পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মহাখালির তিতুমীর কলেজ থেকে গুলশান এক নম্বর পর্যন্ত রাস্তার যান চলাচল খুব ধীরগতিতে চললেও এ পথ শেষ পর্যন্ত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। গাউসুল আযম কমপ্লেক্সে ছিল বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সর্বস্তরের প্রতিনিধি, মাদরাসা শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও পীর-আউলিয়াদের শুকরিয়া সম্মেলন। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মাদরাসা শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, দাবি-দাওয়া আদায় ইত্যাদি বিষয় সামনে রেখে দেশের প্রায় ৪০ হাজার পীর-মাশায়েখ, মাদরাসা প্রিন্সিপাল, সুপার, শিক্ষক ও কর্মচারী প্রতিনিধিরা গতকাল (শনিবার) এসে জমায়েত হয়েছিলেন তাদের ঠিকানা জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কমপ্লেক্সে। ভেতরের বিশাল প্যান্ডেল, সুপরিসর বাগান, শূন্যস্থান, সাহান, চত্বর ও রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ মসজিদ ভরে উপস্থিতি উপচে পড়ে। কানায় কানায় পূর্ণ জমিয়াত কমপ্লেক্স ছাড়িয়ে ভীড় চলে যায় সামনের ওয়্যারলেস গেইট, টিবি গেইট, আশপাশের অফিস, দোকান, ভবনের সম্মুখস্থ ফুটপাত পর্যন্ত। স্থানীয় সব মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেন স্থান না পাওয়া বহু প্রতিনিধি ও মেহমান। মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ছাড়াও আশপাশের ভবনের নিচতলা ও সামনের নিরাপদ জায়গায় দোকান পাট, অফিস-আদালত ইত্যাদিতে চেয়ার, টুল ও বেঞ্চি পেতে মহিলা শিক্ষক ও প্রতিনিধিদের বসতে দেন স্থানীয় জনগণ। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাওয়া পুলিশ, শত শত স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তায় গোটা এলাকার যান চলাচল সীমিত আকারে হলেও চালু রাখা হয়।
গত পরশু রাত থেকে আলেম-ওলামারা গাউসুল আজমে আসতে শুরু করেন। মসজিদ ও মেহমানখানায় হাজার তিনেক আলেম রাতযাপন করেন। সকাল ৭টা থেকে মাইক চালু হলে শুরু হয় তিলাওয়াত, হামদ, নাত ও ইশকে রাসূল (সা:)-এর হৃদয়কাড়া তারানা। আলোচকগণ একে একে বক্তৃতা করেন। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। উপস্থিত হন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সোফা ও আসনে উপস্থিত হাজার হাজার আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও নানা অধ্যাত্মিক ঘরানার আউলিয়াগণ। প্রাণখুলে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, এমপি, শিক্ষা সচিব, বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। মন্ত্রীদ্বয় বলেন, এত বিপুল ও কোয়ালিটিসম্পন্ন সমাজ ও ধর্মীয় অঙ্গনের মুরব্বী-নেতৃবর্গ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানীতে এসে সমবেত হয়েছেন এর নজির পাওয়া মুশকিল। প্রধানমন্ত্রী ইসলাম ও মুসলমানের প্রতি সর্বোচ্চ আন্তরিক। দেশে শান্তি, স্থিতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আলেম-ওলামা, ইমাম ও পীর-মাশায়েখদের ভূমিকা অসামান্য। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পতাকাতলে সমবেত কোটি কোটি মানুষের মুরব্বী আলেম ও পীর-মাশায়েখকে সম্মান জানিয়ে তাদের খিদমত করে মন্ত্রী হিসেবে আমরা ধন্য। আমরা সৌভাগ্যবান যে, এত বিপুলসংখ্যক পীর আউলিয়ার দোয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নেতৃবর্গ পাচ্ছেন। আমরা আশা করব আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন সাহেব এ সংগঠনকে দৃঢ় নেতৃত্ব ও নীতি আদর্শের আলোকে বহুদূর এগিয়ে নেবেন।
সমবেত প্রতিনিধিরা দলে দলে জিয়ারত করেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের রূপকার, মাদরাসা শিক্ষক, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের সৌভাগ্য ও সম্মানের প্রতীক, সাবেক ধর্ম এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান এর কবর। মসজিদ সংলগ্ন এই সাধক-পুরুষের কবর জিয়ারত শেষে তারা হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাচ্ছিলেন নিজ নিজ ঠিকানায়। ধারণাতীত মানুষের আগমনে সত্যই ছিল কষ্টকর চাপ। খাবার-দাবারও শেষ হয়ে গিয়েছিল আশপাশের রেস্টুরেন্টের। সম্মেলনের বিশাল আয়োজন থেকেও খাবার সংগ্রহ কঠিন মনে করে অনেকে রুটি কলার উপর ভরসা করেন। ৩০ হাজারের বেশি সদস্যকে স্বেচ্ছাকর্মীরা খাবার পৌঁছে দেন। অন্যরাও বঞ্চিত হননি। বিপুল পরিমাণ তাবারক থেকে বিকাল পর্যন্ত রয়ে যাওয়া কেউই বঞ্চিত হননি। জোহরের নামাজ পড়ে সবাই ঘরে ফিরতে শুরু করলেও মাগরিব পর্যন্তই প্রতিনিধিদের কমপ্লেক্স ত্যাগ করে যাওয়া অব্যাহত থাকে। গত পরশু থেকে সারাদেশের সকল পথ যেমন এসে মিশেছিল মহাখালি গাউসুল আজমের দিকে। গতকাল আবার সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলাদেশে।
গাউসুল আজমে অনুষ্ঠিত এ বিশাল মিলনমেলা আয়োজনে সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও নিপুণ পরিচালনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার জন্য মেহমানগণ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কর্তৃপক্ষের প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। সভাপতির গতিশীল নেতৃত্ব ও সার্বিক তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি তারা সফল মহাসচিব প্রিয়মুখ প্রিন্সিপাল আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজির অক্লান্ত পরিশ্রম, নিখুঁত কর্মতৎপরতা ও উদ্যমী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। দীর্ঘদিন ধরে এ সম্মেলন উপলক্ষে তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন। অনুষ্ঠানে তার দক্ষতা ও আন্তরিকতার ছোঁয়া ছিল সুস্পষ্ট। প্রতিনিধিরা জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে কর্মরত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবীর আন্তরিকতার আলোচনায়ও ছিলেন পঞ্চমুখ। পুলিশ, র্যাব ও নিরাপত্তা বা আইন-শৃঙ্খলার সাথে জড়িত অন্যান্য কর্মীদের প্রতিও তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। সম্মেলনস্থলে দেশের নানাস্থান থেকে আগত আলেমদের সাথে কথা বলে তাদের মনোভাব ও মতামত জানার সুযোগ হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।