Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বড় ভাইদের নির্দেশে ডেকে আনি

বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকান্ড : মনিরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এজহারভুক্ত আরও এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এজাহারভুক্ত এই আসামি হলো এএসএম নাজমুস সাদাত। গত সোমবার দিবাগত রাতে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে । তাকে নিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় গতকল পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টায় ছিলেন তিনি।
এদিকে, আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় আসামি মনিরুজ্জামান মনির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরাফুজ্জামান আনছারী তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে নিয়ে আসেন এবং স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করেন বলে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন। এছাড়া আসামি শামসুল আরেফিন রাফাতকে ফের চার দিনের রিমান্ডসহ আরেক আসামি মো. আকাশ হোসেন রাফাতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, হত্যাকান্ডের পর থেকে সাদাত পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একটি দল দিনাজপুরের বিরামপুর থানাধীন কাটলা বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। নাজমুস সাদাত বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি জয়পুরহাটের কালাই থানার কালাই উত্তর পারার হাফিজুর রহমানের ছেলে। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তিনি দিনাজপুর জেলার হিলি বর্ডার দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।
বিরামপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নাজমুস সাদাত বিরামপুরের কাঠলা সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বিরামপুর থানায় আসে। পরে বিরামপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় উপজেলার কাঠলা গ্রামে সাদাতের আত্মীয় রফিকুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ডিবি পুলিশ দ্রুত তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়।
মনিরের স্বীকারোক্তি, আকাশ কারাগারে
আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, আসামি মনির স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। তখন আদালত মনিরের জবানবন্দি গ্রহণ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া আরেক আসামি আকাশকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। একই বিচারক আবেদন মঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জবানবন্দিতে যা বলেছেন মনির
১৫ তম ব্যাচের বড় ভাইরা ডাকতে বলেছিলেন। তাই ওরে (আবরার) ডেকে নিয়েছিলাম। অনিক ও সকাল বেশি পিটিয়েছে। অনিক, রবি ও রাসেলের নির্দেশে আমি আবরারকে তার রুম থেকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যাই। এ সেখানে অনিক ও রবিন ছাড়াও আরো অনেকে উপস্থিত ছিল। আবরারের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপে থাকা তথ্য দেখে আবরারকে শিবির হিসেবে সন্দেহ করা হয়। এরপর আবরারের কাছ থেকে হলে আরো কারা কারা শিবিরের ঘনিষ্ঠ জানতে চাওয়া হয়। এ সময় প্রথমে চুপ থাকলে তাকে প্রথমে হুমকি ধমকি দেওয়া হয়। এরপর যে যার মত চর থাপ্পড় মারে। এক পর্যায়ে অনিক স্টাম্প দিয়ে আবরারকে পেটাতে থাকে। ওই সময় আমিও আবরারকে চর থাপ্পড় মারতে থাকে।’
মনির স্বীকারোক্তিতে আরো বলেন, ‘সকাল, জিসান, তানিম, সাদাত, মোরশেদ বিভিন্ন সময় ওই কক্ষে আসে এবং আবরারকে পেটায়। মোয়াজ, বিটু, তোহা, বিল­াহ ও মুজাহিদও ঘুরে ফিরে এসে আবরারকে পেটায়। একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কয়েকবার বমিও করে। এতেও পেটানো বন্ধ করা হয়নি। একপর্যায়ে আবরারকে ধরাধরি করেন তানিম, মেয়াজ, জেমি সিঁড়ির দিকে নিয়ে যায়। পেছনে মোরশেদ, মুজাহিদ, তোহা, বিল­াহ, মাজেদও ছিল। পরে ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তার এসে বলেন আবরার মারা গেছে।
দ্বিতীয় দফায় শামসুল আরেফিনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
এদিকে, আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত শামসুল আরেফিন রাফাতকে দ্বিতীয় দফায় ফের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আগের দফার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল মঙ্গলবার রাফাতকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সাময় দ্বিতীয় দফায় সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলে শুনানি শেষে আদালতে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ৮ অক্টোবর রাজধানীর ঝিগাতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে। এ ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Mir Irfan Hossain ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
    দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুনী ছাত্রলীগের টর্চার সেল বন্ধ করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুজ্জামান ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৫ এএম says : 0
    সবার মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
    Total Reply(0) Reply
  • ওসমান ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
    দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বিচারের রায় দেয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • প্রিয়তা ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
    সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেজুরভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তানিয়া ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
    এদের প্রত্যেকে একইভাবে মারলে ভালো হতো
    Total Reply(0) Reply
  • imamhossen ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৫:০৩ এএম says : 0
    তাদের কঠিন সাজা হওয়া উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: `বুয়েট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ