পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শুরু হলো দূর্গাপূজা। গতকাল শুক্রবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা। এদিন দুর্গতিনাশিনী দেবীর অধিষ্ঠান, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা।
ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে গতকাল ষষ্ঠমীতিথিতে মন্ডপে মন্ডপে দেবীর অধিষ্ঠান হয়। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে ছিল ষষ্ঠ্যাদি। এ সময় বেলতলা কিংবা বেলগাছের নিচে দেওয়া হয় ষষ্ঠীপূজা। সল্পব্দ্যায় দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস ছাড়াও সব মন্ডপে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন করা হয়। সল্পব্দ্যায় বিশেষ আলোকসজ্জাসহ অনেক মন্ডপে বিশেষ প্রার্থনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ শনিবার মহাসপ্তমী। সকালে ত্রিনয়নী দেবীদুর্গার চক্ষুদান করা হবে। এরপর সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদি ও সপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এভাবে উৎসব চলবে আগামী মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত।
মহাষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব। সকাল থেকে মন্দিরে মন্দিরে ভক্তরা ভিড় করছেন। বছর ঘুরে দেবীর আগমনিবার্তায় উৎসবের আমেজ এখন হিন্দু বাঙালির প্রাণে। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি এলাকায় এখন সাজসাজ রব। আলোকোজ্জল হয়ে উঠেছে নগর, গ্রাম ও পাড়া-মহল্লা। সর্বত্র গড়ে উঠেছে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির অসামান্য মেলবন্ধন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। বহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবির সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব। রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গা পূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকাল বোধন। অকাল বোধন কেন জানতে চাইলে, পুরোহিতরা বলেন, দুর্গা দেবীর প্রকৃত আগমনের সময় চৈত্র মাস। অর্থাৎ বসন্ত কাল। চৈত্র মাসে যে দুর্গা পূজা হয় তাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা। তবে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে শারদীয় পূজাই সবচেয়ে বড় উৎসব।
শাস্ত্র বলছে, এবার সপ্তমী, অর্থাৎ দেবীর আগমনের দিন শনিবার এবং ফেরার দিন মঙ্গল হওয়ায় দুর্গা এবার আসছেন ঘোটকে বা ঘোড়ায় চেপে, একই বাহনে তিনি ফিরবেন। দুর্গা ঘোড়ায় চড়ে এলে বা গেলে তার ফল হয়- ‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’। অর্থাৎ- সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর শঙ্কা। পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, মায়ের ঘোড়ায় চেপে আসা অমঙ্গলের লক্ষণ। কিন্তু আমরা প্রার্থনা করব, করুণাময়ী মা যেন সব অকল্যাণ থেকে আমাদের গোটা পৃথিবীকে রক্ষা করেন। আমরা পূজায় প্রার্থনা করব, পৃথিবীর সকল প্রাণ প্রকৃতির জন্য।
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল বলেন, দুর্গোৎসব যেন সবাই নির্বিঘেœ উদযাপন করতে পারেন, তার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নিয়েছেন। গতকাল শনিবার থেকে দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। তবে আমরা তো শুধু মায়ের আরাধনাই করি না, একইঙ্গে ভাতৃত্ব আর প্রীতির বার্তাও ছড়াতে চাই এই পূজা উৎসবের মাধ্যমে। সমৃদ্ধি কামনা করি দেশ ও জাতির। দশভ‚জা দুর্গার শক্তি রূপের আরাধনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এবার ধর্মান্ধতা, সা¤প্রদায়িকতা ও সহিংসার বিনাশ চেয়ে বিশেষ প্রার্থনা করবে বলেও জানান তিনি।
গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বিশেষ শ্রেণিভুক্ত তিন মন্দির রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা মন্ডপে যান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। সোমবার বিকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে পূজার শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের পর শুরু হবে মহাসপ্তমীর পূজা। রোববার মহাঅষ্টমী পূজা, সেদিন হবে সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে হবে কুমারী পূজা। সোমবার সকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে হবে মহানবমী পূজা। আর মঙ্গল সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। সেদিন বিকাল ৩টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে বের হবে মূল শোভাযাত্রা। পরে নগরীর ওয়াইজঘাট, তুরাগ, ডেমরা, পোস্তগোলা ঘাটে হবে প্রতিমা বিসর্জন। সারা দেশে মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যে নিরঞ্জন (প্রতিমা বিসর্জন) শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ।
দুর্গোৎসব চলাকালে পূজা মন্ডপগুলোতে প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতি হবে। এছাড়া আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। দুর্গাপূজা ঘিরে হিন্দু পরিবারগুলোতে চলছে পরিবারের সদস্য ও স্বজনের জন্য কেনাকাটা। ঘরে ঘরে চলছে খই, মুড়ি ও তিলের নাড়–, নারিকেলি ও হরেক রকমের মিষ্টান্ন তৈরির পর্ব।
এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি মন্ডপে দুর্গা পূজার আয়োজন হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে ৪৮৩টি বেশি। রাজধানীতে ২৩৭টিসহ ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ২৭১টি মন্ডপে এবার পূজা হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৪৫৬টি, সিলেটে ২ হাজার ৫৪৫টি, খুলনায় ৪ হাজার ৯৩৬টি, রাজশাহীতে ৩ হাজার ৫১২টি, রংপুরে ৫ হাজার ৩০৫টি, বরিশালে ১ হাজার ৭৪১টি, ময়মনসিংহে ১ হাজার ৬৩২টি মন্ডপে দুর্গা পূজা এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।