পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় রিমান্ডে থাকা আসামিরা একের পর এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে শুরু করেছেন। নৃশংস এই হত্যাকান্ডে সকাল ও জিয়নের পর এবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে অনিক সরকার। গতকাল আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আবরার ফাহাদের উপর যে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে তার বর্ণনা উঠেছে এসেছে আসামিদের জবানবন্দিতে।
এদিকে, আবরার হত্যার ঘটনায় গতকাল উত্তরা থেকে এজহারভুক্ত আসামি মোয়াজ আবু হুরায়রাকে (২০) গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হলো। এছাড়া গ্রেফতার মো. মাজেদুল ইসলামকে (২১) পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। আদালত ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রিমান্ডে নেওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে একে একে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিতে শুরু করেছেন আসামিরা। ইতোমধ্যে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সমাজ সেবা বিষয়ক উপসম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল ও বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত শুক্রবার ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরাফুজ্জামান আনছারীর আদালতে জবানবন্দি দেয় জিয়ন। এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে জবানবন্দি দেয় ইফতি মোশাররফ সকাল। আর গতকাল জবানবন্দি দেয় বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৫ ব্যাচের ছাত্র অনিক সরকার।
আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা দিয়েছে ইফতি, জিয়ন ও অনিক সরকার। ইফতির কক্ষেই আসামিরা ৬ অক্টোবর রাতে পিটিয়ে হত্যা করে আবরার ফাহাদকে। আদালতে দেয়া জবানবন্দি ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, আবরারের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ চেক করার পর তাতে কোন কিছু না পেয়ে শিবির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা। কিন্তু প্রথমদিকে আবরার কারো নাম বলতে না পারলে তাকে বেদম পেটানোসহ চর-থাপ্পর মারা হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা সামসুল আরেফিন রাফাত একটি স্ট্যাম্প এনে ইফতির হাতে দেয়। তারপর দু’হাত টান টান করে স্ট্যাম্প দিয়ে আবরারকে পেটানো হলে আবরার ‘মাগো মাগো’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এভাবে কয়েকবার মারার পর স্ট্যাম্পটি ভেঙ্গে যায়। পরে অন্য একটি স্ট্যাম্প দিয়ে আবরারকে পেটাতে শুরু করে অনিক সরকার। সে আবরারের হাঁটু, পা, পায়ের তালু ও বাহুতে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। পায়ের তালুতে আঘাত করলে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করে আবরার। প্রায় একটানা এক ঘণ্টা পেটায় অনিক সরকার। রাত ১১টার দিকে আবারও ওই কক্ষে যায় অনিক। এসময় অনিক স্টাম্প দিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এলোপাতাড়ি শতাধিক আঘাত করে আবরারকে। আবরার তখন অনিকের পা ধরে না মারার জন্য বারবার অনুনয় করেন। অনিক কোন কথা না শুনেই খুবই অনিয়ন্ত্রিতভাবে মারতে থাকে। রাত ১২টা পর্যন্ত আবরারকে মারতে থাকে সে। মারতে মারতে ঘেমে যায়। আবরারের কথা তখন অস্পষ্ট। কথা বলার শক্তি নেই প্রায়। এ সময় আবরার বারবার অনিকের পা ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও অনিকের বিন্দুমাত্র মন গলাতে পারেনি। মারা শেষ হলে অনিক ঘামতে ঘামতে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
জবানবন্দিতে যা বললেন অনিক
গতকাল অনিককে আদালতে নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন জানায় তদন্ত কর্মকর্তা। এ সময় তিনি ১৬৪ ধারায় জবাববন্দি দেন। ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তার খাস কামরায় অনিকের জবানবন্দি নেন। আববার হত্যাকান্ডের পরের দিন গত ৬ জুন যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের একজন অনিক। গ্রেফতারের পর তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ।
জবানবন্দিতে অনিক আদালতকে বলেন, আগে থেকেই অর্থাৎ ঘটনার ৪/৫ দিন আগে আবরার আমাদের টার্গেটে ছিল। ঘটনার দিন সে (আবরার) গ্রামের বাড়ি থেকে আসার আমাদের মধ্যে সিন্ধান্ত হয় সন্ধ্যার পর তাকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডাকা হবে। এরপর রাত ৮টার পর আবরারকে ওই কক্ষে ডাকা হয়। সে সময় সঙ্গে তার মোবাইল ল্যাপটপ আনা হয়। তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সময় আবরার চুপ ছিল। এক পর্যায়ে তার মোবাইল ও ল্যাপটপ ঘেটে উস্কানিমূলক কিছু তথ্য পাই আমরা। এরপর মারধর শুরু হয়। এরপরই আবরারকে প্রথম চর থাপ্পর মারে মেহেদি। এরপর আমি তাকে কিল ঘুষি দেই। বলি যে, ক্যাম্পাসে কারা কারা শিবির করে। তখন ইফতিও চর থাপ্পর মারতে থাকে। এক পর্যায়ে সামসুল আরেফিন ক্রিকেট স্টাম্প নিয়ে আসে। এরপর আমি (অনিক) ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পায়ে পেটাতে থাকি। তারপর দুহাত টান টান করে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করি আবরারকে। আবরার তখন চিৎকার করে কাঁদতেও পারেনি। কারণ অন্যরা আবরারের মুখ চেপে ধরে রেখেছিল। এভাবে থেমে থেমে স্টাম দিয়ে পেটাতে থাকে ইফতি, মেফতাহুল জিয়ন। একই কায়দায় সেও পেটায় আবরারকে। এভাবে মার চলছিলো রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। এরপর আবরারকে কক্ষে রেখে দিয়ে ইফতি, জিয়ন ও সেসহ অন্যরা ক্যান্টিনে খেতে যায়। খাবার খেয়ে ফিরে এসে দেখতে পায় আবরার মেঝেতে পড়ে আছে। তখন আবরার বমি করেছে। আমি ভাবি সে ভান করেছে। আবারও স্টাম দিয়ে আমি তাকে পেটাই। প্রায় আধঘন্টা ধরে মেঝের ওপর উপুর হয়ে শুয়ে থাকা আবরারের পিঠে স্টাম দিয়ে পেটানো হয়। এক পর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সে আবরারকে গোসল করিয়ে হাতে-পায়ে মলম লাগিয়ে দিতে বলে। এ সময় আবরার দ্বিতীয়বার বমি করে। তখন আবরারের কক্ষ থেকে তার কাপড়- চোপড় নিয়ে আসে অন্যজন। আবরারকে ওই কক্ষ থেকে বের করে পাশের ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেয়া হয়। ওই কক্ষে আবরার বমি করে। মেহেদী তখন আবরারকে পুলিশের হাতে দেওয়ার জন্য নিচে নামাতে বলেন। এরপর সে, জেমি, মোয়াজ ও শামীমসহ ৩/৪ জন তাকে কোলে করে সিঁড়ি ঘরের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুলিশ ও চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করে।
অনিক স্বীকারোক্তিতে আরো বলেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল শিবির শনাক্ত করা। তার কাছ থেকে হলের কিছু শিবিরের নাম জানার চেষ্টা ছিল তাদের। প্রথম দিকে আবরার নামগুলো বলছিলেন না। ওই সময় তিনি এবং শিবির কারা করে তা জানতে তাঁরা আবরারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এর পরও আবরার মুখ খোলেননি। আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। স্টাম্প দিয়ে আবরারের পায়ের পাতা, হাঁটু, হাতে পেটাই। আবরার মারা গেছে-আমরা বুঝতে পারিনি। এ ঘটনায় আমি অনুতপ্ত।
পুলিশ জানায়, গতকাল রাজধানীর উত্তরা থেকে হত্যা মামলার এজহারভুক্ত আসামি মোয়াজ আবু হুরায়রাকে (২০) গ্রেফতার করা হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হলো। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, গ্রেফতার মোয়াজ বুয়েটের ইইই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র এবং হত্যা মামলার এজহারভুক্ত আসামি। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের ওসমানপুরের পিরপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মাশরুর-উজ-জামান। হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, আবরারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার বুয়েটের এমএমই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মো. মাজেদুল ইসলামকে (২১) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, গতকাল তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে, গত শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে সিলেটের শাহ কিরন এলাকা থেকে মাজেদুলকে গ্রেফতার করে ডিবি।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে ফেসবুকে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি প্রসঙ্গে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় আবরার ফাহাদকে। এ ঘটনায় পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে চকবাজার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।