পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ (২১) হত্যা মামলায় এজাহারে নাম না থাকলেও হত্যাকান্ডে অমিত সাহার সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া মিজানুর ও আরাফাতেরও এই হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে। গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এদিকে, আবরার হত্যায় অমিত সাহার নাম উঠে আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ শিক্ষার্থীর মুখে মুখে তার নির্যাতনের কথা ঘুরছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সিনিয়র-জুনিয়র সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো অমিত। তবে জুনিয়রদের প্রতি তার আগ্রাসী মনোভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। সাধারণ ঘটনায় জুনিয়রদের নিয়ে র্যাগিংয়ের নামে তার রুমে নির্যাতন করা হতো।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে হয়তো অমিত সাহা উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে আবরার হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবে তার দায়দায়িত্ব রয়েছে। তদন্ত, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তা উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী বলতে পারি, অপরাধের সঙ্গে জড়িত কেউ ঘটনাস্থলে থেকেও করতে পারে আবার ঘটনাস্থলে না থেকেও করতে পারে। অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে না থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে তেমনই কিছু ঘটেছে।
তদন্তকারী সংস্থা ডিবিও জানতে চাচ্ছে ঘটনার মোটিভটা কী? আসলে কি হত্যার জন্যই আবরারকে ডেকে নেয়া হয়েছিল, না কি অন্য কারণে হত্যা করা হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, মোটিভটা আমরা পরিষ্কার করে বলছি না। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ক্লিয়ার মোটিভ পেয়েছি। এটা স্পষ্ট যে, অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টিতে আবরার হত্যা। তদন্ত শেষ হলে মোটিভটা ক্লিয়ার করে বলব।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৫ (পরে একজনকে গ্রেফতার করায় মোট গ্রেফতার ১৬) জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই রাতে আসলে আবরার হত্যায় কতজন জড়িত ছিল? টর্চারসেলে কারা ছিল? জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা তদন্তে ক্লিয়ার পিকচার নেয়ার চেষ্টা করছি। কারা ছিল কারা ছিল না তা যাচাই করা হচ্ছে। যেহেতু মারার কোনো সুনির্দিষ্ট ছবি কিংবা ভিডিও নেই। তবে এমনও তো হতে পারে যে আশপাশের রুমের কেউ ঘটনা শুনে আসছে। আবার কেউ কেউ এমনও থাকতে পারে যে, ছবিতে নেই কিন্তু ঘটনাস্থলে ছিল বা মারের সঙ্গে জড়িত। এর সবই তদন্ত করা হচ্ছে। ক্লিয়ার পিকচার পেতে কিছুটা সময় লাগছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আবরার হত্যাকান্ডে তার বাবা মোট ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনা জানার পরপরই পুলিশ তৎপর হয়। নৃশংস ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে এজাহার দায়েরের আগেই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে সোপর্দ করে ১০ জনকে মোট পাঁচদিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এজাহারের পর দ্রুততার সঙ্গে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহার একটি প্রাথমিক তথ্য বিবরণী। প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর বাইরে যাদের নাম আসছে তাদের নামও উঠে আসছে। সেই সূত্র ধরে এজাহারে নাম নেই কিন্তু তদন্তে ও অন্য গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আরও কয়েকজনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়ে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করি। যাদের নাম এজাহারে ছিল না। প্রথম গ্রেফতার ১০ জনের সঙ্গে পরে গ্রেফতার তিনজনও রিমান্ডে রয়েছে। আজও ডিবির কয়েকটি টিম কাজ করছে। আজও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, এজাহারবহির্ভূত গ্রেফতাররা হচ্ছেন- অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ও শামসুল আরেফিন আরাফাত। প্রাথমিক তদন্তে ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
জুনিয়রদের ওপর বেশি ‘আগ্রাসী’ ছিল অমিত
বুয়েট শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, আবরার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার অমিত সাহা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। মেধাবী হিসেবে বুয়েটে ভর্তি হলেও জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে পদ পেতে নিজেকে ‘আগ্রাসী’ হিসেবে পরিচিত করেন ক্যাম্পাসে। ফলও পান দ্রুত। পদ পান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক হিসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সিনিয়রদের মধ্যে একজনকে পেছনে সবচেয়ে বেশি গালমন্দ করে। সে হলো অমিত সাহা। তাকে সবেচেয়ে আগ্রাসী দেখা যেত।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শেরেবাংলা হলের যে কক্ষে (২০১১ নম্বর কক্ষ) আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ওই কক্ষের বাসিন্দা ছিলেন অমিত সাহা। ওই কক্ষে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের নিয়মিত র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করা হতো। ফাহাদ হত্যাকান্ডে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অমিতের নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ পেতে শুরু করে। বুয়েট ছাত্রলীগের ফেসবুক গ্রুপে কাকে র্যাগ দেওয়া হবে সে বিষয়ে আলোচনা হতো। সেরকম একটি ঘটনায় এক সিনিয়রকে থাপ্পর দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো একটি পোস্টে আগ্রাসী কমেন্ট করেন অমিত। ওই কমেন্টে অমিত লিখেন- বুয়েট ছাত্রলীগ সুশীল হবে, মারবেও না, বাট কোনো সুশীল নন-পলিটিক্যাল একটা কথা বলার সাহসও রাখবে না। ইদানীং সুশীলদের কথা অনেক বেশি বাড়ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।