Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একটি ফ্রকে লাভ সাড়ে ১২ হাজার টাকা!

প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : মিমি সুপার মার্কেট। দোকানের নাম ইয়াং লেডি। ‘ফ্লোর টাচ’ নামে একটি ফ্রকের দাম ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। ওই কাপড়ের ক্রয়মূল্য ৬ হাজার ৯৯৫ টাকা। প্রতি কাপড়ে লাভ ১২ হাজার ৫০৫ টাকা। আর একটি পোশাকের ক্রয়মূল্য ৪ হাজার ৪৫০ টাকা। অথচ বিক্রির জন্য লিখে রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঈদ বাজারে অভিযান চালিয়ে ক্রেতাদের গলাকাটার এ প্রমাণ পেয়েছেন। অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিট্রেট তাহমিলুর রহমান এটিকে ব্যবসা নয়, রীতিমত ডাকাতি হিসাবে উল্লেখ করেন। মহানগরীর অভিজাত বিপনী কেন্দ্র মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা ও স্যানমার ওশান সিটিতে গিয়ে এমন নৈরাজ্যকর চিত্র দেখতে পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাজার মনিটর করে দেখা যায় ক্রয়মূল্যের কয়েকশ’ গুন মূল্য ধরে পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে। নগরীর টেরিবাজার থেকে কাপড় কিনে এনে তা বিদেশী বলে ক্রেতাদের প্রতারণা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, মিমি সুপার মার্কেটের ‘ইয়াং লেডি’ দোকানে গিয়ে দেখা যার মেয়েদের ফ্লোর টাচ নামক এক ড্রেসের দাম ১৯ হাজার ৫০০ শত টাকা। অনুসন্ধানে দেখা যায় তার এ কাপড়ের প্রকৃত ক্রয়মূল্য ৬৯৯৫ টাকা। প্রতি কাপড়ে লাভ করেন ১২৫০৫ টাকা। আরেকটি কাপড়ের ক্রয়মূল্য ছিলো ৪৫৫০ টাকা আর বিক্রয়মূল্য ছিলো ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। বিভিন্ন গোপন কোডে লেখা থাকে এসকল পণ্যের দাম, যা ক্রেতাদের বোঝার কোন উপায় নেই। তাই বিক্রেতা তার ইচ্ছামত দাম হাঁকছেন। ঠকিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। অনেকে আবার টেরিবাজার থেকে কাপড় কিনে, ভারত থেকে ইম্পোর্ট করেন বলে দাবি করেন। কিন্তু কাগজপত্র অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে প্রকৃত চিত্র। এ যেন কাপড় বিক্রয়ের নামে ডাকাতি।  
এভাবে একই মার্কেটের আঁচল, আকর্ষণ, আফমি প্লাজার সেলিব্রেশন্স, সুরুচি কালেকশন, পারফিউম ওয়ার্ল্ড, লন্ডন লুক; সানমারের নিউ বাসাবিসহ প্রায় ২০টি দোকানে গিয়ে দামের এমন ব্যাপক অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। কেউ কেউ ক্রয়মূল্যের রশিদও দেখাতে পারেননি। অনেকে বলেন তারা রশিদ রাখার বিষয়টি জানতেন না। এ সকল মার্কেটে প্রথমবারের মত এ বিষয়ে অভিযান হওয়ায় কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
আগামী রোববার পর্যন্ত তাদের এ বিষয়গুলো ঠিক করে নেবার জন্য সময় দেয়া হয়েছে থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সকল মার্কেটে কেন্দ্রীয় সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে সকল ব্যবসায়ীদের চারটি নির্দেশনা দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নির্দেশনাগুলো হলো, ক্রয় মূল্যের রশিদ সংরক্ষণ করতে হবে, সকল বিক্রয়ে ক্রেতাদের রশিদ দিতে হবে, ক্রেতাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে, সকল মার্কেটে অভিযোগ বাক্স থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন মার্কেটে দামের যে ব্যাপক তারতম্য দেখা যায় তা নিঃসন্দেহে আশঙ্কাজনক। সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে এসব পণ্যের মূল্য।
অভিযানে আরো অংশগ্রহণ করেন শিক্ষানবিশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ও তানিয়া মুন। ক্যাবের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস, সভাপতি, ক্যাব, সদরঘাট থানা ও এএম তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম চেম্বার প্রতিনিধি মোঃ মোকাম্মেল হক খান এবং মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা ও স্যানমার শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে  উপস্থিত ছিলেন।  
এদিকে কর্নেল হাট বাজারে চারটি দোকানে মূল্য তালিকা না থাকায় পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির রহমান সানি, তাহমিদা আক্তার ও আবদুস সামাদ শিকদার। ব্যাটারি গলিতে মূল্য তালিকা না থাকা, অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রয় ও ওজনে কারচুপির জন্য চার ব্যবসায়ীকে ১৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আবার চক বাজারের রবিন বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য তৈরীর কারণে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফোরকান এলাহী অনুপম, অনুপমা দাস ও হাসান বিন মোহাম্মাদ আলী।
ইফতারিতে ভেজাল
পোড়া তেলে পোকায় খাওয়া বেগুন দিয়ে ইফতারির মজাদার পদ বেগুনি তৈরির সময় হাতেনাতে ধরেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। চকবাজারের লালচাঁদ রোডের খাজা ভাতঘর এবং চিটাগাং সুইটসেক এ অপরাধে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস এসব জরিমানা করেন। অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ ও নগর পুলিশের সহায়তায় পরিচালিত অভিযানে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিকাশ চন্দ্র দাস জানান, বাজার তদারকিকালে দেখা যায় চকবাজার কাঁচাবাজারে কিছু মুরগি ব্যবসায়ী দেশি মোরগ ও কক মোরগ একসাথে মিশিয়ে দেশি মোরগের দামে বিক্রি করছে। আবার ওজন পরিমাপের বাটখারাও প্রতি কেজিতে ৩০-৪০ গ্রাম কম পাওয়া গেছে। এসব ভোক্তা অধিকারবিরোধী অপরাধের জন্য নুরুল হক, সাহাব উদ্দিন, জয়নাল ও আক্কাস নামের চার মুরগির ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চকবাজার কলেজ রোডে জমজম ঝালবিতান নামক এক প্রতিষ্ঠানে মবিল সদৃশ পোড়াতেলে ইফতারি ভাঁজা, আগের বাসি ইফতার সামগ্রী পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ, ফ্রিজে কাঁচা ও রান্না করা মাছ-গোশত একসাথে সংরক্ষণের অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একটি ফ্রকে লাভ সাড়ে ১২ হাজার টাকা!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ