পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় পাঠালে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর গত ৬ আগস্ট এ বিষয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে এই প্রণোদনা দেওয়া শুরু হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতে যার ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই রেকর্ড সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। আর সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৯ শতাংশ।
রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়াকে বাজেটে সরকারের সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা এটিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে প্রণোদনায় এখন থেকে হুন্ডির মাধ্যমে ঠাকা পাঠানো কমবে বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বলেছেন, এখন থেকে ব্যাংকে গেলেই প্রবাসী আয়ের প্রণোদনার টাকা পাওয়া যাবে। বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে কেউ যদি রেমিট্যান্স পাঠান, তাহলে তিনি ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। গত ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত যাঁরা অর্থ পাঠিয়েছেন, তাঁরাও এখন এই প্রণোদনা পাবেন।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) পাঠানোর জন্য ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিতে সরকার বাজেটে যে বরাদ্দ রেখেছিল, তা থেকে অর্ধেক টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত সপ্তাহে এক হাজার ৫৩০ কোটি টাকা ছাড় করে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, যেভাবে এগোচ্ছি, চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় এক হাজার ৮০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারও হয়ে যেতে পারে। বিদায়ী অর্থবছরে এটি ছিল এক হাজার ৫০০ ডলারের মতো।
আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, এখন থেকে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত পাঠানোর ক্ষেত্রে কাউকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না, কোনো কাগজপত্রও চাওয়া হবে না। এমনকি এক হাজার ৫০০ ডলারের মধ্যে দিনে তিন-চারবার করেও দেশে অর্থ পাঠানো যাবে। একবারে কেউ এর চেয়ে বেশি ডলার পাঠাতে চাইলেই কেবল কাগজপত্র চাওয়া হবে। এসব কাগজপত্রের মধ্যে আছে প্রবাসীর পাসপোর্টের কপি, বিদেশি কোম্পানির নিয়োগপত্র, ব্যবসা করলে তার নথিপত্র ইত্যাদি।
এদিকে ২০১৮ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় অর্জনকারী ১০টি দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। ওই বছরে বিশ্বব্যাপী ৫২ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় পেয়েছে বিভিন্ন দেশ, যা আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডবিøউইএফ) সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সুবাতাস বইছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। আর সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৯ শতাংশ।
প্রতি বছর দুই ঈদের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায়। আগস্টে কোরবানির ঈদের পর ধারনা করা হয়েছিল সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা কম রেমিট্যান্স পাঠাবেন। কিন্তু এবার তেমন হয়নি। সেপ্টেম্বরে ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তারা। যা মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে গত মে মাসে রোজার ঈদকে সামনে রেখে ১৭৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল জুলাই মাসে; ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১৮ সালের মে মাসে ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, রেমিট্যান্সে প্রনোদনা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিটেন্স। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দূরদর্শী সিদ্ধান্তকে তিনি সাধুবাদ জানান। একই সঙ্গে এটা দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছে। সাধারণত ঈদের পর প্রবাসীরা কম রেমিট্যান্স পাঠান। কিন্তু এবার দুই ঈদের পরও রেমিট্যান্স বেড়েছে। এটা খুই ভালো খবর। প্রণোদনা দেওয়ার কারণেও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। সে সব দেশে অবস্থানকারী আমাদের প্রবাসীরা এখন বেশি মজুরি পাচ্ছেন; বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরফলে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্সের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪৫১ কোটি ০৪ লাখ (৪ দশমিক ৫১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসেছিল ৩৮৬ কোটি ৮৯ লাখ (৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবেই এই তিন মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। নতুন বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণাদনা পাবেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত রেমিট্যান্সে এ ধরনের প্রণাদনা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ৬ আগস্ট তা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে প্রণোদনা পেতে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত কোন ধরনের কাগজপত্র লাগবে না। তবে রেমিট্যান্সের পরিমাণ এই অংকের বেশি হলে প্রাপককে প্রেরকের পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশী নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র অবশ্যই জমা দিতে হবে। আর ব্যবসায়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ (১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অংক আগের বছরের (২০১৭-১৮) চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং অতীতের যে কোন বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হল বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত। স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুন-জুলাই মেয়াদের ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে এসেছিল। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।