পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর লালবাগ থেকে বুয়েট কতদূর? পুঁজার ছুটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম ক্যাম্পাসের বরাদ্দকৃত বাংলো থেকে লালবাগের বাসায় যান। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার পৈচাসিক নির্যাতনে মেধাবী ছাত্র আরবার ফাহাদের মৃত্যুর পর ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। কিন্তু লালবাগের বাসা থেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে আসতে ভিসির সময় লেগে যায় ৩৬ ঘন্টা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যখন উপাচার্যের কার্যালয়সহ বুয়েটের প্রশাসনিক সকল কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়; তখন ভিসি ক্যাম্পাসে হাজির হয়ে প্রথমে ৮টি হলের প্রভোস্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। অতপর উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সামনে এলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এসে ভিসি ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি তোমাদের অভিভাবক, তোমরা আমার সন্তান। আবরারের সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অনাকাঙ্খিত। এ কথা শোনার পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘সন্তান হলে ৩৬ ঘন্টা কোথায় ছিলেন? মুত্যু সন্তানকে দেখতে এবং নাজাজে জানাজায় এলেন না কেন? এটা একটা খুন, ছাত্রলীগ খুন করেছে, আপনাকে স্বীকার করতে হবে।’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শান্ত হলে ভিসি বলেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তারা দেশের বাইরে আছেন। সেখান থেকে তারা যেভাবে নিদের্শনা দিচ্ছেন আমি তা পালন করছি। আমি তোমাদের দাবিগুলো দেখেছি। আমি সব দাবি মেনে নিয়েছে।’ এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী উত্তেজিত হয়ে ভিসিকে বলেন, ‘আবরার খুন হওয়ার পর আপনি কই ছিলেন? কেন এখানে আসেননি?’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে মধ্যযুগীয় পৈচাসিক কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। বর্বরোচিত ওই ঘটনা দেশের ১৬ কোটি মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী খুনিদের বিচারের দাবিকে সোচ্চার। কেউ কেউ বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাজার হাজার শিক্ষক প্রতিবাদ করছেন এবং অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু একজন ব্যাক্তি ছিলেন নীরব। তিনি হলেন বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। ক্যাম্পাসে ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনায় অভিভাবক হিসেবে যাকে সবার আগে এগিয়ে এসে পরিস্থিতি শান্ত করা এবং অপরাধীদের বিচার এবং বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের সান্তনা দেয়ার কথা; সেই ভিসি পর্দার আড়ালে থেকেছেন ৩৬ ঘন্টা। দেশের সর্বচ্চো বিদ্যাপীঠের দায়িত্বে থাকা ভিসি সাইফুল ইসলামের বিবেকে কি বর্বরোচিত হত্যাকান্ড সামান্য নাড়া দেয়নি? নাকি আবরার ফাহাদ তিস্তা চুক্তির বদলে ফেনি নদীর পানি ভারতকে দেয়ার প্রতিবাদ করে ফেসবুকে স্ট্র্যাটাস দেয়ায় নিহত ছাত্রের উপর তিনি ক্ষুব্ধ? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বরাদ্দকৃত বাসভবন বাংলোতে ছিলেন না। তিনি ছিলেন লালবাগের বাসায়।
ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার খুনের বিচারের দাবিতে বুয়েট-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা যখন পথে নেমে এসেছে; দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করেছে; প্রচার করা হয় ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম অসুস্থ। পরে জানানো হয় তিনি পুঁজার ছুটি কাটাচ্ছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আবরারের হত্যাকারীদের ফাঁসিসহ ৮ দফা দাবিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা ভিসিকে ক্যাম্পাসে এসে জবাবদিহিতা করার দাবি জানান।
মেধাবী ছাত্র আরবার ফাহাদের কয়েক দফা জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে কুষ্টিয়ার নিজ গ্রামে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন ৩৬ ঘন্টা পর। তিনি ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক দাবি করলেও আবরারের নামাজে জানাজা ও দাফনেও অংশ নেননি। দেখা তো দূরের কথা, কথা বলেননি আবরারের অভিভাবক, স্বজন বা সহপাঠিদের সঙ্গে। তাকে দেড় দিন ফোনেও পাওয়া যায়নি।
ছাত্রলীগের কিছু নেতার হাতে আবরার নিহতের পর সময় গড়িয়েছে, আর হত্যার লোমহর্ষক নিষ্ঠুর কাহিনী বেরিয়ে এসেছে, পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। এই খুন বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর গন্ডি পেরিয়ে আবরার রাষ্ট্র হয়ে গেছে। দলমত নির্বিশেষে ফুঁসে ওঠেছে সারা দেশের ছাত্রসমাজ। দেশ ছাড়িয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যমজুড়ে আবরার বন্দনা আর ভালোবাসায় শোকাভিভূত, ক্ষুব্ধ, প্রতিবাদ মুখর মানুষ। ঘৃণার বিষবাষ্প ছুঁড়ে দিয়েছে খুনীদের প্রতি। অথচ ভিসি সাইফুল ইসলাম পর্দার লাড়ালেই ছিলেন।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, স্বয়ং ছাত্রলীগ খুনের ঘটনায় জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, বহিস্কার করেছে, শাস্তি চেয়েছে। তবে অভিযুক্ত অমিত সাহা নামের একজন রহস্যজনকভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এসবে সাড়া মেলেনি ভিসির। তিনি চুপ, নির্লিপ্ত। প্রয়োজন মনে করেননি ঘটনাস্থলে যাওয়ার, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার, আবরারের অভিভাবক-স্বজনদের সান্তনা দেয়ার। ফোন করে খোঁজ-খবর নেয়ার সাধারণ সৌজন্যবোধটুকুও দেখাননি। ধরেননি ফোনও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন বুয়েটের ভিসির বিবেক দিল্লির কাছে বন্ধক রেখেছেন। আবরার যেহেতু ভারতকে ফেনি নদীর পানি নেয়ার বিরোধিতা করে স্ট্র্যাটাস দিয়েছেন; তাতেই ভিসি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ জন্য তার বিবেক কাঁদেনি। তাছাড়া দলবাজ ভিসি অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাদের গ্রেফতার হওয়ায় মনের দুঃখে নিরব হয়ে গেছেন।
ছাত্রলীগের পৈচাসিকতায় নিহত এক দুখিনী মায়ের সন্তান আবরার এখন লক্ষ মায়ের সন্তান হয়ে গেছেন। আবরারের পিতার চোখের পানি গড়িয়েছে লক্ষ পিতার চোখ বেয়ে। আবরার এখন আর কুষ্টিয়ার ওই গ্রামের এক পরিবারের নেই। অসংখ্য পরিবার তার, সারা দেশের ছাত্রসমাজ তার সহপাঠি, ভাই, বন্ধু। অথচ যার অভিভাবকত্বে উচ্চশিক্ষার এই বিদদ্যাপীঠে পা রেখেছিলেন আবরার, সেই ভিসির ভূমিকায় সবাই হতবাক!
প্রশ্ন ওঠেছে ভিসি ড. সাইফুল ইসলামের এই নির্লিপ্ততার রহস্য কি? লালবাগ থেকে বুয়েট ক্যাম্পাস ১০ মিনিটের পথ আসতে তার ৩৬ ঘন্টা লাগলো কেন? #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।