাঃ) প্রদান করে ঘোষণা করলেন : তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করিবার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা উহার সহিত সঞ্চালন করিওনা। ইহা সংরক্ষণ ও পাঠ করাইবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং, যখন আমি পাঠ করি তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর, অতঃপর ইহা বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই (সূরা কিয়ামাহ : ১৬-১৯)।
কুরআন ব্যাখ্যার আল্লাহ্্ প্রদত্ত জ্ঞানের প্রকাশক ও প্রচারক হিসাবে রাসূল (সাঃ) যে সব কাজের আদেশ নিষেধ ও অনুমোদন দিয়েছেন তাই হাদিস বা রাসূলের সুন্নাহ্। রাসূল (সাঃ) এর ওফাত (৬৩২) এরপর ইসলাম ধর্ম-রাজনীতিতে (জবষরমড় চড়ষরঃরপং) এক মহা বিপর্যয় সংঘটিত হয়। রাসূল (সাঃ) এর জ্ঞানের ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের ঈড়হপবঢ়ঃ- ই রাষ্ট্রীয়ভাবে অস্বীকার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় হযরত ওসমান (রাঃ) এর আমলে এক পর্যায়ে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয় এবং হযরত ওসমান (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেন (৬৫৬)। এ রকম টলটলায়মান ধর্ম-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণের চাপে হযরত আলী (রাঃ) খলিফা হিসাবে শাসনভার গ্রহণ করেন। কিন্তু ইতোমধ্যে মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা-আমলে ব্যাপক বিকৃতি ও পরিবর্তণ সাধিত হয়, যে কারণে হযরত আলীর (রাঃ) মত মহান রাসূল (সাঃ) কর্তৃক নির্বাচিত নেতা ও জ্ঞান নগরীর দ্বারের বিরুদ্ধে মুসলমান নামধারী ব্যক্তিবর্গ একাধিক যুদ্ধে (জঙ্গে জামাল, সিফসিনের যুদ্ধ ও নাহরাইনের যুদ্ধ) অবতীর্ণ হন। ফলে লক্ষাধিক লোক মৃত্য মুখে পতিত হন। অতপর হযরত আলীর (রাঃ) শাহাদতের পর (৬৬১ খৃঃ) রাসূল (সাঃ) পরিবারের ঘোরতর শত্রু পরিবারের লোকেরা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে ক্ষমতাসীন হয়। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তারা এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার সাথে সাথে হযরত আলী (রাঃ) “ধর্ম ত্যাগী” ছিলেন এই বার্তা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচার করার নীতি প্রবর্তণ করেন। এই প্রচার অভিযান ৭৫০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত বলবতৎ ছিল। যার রেশ এখন পর্যন্ত চালু রয়েছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।