পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে : ঘাতকদের হাতে গত ৫০ দিনে কুষ্টিয়ায় খুন হয়েছেন ৬ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, হোমিও চিকিৎসক, সাধারণ মানুষ এমনকি স্কুল ছাত্রও। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে নিরাপত্তাহীনতা। পাশাপাশি এসব খুনের ঘটনায় জেলার মানুষ শংকিত ও উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে এসব হত্যা মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই, গ্রেফতার হচ্ছে না আসামিরা। প্রায় সব মামলার খুনিরাই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফলে মামলার বাদীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। তারা হত্যা মামলাগুলোর তদন্তে দ্রুত অগ্রগতি চেয়েছেন।
গত ২৫ এপ্রিল রাতে ভেড়ামারা থানার ফরিদাবাদ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমানকে কুপিয়ে খুন করে বখাটেরা। জানা যায়, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাতনিকে বখাটেরা উত্ত্যক্ত করায় মজিবর রহমান ও তার ছোট ভাই মিজানুর রহমান তার প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে বখাটেরা দু’জনের উপর হামলা চালায়। তারা মজিবর রহমানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে। দু’দিন পর ২৭ এপ্রিল মিজানুর রহমানও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় মজিবর রহমানের ছেলে ভেড়ামারা থানায় ৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত মাত্র দু’জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে থানা সূত্রে বলা হয়েছে।
১১ মে দৌলতপুর উপজেলা যুবলীগ নেতা আক্কাস আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। পরিবারের সদস্যরা জানান, ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কের প্রাগপুর মাঠের মধ্যে আক্কাস আলীকে হত্যা করা হয়। তারা বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। ১৩ মে নিহতের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম স¤্রাট আসামিদের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি জানান, তিনি এজাহারে আসামিদের নাম উল্লেখ করলেও পুলিশ তাদের নাম বাদ দিয়ে অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জনকে আসামি করে মামলা গ্রহণ করে। এ পর্যন্ত পুলিশ কোনো আসামিকে ধরেনি। তিনি মামলায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে, থানার পক্ষ থেকে বলা হয় যে, এ হত্যাকা-ের সাথে কারা জড়িত সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তদন্ত চলছে। সন্দেহভাজন দু’ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
২০ মে কুষ্টিয়া শহর থেকে কিছু দূরে বটতৈলের শিশির মাঠ নামক স্থানে হোমিও চিকিৎসক মীর সানোয়ার রহমান সানাকে হত্যা করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। তারা মীর সানোয়ার ও তার সাথে থাকা কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামানকে চাপাতি দিয়ে কোপায়। মীর সানোয়ার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুরুতর আহত হন সাইফুজ্জামান। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। কিন্তু তাদের এ দাবি অস্বীকার করে পুলিশ। গত ২৫ দিনেও পুলিশ যেমন এ হত্যার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি তেমনি কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি। নিহতের ভাই মীর আনিসুর রহমান বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ এ হত্যাকা-ে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করছে। তাহলে হত্যাকা- ঘটাল কারা?
একই দিন বটতৈলের কবুরহাটে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে নিহত হয় নাইম নামের এক স্কুল ছাত্র। আহত হয় তার সঙ্গী। পুলিশ বাদী হয়ে পরদিন বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। বোমা বিস্ফোরণের রহস্যও পুলিশ বের করতে পারেনি। মীর সানোয়ার হত্যার সাথে এ বোমা বিস্ফোরণ ঘটনার কোনো যোগসূত্র আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কুষ্টিয়া মডেল থানা সূত্রে বলা হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে বিরোধে শাহিন আলি নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। গত ২৬ মে রাত সাড়ে বারোটার দিকে সদর উপজেলার বড় আইলচারাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইলচারা ইউনিয়ন পরিষদ পরিষদ নির্বাচনে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব থেকে এ ঘটনা ঘটে। নির্বাচনে নৌকা সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোতালেব হোসেন পরাজিত ও বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। নিহত শাহিন আলি নৌকার সমর্থনে প্রকাশ্যে কাজ করেন। সে কারণেই প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ হত্যার ঘটনায় ২১ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ১২ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ তার মধ্যে ৫ আসামিকে গ্রেফতার করেছে।
জেলায় একের পর এক খুন, হত্যা মামলার কারণ উদ্ঘাটনে ব্যর্থতা, আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় নিহতদের পরিবার ও স্বজনরা ক্ষুব্ধ, হতাশ। মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের দায়িত্ব পালন নিয়ে। হত্যা মামলাগুলোর ক্লু উদ্ঘাটনে পুলিশ আরো সক্রিয় ও আন্তরিক না হওয়ায়, প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার করতে না পারায় ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে জেলাবাসী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।