পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে রাতভর পৈচাসিক কায়দায় পিটিয়ে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়। ওই কক্ষে থাকেন ছাত্রলীগ নেতা আমিত সাহা। তিনি পলাতক। এ হত্যাকান্ডে জড়িত ১৯ জনের নামে মামলা এবং গ্রেফতার হয়েছে ১৩ জন। তবে, মামলায় ২০১১ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহার নাম মামলায় না থাকা নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। পলাতক থেকে অমিত সাহা গতকাল নিহত আবরার ফাহাদের এক সহপাঠীকে ম্যাসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করেছেন, আবরার ফাহাদ কি হলে আছে? এ ধরনের একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ যেন বাংলা সিনেমার দৃশ্য। বাংলা সিনেমায় মহল্লার ভিলেন প্রতিপক্ষকে হত্যা করে নিহতের বাসায় গিয়ে স্ত্রী-পুত্র-কন্যার গলা জড়িয়ে ধরে মায়াকাঁন্না করছে। অমিত সাহার গ্রেফতার না হওয়া এবং পলাতক থেকে আবরার হলে রয়েছেন কিনা জানতে চাওয়া সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে। ফেসবুকে কেউ কেউ অমিত সাহাকে বাংলা সিনেমার ভিলেন রাজিবের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা জড়িত থাকার বিষয়ে ঘটনার দিন থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে নানা বাদানুবাদ হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এদিকে গতকাল ফেসবুকে অমিত সাহার নামে একটি নতুন মেসেজ ভাইরাল হয়েছে। যদিও মেসেজটির সত্যতা যাচাইয়ে তার সাথে যোগাযোগ করে মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে। ভাইরাল হওয়া ওই মেসেজে ‘আবরার ফাহাদ হলে আছে কি না’- এমন প্রশ্ন করেছেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, পুলিশের হাতে গ্রেফতার বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু ঘটনার পরে হত্যায় জড়িত হিসেবে গণমাধ্যম কর্মীদের অমিতের নাম বললেও নতুন মেসেজটি এ প্রশ্নটিকে আরও জোড়ালো করেছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, আবারারকে যে রুমে (শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ওই রুমটির বাসীন্দা অমিত।
ফেসবুক ও কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, হত্যাকান্ডের আগে ১৭তম ব্যাচের (আবরারের সহপাঠী) এক শিক্ষার্থীকে অমিত সাহা ম্যাসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করেছেন- ‘আবরার ফাহাদ কি হলে আছে?’ এ ধরনের একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ১৭তম ব্যাচের ওই শিক্ষার্থী নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে না চাওয়ায় তারই এক সিনিয়র বিষয়টি ফেসবুকে প্রকাশ করেন।
এর আগে, হত্যাকান্ডের পরে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত ৮টার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেজে তার লাইক দেওয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। আমরা তার শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই। ফাহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা। পরে ঘটনার প্রমাণ পাওয়ায় চতুর্থ বর্ষের ভাইদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা ফাহাদকে মারধর করে থাকতে পারে। পরে, রাত ৩টার দিকে শুনি সে মারা গেছে।’
গ্রেফতারের আগে গণমাধ্যম কর্মীদের দেওয়া আশিকুল ইসলাম বিটুর এ বক্তব্যে ‘অমিত সাহা’র নাম আছে। কিন্তু, পরে ছাত্রলীগের তদন্তে তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন বলে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করা হয়।
অপরদিকে, অমিত সাহাকে সমর্থন দিয়ে তার বন্ধুরা প্রথমে তার পক্ষে স্ট্যাটাস দিলেও পরে নতুন স্ক্রিনশটটি আসার পর তারাও সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এক স্ট্যাটাসে তারা বলেন- ‘অমিত সাহা প্রসঙ্গে... আমি সুপান্থ জয়, নাশিদ সিফাত, মুবতাসিম ফুয়াদ বেগ ফাহিম, আবির সাহা, তৃপ্ত ভটাচার্য, অনিন্দ্য আকাশ শুভ্র, ইমতিযাজ সৈকত, সামিউল জাওয়াদ রবি- আমরা অমিত সাহার ডিপার্টমেন্ট/সেকশনমেট। একই সঙ্গে ক্লাস করে এসেছি। আমরা কেউ তার হলেরও না। ক্লাসের অন্য ১০টা মানুষের মতো তার সঙ্গেও আমাদের বন্ধুত্ব ছিল। আবরারের হত্যাকান্ডের পর অমিত ঘটনার সময় নিজের অনুপস্থিতি ও ঘটনায় ফেঁসে যাওয়ার কথা আমাদের জানায়। তখন সে আবির সাহার বাসায় ছিল, এটা নিশ্চিত হওয়ার পরে আমরা অমিতের পক্ষে গ্রুপে কিছু স্টেটমেন্ট দেই, যা পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।’
তারা আরও লেখেন, ‘ঘটনাটার সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ সম্পৃক্ততা আমাদের পক্ষে বের করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু, কিছুক্ষণ আগে বের হয়ে আসা তথ্যে (স্ক্রিনশট) আর সবার মতো আমরাও তার সম্পৃক্ততা নিয়ে আর সন্দিহান নই। যার প্রেক্ষিতে এই কেসে তার পক্ষে আমাদের সমর্থন প্রত্যাহার করছি।’
তারা লেখেন, ‘আমরা জানি, এ রকম ঘটনায় একদম ধোয়া তুলসি পাতা কেউ হঠাৎ করে জড়ানো সম্ভব না। অবশ্যই তার একাধিক ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে, যা আমরা গুরুত্ব সহকারে কখনো নেইনি বা দেখেও ওভারলুক করেছি। আমাদের এই অসচেতনতার জন্যই আজ এদের মতো অপরাধীর জন্ম।’
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ধারণা, অমিত সাহা যদি ঘটনাস্থলে নাও থাকেন, তিনি আবরার ফাহাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তা হত্যাকারীদের জানিয়েছেন। কারণ, ফাহাদ তো বাসায় গিয়েছিল, হলে এসেছে কি-না তা সিনিয়রেরা জানতেন না। এর আগেও হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে অমিত সাহা অনেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করেছিলেন। এমন ঘটনা শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জানিয়েছেন।
এদিকে, মামলায় অমিত সাহাকে আসামি না করার বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে এফআইআরের (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) রেশ ধরে। সেই বিবরণীতে উনি (বাদী) প্রাথমিকভাবে যাদের মনে করেছেন, যারা অপরাধ করেছেন, তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। এর বাইরেও যদি কাউকে পাওয়া হয়, যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কোনো বাধা নেই। এদিকে, ঘটনার পর থেকে অমিত সাহা তার ফেসবুক আইডি ও মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে রাখেন। গতকাল বুধবার তার ফেসবুক আইডি সচল করলেও মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।