Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ট্রানজিটের প্রথম জাহাজ বাংলাদেশে

প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৬ পিএম, ১৫ জুন, ২০১৬

নূরুল ইসলাম ও হুমায়ূন কবির (আশুগঞ্জ সংবাদদাতা) : প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। তড়িঘড়ি করে শুরু হল ট্রানজিট সুবিধার আওতায় ভারতীয় পণ্য পরিবহন। ট্রানজিটের আওতায় এক হাজার টন স্টিল শিট নিয়ে ভারতীয় পণ্যের জাহাজ গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ আন্তর্জাতিক নৌবন্দরে নোঙর করেছে। আশুগঞ্জ আন্তর্জাতিক নৌবন্দরের পরিদর্শক মো: শাহ আলম জানান, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনে এই প্রথমবারের মতো প্রতিটনে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা হারে মাশুল আদায় করা হবে। অথচ ট্রানজিট সংক্রান্ত কোর কমিটি এই মাশুল ১ হাজার ৫৪ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল। ভারতকে সুবিধা দিতে তা কমিয়ে ১৯২ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ট্রানজিটের মাধ্যমে চোরাচালান বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাতে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। একই সাথে ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রাকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে সংশ্লিষ্টদের।  
জানা গেছে, ট্রানজিটে অভ্যন্তরীণ জাহাজের জন্য নির্ধারিত সব ধরনের চার্জ ও ফি ট্রানজিট পণ্য থেকে আদায় করবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এর মধ্যে ভয়েজ পারমিশন ফি, পাইলট ফি, বার্দিং (অবস্থান) ফি, ল্যান্ডিং ফি, চ্যানেল চার্জ ও লেবার হোলিং মিলে ভারতের প্রথম ট্রানজিটের পণ্যবাহী এই জাহাজ থেকে বাংলাদেশ পাবে দুই লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৫ টাকা। আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে এসব পণ্য স্থানীয় ট্রাকের মাধ্যমে লোড-আনলোড করে ভারতের ত্রিপুরাসহ সাতটি রাজ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আশুগঞ্জ আন্তর্জাতিক নৌবন্দর হয়ে ভারতের ‘সেভেন সিস্টারর্স খ্যাত’ পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্য পরিবহন শুরু হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌযান কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে দুই দফায় মাশুল ছাড়াই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল এবং খাদ্যশস্য ট্রানজিট করে ভারত। আনুষ্ঠানিক ট্রানজিটের আওতায় এই প্রথম বাংলাদেশের আনবিস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে জাহাজটি বন্দরে এসেছে। এক হাজার চার টন এসএস পণ্য নিয়ে নিউটেক-৬ নামে জাহাজটি কলকাতা থেকে গত ৩ জুন রওনা করে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে স্টিল জাতীয় এসব পণ্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পরিবহন শুরু করা হবে। এ সময় নৌপরিবহনমন্ত্রী মো: শাজাহান খান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিটি) নির্মাণ এবং আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। কিন্তু এসব অবকাঠামো নির্মাণের আগেই ভারতীয় পণ্য পরিবহন শুরু হওয়ায় অভ্যন্তরীণ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। সূত্র জানায়, আইসিটি নির্মাণের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রস্তুতি হিসেবে ট্রানজিটের জাহাজের জন্য আশুগঞ্জ বন্দরে পৃথক জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। যা বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ৩ হাজার ৩৬১ বর্গফুটের এ জেটিতে একই সঙ্গে দুটি জাহাজ ভিড়তে পারবে। এ ছাড়া ৫০০ মিটার আরসিসি (ঢালাই) সংযোগ সড়ক, গুদাম, পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। এ বন্দর ব্যবহার করে সীমিত আকারে পণ্য পরিবহন করা যাবে। এদিকে, পর্যাপ্ত অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াই নামমাত্র প্রস্তুতিতে ট্রানজিট পণ্য পরিবহন শুরু হল। অথচ ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর (আইসিটি) নির্মাণ কার্যক্রম। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া সড়কের অবস্থাও ভালো না। আশুগঞ্জ আইসিটি নির্মাণ জটিলতা নিরসনে সম্প্রতি নৌ মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি ওই এলাকা পরিদর্শন করে। ওই কমিটি ভূমি সংকট সমাধানে সরকারি ভূমির পাশাপাশি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ এবং ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওয়াপসকোর দাখিল করা মাস্টার প্ল্যানে পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনে প্রতিটনে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা মাশুল আদায় করা হবে। ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজকে বিদেশি হিসাবে নয়, দেশের প্রচলিত ফি ও চার্জ পরিশোধ করতে হবে। অথচ গত বছর ট্রানজিট নিয়ে যে কোর কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটি প্রতি টনে ১ হাজার ৫৮ টাকা ট্রানজিট ফি নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল। তৎকালীন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ওই কোর কমিটির প্রধান ছিলেন। জানা গেছে, ট্রানজিটের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেই কোর কমিটি টন প্রতি ১ হাজার ৫৮ টাকা ফি নির্ধারণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার ভারতকে সুবিধা দিতে সেই টাকা কমিয়ে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা নির্ধারণ করে। এই টাকা থেকে কাস্টমস পাবে ১৩০ টাকা, সড়ক ও জনপথ পাবে ৫২ টাকা এবং বিআইডব্লিউটিএ পাবে ১০ টাকা।  
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, নদীপথে বিভিন্ন প্রকার মাদকসহ ভারতীয় পণ্যের চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। সেখানে বৈধ ট্রানজিটের মাধ্যমে চোরাচালান বহুগুণে বেড়ে যাবে। প্রথম প্রথম নিরাপত্তার অজুহাতে নজরদারি থাকলেও পরে এর কোনোটাই থাকবে না। মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান বেড়ে গেলে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে দেশের অর্থনীতিতে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সাইফুল ইসলাম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ভারতীয় জাহাজ বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করার সাথে সাথে এর যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের। ভারতীয় জাহাজ আশুগঞ্জ আন্তর্জাতিক নৌবন্দর পর্যন্ত আসতে মোট ৫টি চেকিং পয়েন্ট আছে। সেগুলোতে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ মালামাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শুল্ক নির্ধারণ করবেন। নৌ পুলিশও এসময় যাবতীয় তল্লাশি করতে পারবে। এসব কারণে চোরাচালানের সুযোগ হবে না উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, সব কিছু বিবেচনা করেই তো তাদেরকে ট্রানজিটের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটএ’র ওই কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে গত মঙ্গলবার আরও একটি কোম্পানীকে ট্রানজিটের অনুমতি দেয়া হয়েছে। স্টিলের গার্ডার নিয়ে এবার আসবে ভারতীয় একটি জাহাজ।    
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ট্রানজিটের বড় অসুবিধা হলো ভারতীয় জাহাজ থেকে শুরু করে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে পথে পথে পাহারা দিতে হবে। পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশের নৌ সীমানায় প্রবেশ করার পর ওই জাহাজের নিরাপত্তার জন্য নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডকে সতর্ক থাকতে হবে। এরপর মালামাল খালাস করা এবং ট্রাকে তোলার পর সেই ট্রাক যেপথে যাবে সে পথেও বসাতে হবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একজন কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে পথিমধ্যে মালামাল লুট হলে বা কোনোভাবে খোয়া গেলে বিরাট অসুবিধায় পড়তে হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করলে ট্রানজিটের মাশুল আরও কয়েক গুণ বেশি হওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, এটা অনেকটা লাভ ছাড়া ব্যবসার মতোই।



 

Show all comments
  • ইব্রাহিম ১৬ জুন, ২০১৬, ১২:২০ পিএম says : 0
    আর কিছু বাকি আছে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রানজিটের প্রথম জাহাজ বাংলাদেশে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ