পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি দেশে টার্গেট কিলিং শুরু হয়েছে। ইমাম, মুয়াজ্জিন, লেখক, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, যাজক, পুরোহিত কেউই এখন নিরাপদ নন। সংবেদনশীল স্থানে, ধর্মীয় আবেগ, অনুভূতি সমৃদ্ধ ব্যক্তিদের বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে। কোন খুনীই ধরা পড়ছে না। দাবি করা হচ্ছে, এটি আইএসের কাজ। সরকার বলছেন, এদেশে আইএস নেই, জঙ্গী আছে। জঙ্গী দমন ও সাঁড়াশি অভিযান চলছে। টার্গেট কিলিং বন্ধ হচ্ছে না। কোন খুনীই ধরা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার প্রধান হিসাবে অবশ্যই আমার কাছে সব তথ্য আছে। তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করছি না। বিএনপি নেত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগই গুপ্ত হত্যা চালাচ্ছে। হাসিনা প্রকৃত খুনীদের বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে বিরোধী দলকে ধ্বংস করতে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। রানাদাশগুপ্ত ও পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় পুরোহিত হত্যা বন্ধে প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বলে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে। সর্বশেষ রামকৃষ্ণ মিশন প্রধানকে আইএস-এর বরাতে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জনের মত মন্তব্য ও মিডিয়ায় এজন্য মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে দায়ী করা হচ্ছে। গোটা বিষয়টি জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ ও হতাশার সৃষ্টি করায় দেশের সচেতন আলেম এবং মুফতি হিসাবে আমাদের মত প্রকাশ জরুরী বলে মনে করছি। গতকাল এক বিবৃতিতে দেশের ১০১ জন আলেম ও মুফতি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বহুধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা উল্লেখ করে আলেম ও মুফতিগণ বলেন, ইসলাম কোনদিন গুপ্ত হত্যা, ফেতনা-ফাসাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ সমর্থন করে না। বাংলাদেশের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সব সময়ই সকল ধর্মের ধর্মগুরুদের সম্মান ও নিরাপত্তার বিষয়ে আন্তরিক। এ দেশে যুগ যুগ ধরে নানা সময়ে একই সাথে ঈদ ও পূজা এসেছে। রমজান, শবেবরাত, শবেকদর, কোরবানী, মহররম ইত্যাদিতেও পূজার মওসুম এসে থাকে। পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা, ইমামবাড়া এ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কোনদিনই এক্ষেত্রে কোন অশান্তি বা বিশৃংখলা হয়নি। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দায়িত্বশীলতা ও উদারতার ফলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় ও সমাজের দিক থেকে সবরকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় মুসলিম-অমুসলিম সবাই সমান ভুক্তভোগী। খুন, গুম, টার্গেট কিলিং, সামাজিক অস্থিরতা ইত্যাদিতে সব ধর্মের মানুষই সমানভাবে উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় হিন্দু ধর্মীয় গুরুদের হত্যা ও হুমকিতে আমরা আলেম সমাজ খুবই উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। এসব কোন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাজ হতে পারে না। ইসলাম কখনই গুপ্তহত্যা, যাজক-পুরোহিত হত্যা বা সন্ত্রাস সমর্থন করে না। এ সব অপকীর্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও শান্তি-শৃংখলা বিরোধী গভীর কোন ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা প্রতিটি হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এসব হত্যাকা- রোধ করা, খুনীদের পাকড়াও করে তাদের মুখোশ উন্মোচন এবং সকল ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের পবিত্র দায়িত্ব। ঢালাওভাবে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে দায়ী করলেও মূলত এসব বলে এক শ্রেণীর দালাল প্রকৃতির লোক প্রকারান্তরে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানকেই বোঝাতে চায়। তারা আলেম সমাজ ও ধার্মিক নাগরিকদের উদ্দেশ্যেই এসব শব্দ প্রয়োগ করে। নিরীহ সম্প্রীতিশীল ও উদার মুসলমানদের এবং তাদের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ আলেম উলামাগণকে লক্ষ্য করেই অন্যায়ভাবে গালাগাল করা হয়। তথাকথিত সুশীল বুদ্ধিজীবী শ্রেণী এখন গোলামে পরিণত হয়ে গেছে। দেশের সব আলেম ধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষে। পুরোহিত, যাজক ও ধর্মগুরু হত্যার বিপক্ষে। যারা রাষ্ট্রদ্রোহমূলক আচরণ করছে তাদের ব্যাপারে সকল দেশ-প্রেমিক নাগরিককে সজাগ ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে, সরকারের নিকট জোর দাবি জানাই, টার্গেট কিলিং ও বিদেশী হস্তক্ষেপ একই সূত্রে গাঁথা কিনা সেটিও তাদেরই খুঁজে বের করতে হবে। সাজানো নাটক ও মিথ্যা অজুহাতে দেশের বিরুদ্ধে বড় কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা সেটি দেখাও সরকারের দায়িত্ব।
১০১ জন আলেম ও মুফতি স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে রয়েছেন, মুফতি আসাদউল্লাহ (বসুন্ধরা), মাওলানা রফিক আহমদ (হাটহাজারি), মুফতি আবদুল আজিজ (পটিয়া), মুফতি রহমত উল্লাহ (যাত্রাবাড়ী), মুফতি রশীদ আহমদ (ফেনী), মুফতি আহমদ হোসাইন কাসেমী (ময়মনসিংহ), মুফতি আতহার আলী (রংপুর), মুফতি ফরিদ আহমদ হাশেমী (রাজশাহী), মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন বাবর (যশোর), মাওলানা আশিকুর রহমান (সিলেট), মুফতি আতাউল্লাহ (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (চট্টগ্রাম), মুফতি আবদুল খালেক (কক্সবাজার), মুফতি মাহবুবুর রহমান (বরিশাল), মুফতি আবু নসর (নেত্রকোনা), মুফতি ওমর ফারুক (ঢাকা) প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।