পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারসহ ১০ দফা দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন শিথিল করেছে শিক্ষার্থীরা। বুয়েটের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা আগামী ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিলের ঘোষনা দেন তারা। এরআগে নোটিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি মেনে নেয়ার কথা জানায় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আবরার হত্যার বিচারসহ গেস্টরুম গণরুম বন্ধের ৫ দফা দাবিতে আজ রোববার শাহবাগে ছাত্রসমাবেশ করবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আন্দোলনের ৬ষ্ঠ দিনের মত গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে বুয়েটের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৫তম ব্যাচের মাহমুদুর রহমান সায়েম আন্দোলন স্থগিতের ঘোষনা দেন। এরআগে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলসহ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এবং পাঁচ দফা দাবির বিষয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখে আন্দোলন শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই দুদিন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। ভর্তি পরীক্ষার পরিবেশ বজায় রাখবে এবং পরীক্ষার্থীদের সার্বিক সহায়তা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থী সায়েম বলেন, পাঁচ দফার বিষয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখে এবং ভর্তিচ্ছুদের কথা বিবেচনা করে দুদিনের জন্য আন্দোলন শিথিল করা হয়েছে। তবে, পাঁচটি দাবি মেনে নেয়া মানেই এটা নয় যে, আমাদের আন্দোলন থেমে যাচ্ছে। আমাদের আন্দোলন ১০ দফা দাবির ভিত্তিতেই হচ্ছে। আমরা আন্দোলন তুলে নিচ্ছি না। পরবর্তী কর্মসূচি আগামী দুইদিনের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো হবে।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবির মধ্যে ছিল- আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডে জড়িত সবাইকে সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে, যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে এই মর্মে বুয়েট প্রশাসন থেকে নোটিস জারি করতে হবে; আবরার হত্যা মামলার সব খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে, সেটাও নোটিসে লেখা থাকবে; বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সব হল থেকে অবৈধ ছাত্র উৎখাত করতে হবে, সাংগঠনিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস রুম সিলগালা করতে হবে, সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর ভবিষ্যতে কেউ যদি এ রকম সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত হয় কিংবা কোনো রকম ছাত্র নির্যাতনে জড়িত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেবে- তা বিস্তারিত জানিয়ে নোটিস জারি করতে হবে, পরবর্তীতে এটি যে অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত থাকবে তা নোটিসে উল্লেখ থাকতে হবে, পাশাপাশি, এ ধরনের কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি কমিটি করতে হবে এবং কমিটি গঠনের বিষয়টিও নোটিসে উল্লেখ করতে হবে; বুয়েটে পূর্বে ঘটে যাওয়া সব ছাত্র নির্যাতন, হয়রানি, র্যাগিংয়ের ঘটনা এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা প্রকাশের জন্য বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্যাটফর্ম থাকতে হবে, বিষয়টি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শাস্তি বিধানের জন্য একটি কমিটি থাকতে হবে এবং তা নোটিসের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে; প্রত্যেক হলের সব ফ্লোরের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করতে হবে এবং এই সিসিটিভি ফুটেজ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
দাবি মেনে প্রশাসনের নোটিশ
শনিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা মেনে নিয়ে নোটিশ প্রকাশ করে বুয়েট প্রশাসন। দুপুরে দাবি মেনে নিয়ে বিভিন্ন ভবনে লিখিত নোটিশ টানিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নোটিশে বলা হয়েছে, আবরার হত্যা মামলার সকল আসামীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। পরবর্তীতে শৃঙ্খলা কমিটি ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের আলোকে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। পরবর্তীতে যদি এই মামলায় আরও কেউ সাজাপ্রাপ্ত হয় তাহলে তাকেও স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা চলাকালীন সমস্ত খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং আবরার ফাহাদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা দেবে। যারা অবৈধভাবে বুয়েটের আবাসিক হলের সিট দখল করে আছে তাদেরকে দ্রæতই বের করে দেয়া হবে এবং হলে ছাত্রসংগঠনের অফিস সিলগালা করা হবে। এজন্য ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আজ ১২ অক্টোবর থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হবে। কেই বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বুয়েট প্রশাসনের নোটিশে, পরবর্তীতে কেউ ছাত্র নির্যাতন করলে তাকেও শাস্তি প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, আজ থেকে বুয়েটে সকল রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করবে বুয়েট প্রশাসন। যেখানে তারা নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে পারবে। আর, প্রত্যেক হলের সব ফ্লোরের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করা হবে।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ সিলগালা
এদিকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জামিউস সানি ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের কক্ষ সিলগালা করে দিয়েছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পর এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলের ৩২১ নম্বর কক্ষে থাকতেন ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র জামিউস সানি। অন্যদিকে, বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ৩০১২ নম্বর কক্ষে থাকতের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল। গতকাল বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা (ডিএসডব্লিউ) প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান এ দুটি কক্ষ সিলগালা করে দেন। কক্ষ সিলগালা করার বিষয়ে জামিউস সানি বলেন, ‘আজকে সকালে আমি কক্ষেই ছিলাম। স্যাররা এসে সিলগালা করে দেন। আর আহসানউল্লাহ হলের ১২১ নম্বর কক্ষে হল ছাত্রলীগের অফিস ছিল। সেটাও সিলগালা করা হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সকল অছাত্রদের হল থেকে উচ্ছেদ চলছে। আমরা সহযোগিতা করবো।’
শাহবাগে ছাত্র সমাবেশ
এদিকে ৫ দফা দাবিতে আজ রোববার বিকাল চারটায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ছাত্রসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। আবরার হত্যার বিচার ও ছাত্ররাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি। এসময় সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন, ফারুক হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে কোন ধরনের নাক গলাবেন না বলে জানিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। ভিপি নুর বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান তাদের স্বার্থে সাময়িক বা বৃহত্তর যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমরা এ বিষয়ে নাক গলাবো না। তিনি বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেছে তারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানায় নি, তারা সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। আজকে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের বেপরোয়া কর্মকান্ডের কারণে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠে এসেছে। সামগ্রিকভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয় বরং সন্ত্রাসী ছাত্ররাজনীতি, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জন্য সকলের দাবি তোলা উচিত। নুর বলেন, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির কারণে আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে। সেজন্যই আমরা বলছি, মূল দল থেকে ছাত্র সংগঠনগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। ছাত্রসংগঠনগুলো কেন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার বা থাকার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার হবে প্রশ্ন রাখেন তিনি। সুস্থ ধারার মেধাভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বিকাশের জন্য অতি দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান নুর।
লিখিত বক্তব্যে তিনি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে আবরারসহ সকল ছাত্র হত্যার বিচার দ্রুত সম্পাদন করতে হবে; নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে গণরুম, গেস্টরুম ও হলে হলে ছাত্রসংগঠনের দখলদারিত্ব বন্ধ করে প্রশাসনের মাধ্যমে প্রথম বর্ষ থেকে সিট বন্টন নিশ্চিত করতে হবে, অতি দ্রুত সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিতে হবে; ভারতের সঙ্গে করা দেশের স্বার্থবিরোধী সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে এবং উপাচার্যসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।