পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরও রমজানে খোলা রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নির্দেশনা অনুযায়ী পহেলা রমজান থেকেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও তা মানেনি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই। বিশেষ ক্লাস, ভালো রেজাল্ট, গভর্নিং বডির চাপসহ নানা অজুহাতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে ক্লাস ও পরীক্ষা। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ছুটি’র কথা বলা হলেও বিশেষ ক্লাসের নামে চলছে রমরমা বাণিজ্যও। এমনকি একেকজন শিক্ষকের নামে একেকটি ক্লাসরুম বরাদ্দ দিয়ে বিশেষ ক্লাসের নামে চলছে বাড়তি অর্থ আদায় করছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ছুটির নির্দেশনা থাকলেও কোচিংয়ের নামে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরো ক্লাস করানো হচ্ছে। কলেজগুলো চলছে পুরোদমেই। স্কুল-কলেজ খোলা থাকায় শিক্ষার্থীরা উৎসাহী হয়ে রমজানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রোজা পালনে একদিকে যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন অন্যদিকে প্রচ- গরমে অনেকটাই অপ্রয়োজনীয় ক্লাসে দুর্বল এবং অসুস্থ পড়ছে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ। অন্যদিকে স্কুল ছুটির পরপরই রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। এছাড়া ক্লাস শেষে ঘরের কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন মহিলা শিক্ষকরা। একই অবস্থায় পড়ছেন শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনা নেয়া করা অভিভাবকরাও। অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন, মূলত কোচিংয়ে নামে বাণিজ্যের লক্ষ্যেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হচ্ছে। এটি অমানবিক আচরণ বলেও মন্তব্য করেছেন অনেক অভিভাবক। এসব কোচিং ক্লাসকে অপ্রয়োজনীয় বলেও অভিযোগ তাদের।
২০১৩ সাল পর্যন্ত রোজার প্রথম ১০ দিন স্কুল খোলা রাখা হতো। কিন্তু ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কষ্ট এবং রমজানে যানজটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোজার প্রথম দিন থেকেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দেয়ার পক্ষে মত দেন। ওই সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ হরতাল-অবরোধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রথম ১০ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার প্রস্তাব করলেও প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দেন। প্রধানমন্ত্রীর মতামত দেয়ার পরপরই ওই বছর রোজার প্রথম দিন থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বছর রমজানের শুরু থেকেই ওই নির্দেশনা অমান্য করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী রমজানের প্রথম দিন থেকেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান পহেলা রজমান থেকে বন্ধ হলেও এখনো অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষা কার্যক্রম (ক্লাস ও পরীক্ষা) চালিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যুক্তি দেয়া হয়েছে বিশেষ ক্লাস, পরীক্ষা, ভালো রেজাল্টের আশা, গভর্নিং বডি ও অভিভাবকদের চাপেই ক্লাস পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল, শামসুল হক স্কুল এন্ড কলেজ, মিরপুরের মনিপুর স্কুল, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বর্ণমালা আদর্শ হাইস্কুল এন্ড কলেজ, মিরপুরের সিদ্ধান্ত হাইস্কুল, বনানীর বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই খোলা রয়েছে। জানতে চাইলে মিরপুর সিদ্ধান্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের কথা চিন্তা করেই প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে। রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা উচিত মনে করে তিনি বলেন, আমরা চাইলেও গভর্নিং বডির চাপের কারণে স্কুল বন্ধ রাখতে পারছি না। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ২১ জুন পর্যন্ত খোলা রাখতে। এছাড়া অভিভাবকদের চাপও রয়েছে। বর্ণমালা আদর্শ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূইঁয়া আব্দুর রহমান বলেন, স্কুলের কিছু কিছু শাখায় বিশেষ ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আর কলেজ শাখা খোলা থাকবে ২১ জুন পর্যন্ত। তবে ওই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্কুলের সব শাখায় খোলা আছে এবং ক্লাস হচ্ছে। একই অবস্থা বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলসহ রাজধানীর অধিকাংশ স্কুলই নির্দেশনা অমান্য করে ক্লাস পরীক্ষা নিচ্ছে।
আইডিয়াল স্কুলে বিশেষ ক্লাসের বাণিজ্য: আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এখন কোচিং সেন্টারে রূপান্তরিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। রমজান মাসে বিভিন্ন শিক্ষকের নামে পৃথক পৃথক রুম বরাদ্দ দিয়ে বিশেষ ক্লাসের নামে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা। যার জন্য কোন রকম রসিদও দেয়া হয় না শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং বাণিজ্য চলছে। গত ৩০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ এক নির্দেশনা জারি করে বলেন, কোন শিক্ষক তার বাসায় বা কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থী পড়াতে পারবেন না। এর পরপরই গত ১ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত শিক্ষকরা নিজ নিজ বাসায় কোচিং বন্ধ রাখেন। আর এরপরই স্কুলের পক্ষ থেকে আইডিয়াল স্কুলের সব শাখায় শিক্ষকদের জন্য আলাদা আলাদা রুম বরাদ্দ করে দিয়ে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে প্রতিদিন রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষকরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাচ্ছেন। স্কুলের বাধ্যতামূলক এই কোচিংয়ের অধীনে প্রথম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক ১২দিন অতিরিক্ত ক্লাস করতে হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত এক হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু টাকা আদায়ের কোন রশিদ প্রদান করা হয়না। এছাড়া রমজান মাসে ৮ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত পঞ্চম, অষ্টম এবং দশম শ্রেণির অতিরিক্ত ক্লাস ও কোচিং বাধ্যতামূলক চালু রাখা হয়েছে। এই স্কুলের বিভিন্ন শাখায় ৫৬টি রুম বিভিন্ন শিক্ষকের নামে কোচিং ও বিশেষ ক্লাস চালু রাখা হয়েছে। জানতে চাইলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল ছুটি হয়ে গেছে তবে কলেজ শাখা খোলা রয়েছে। বিশেষ ক্লাসের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এদিকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হলেও ২১ রমজান পর্যন্ত খোলা থাকছে সব কলেজই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চলছে ক্লাস ও পরীক্ষা।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম রোজা থেকেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হয়ে গেছে। এরপরও যদি নির্দেশনা অমান্য করে কোন প্রতিষ্ঠান ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোন প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্য করার সুযোগ নেই। এধরণের অভিযোগ থাকলে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানোরও অনুরোধ জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।