পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে (২১) হত্যার ঘটনায় আরও একটি সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয়বারে প্রকাশিত ১৫ মিনিটের সিসিটিভি ফুটেজে হত্যাকান্ডে জড়িত মূল অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পেরেছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে প্রকাশিত ফুটেজে ঘটনার সাথে জড়িত জুনিয়র লেভেলের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।
এদিকে হত্যার ঘটনায় শাখাওয়াত ইকবাল অভি নামে এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণ বিভাগ। গতকাল বুধবার রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক অভি ইলেক্ট্র্যিাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ছাত্র। এ নিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মোট ১৪ জনকে আটক করা হলো। এরমধ্যে গতকাল তিনজনকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া গত মঙ্গলবার ১০ জনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাদেরকে মুখোমুখী জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বুয়েট শিক্ষার্থী সূত্র ও নতুন প্রকাশিত ফুটেজটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নতুন প্রকাশিত ফুটেজটি ১৫ মিনিট ৫ সেকেন্ডের। গত সোমবার হল প্রশাসন ও পুলিশ ফুটেজ দিতে রাজি না হলে শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ১০ ঘণ্টার সিসিটিভির ফুটেজ দেওয়া হয়। নতুন প্রকাশিত ফুটেজের প্রথম ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড নিচতলার সিঁড়ির পাশের ক্যামেরা, এরপর ৬ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড পর্যন্ত দ্বিতীয়তলার ২০১১ নম্বর কক্ষের সামনের ফুটেজ, এরপর ১১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত দ্বিতীয়তলার ২০০৫ নম্বর কক্ষের সামনের ফুটেজ এবং ১৫ মিনিট ৪ সেকেন্ড পর্যন্ত নিচতলার হল গেটের ক্যামেরার ফুটেজ।
শিক্ষার্থীরা ফুটেজে একজন ছাড়া বাকিদেরকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, আবরার ফাহাদকে রাত ৮টা ১৩ মিনিটে ছাত্রলীগের হল শাখার জুনিয়র নেতাকর্মীরা ডেকে দ্বিতীয়তলায় নিয়ে যান। এরপরেই সিঁড়ি দিয়ে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ) ও সদস্য মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ)।
দ্বিতীয়তলার ফুটেজে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ ও তানিম, এছাড়া তোহা, রাফাদ, মাজেদ, মনির, বিটু, বিল্লাহ, গালিব, মোয়াজ, ইফতি মোশাররফ সকাল, তানভীর, মিজান, জেমি, মোরশেদকে দেখা যায়। ৬ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের সময় ফাহাদের লাশ দ্বিতীয় এবং নিচতলায় সিঁড়ির মাঝখানে রাখা হয়। এরপরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে আলাপ করে। পরর্বতীতে হল প্রভোস্ট ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক, বুয়েটের ডাক্তার ঘটনাস্থলে আসেন।
আরও একজন আটক
আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় শাখাওয়াত ইকবাল অভি নামে একজকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণ বিভাগ। আটক অভি ইলেক্ট্র্যিাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ছাত্র। এ নিয়ে ১৪ জনকে আট করা হলো। গতকাল বুধবার রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
ডিবি দক্ষিণের (লালবাগ জোন) অতিরিক্ত উপ কমিশনার খন্দকার আরাফাত লেনিন বলেন, আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।
তিন শিক্ষার্থীর ৫ দিনের রিমান্ড
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে (২১) পিটিয়ে হত্যার ঘটনা গ্রেফতার বুয়েটের তিন শিক্ষার্থীর পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জাল হোসেন এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তিন আসামী হলেন- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ম ব্যাচ) ছাত্র শামসুল আরেফিন রাফাত (২১), ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (১৬তম ব্যাচ) মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১) ও একই ব্যাচের (তৃতীয় বর্ষ-১৬তম ব্যাচ) মো. আকাশ (২১)। গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঝিগাতলা থেকে রাফাতকে, ডেমরা থেকে মনিরকে ও সন্ধ্যা ৬টায় গাজীপুরের বাইপাল থেকে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। শুনানি শেষে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তিন আসামীকে আদালতে হাজির করার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আবরার ফাহাদকে পরিকল্পিতভাবেই নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া পিটিয়ে আহত করার পর পুলিশের একটি দল হলের ভেতরে ঢুকতে গেলে তাদেকে ঢুকতে দেননি আসামিরা। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে আরও যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতার করার জন্য এই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দীন খান আদালতকে বলেন, আবরার ফাহাদ ছিলেন নিরীহ ছাত্র। বিনা অপরাধে বুয়েটের ছাত্ররা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন। গ্রেফতার তিন আসামির মধ্যে দু’জনের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তবে শামসুল আরেফিনের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
শামসুল আরেফিনের আইনজীবী বলেন, শামসুল আরেফিন ছাত্রলীগের কোনো নেতা নন। তিনি একজন সাধারণ ছাত্র। ঘটনার দিন রাত ৮টার সময় তিনি ঢাকার একটি হলে সিনেমা দেখছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে তিতিন কোনোভাবেই জড়িত নন।
এছাড়া মনিরুজ্জামান ও আকাশের আইনজীবী না থাকায় আদালত তাদের কাছে জানতে চান, তারা কোনো কিছু বলতে চান কি না? তখন আকাশ আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনিও আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে মনিরুজ্জামান আদালতে কোনো কথা বলেননি।
রিমান্ডে মুখোমুখী ১০ আসামি
এদিকে, গত মঙ্গলবার ১০ শিক্ষার্থীকে পাঁচদিনে করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাতুল ইসলাম জিওন, গ্রন্থনা ও গবেষণা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্না, ছাত্রলীগ কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মোজাহিদুর রহমান ও মেহেদী হাছান রবিন।
উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হল তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী ও স্বজনরা। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে গতকাল পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে পৃথকভাবে ১৩ জন রিমান্ডে রয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।