দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পবিত্র ৬ই রমজান। ১২ শরীফের মহান ইমাম-রাসূল বংশের এ শ্রেষ্ঠসস্তান, বর্তমান সময়ের মোজাদ্দেদ বা সংস্কারক হযরত শাহ্ সূফী মীর মাস্উদ হেলাল (রঃ) এর-৩৪-তম ওরশ শরীফ। সাধকের মৃত্যুই মিলন তার প্রভু আল্লাহর সাথে। তাই এই দিন ওরশ হয়ে থাকে। সূফী সেই যিনি কঠোর সাধনার দ্বারা নিজেকে পবিত্র করেছেন। আল্লাহর নিকট শাহিদী দরজা বড় প্রিয়। তিনি তার হাবীব (সাঃ) কে তাই এ দরজা দান করেছেন। ১২ শরীফের ইমাম (রঃ) রাসূল প্রেমে মোহাম্মদী প্রচারে আজকের এ পবিত্র দিনে শহীদ হন। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর রাস্তায় যারা শহীদ হন তাদের মৃত মনে কর না, আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা জীবিত ও রিযিক প্রাপ্ত।” (আল-কোরআন) “বারো শরীফের ইমাম” এটা উনার নিজের নেয়া সম্মান সূচক উপাধি নয় কঠোর সাধনা ও গভীর রাসূল প্রেমের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূল কর্তৃক এ সম্মানে সম্মানীত হন। বারো শরীফের জন্ম রাসূল (সাঃ) এর জন্মের সাথে জড়িত, তাই ১২ই রবিউল আউয়াল ১২ শরীফের হৃদয়। এটাই এ দরবারে বড় অনুষ্ঠান। ১২ শরীফ শেষ জামালার মানুষের শাস্তি ও মুক্তির জন্য একটা সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ- তরীকা বা পথ। যা রাসূলের নিজস্ব বিষয়। দীর্ঘ বছর শরীয়ত মেনে উনি দেখলেন আল্লাহকে পাওয়া গেল না। তখন ওছিলা স্বরূপ মুরিদ হলেন-একজন কামেল-হযরত শেখ খলিল উদ্দিন (রঃ) এর নিকট। কারণ আল্লাহ বলেন; “তোমরা ঈমাম আনার পর আমাকে পাবার জন্য ওছিলা অšে¦ষণ কর এবং এ পথে প্রাণপন চেষ্টা কর।” মুরিদ হবার পর উনার ইবাদতের পদ্ধতি পরিবর্তন হলো। প্রকৃত সাধনা শুরু হলো। নিজ মুর্শিদের প্রতি ভালোবাসা, গভীর রাসূল প্রেম ও কঠোর সাধনা এবং আল্লাহর দয়ায় কামেলিয়াতের উচ্চস্বরে আরোহন করেন। আল্লাহ কর্তৃক ওলী আল্লাহ উপাধী প্রাপ্ত হন। আল্লাহ বলেন, জেনে রেখ নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওলী (বন্ধু)র কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। আরো বলেনঃ আল্লাহর ওলীরা আদৌ মরে না। তাই তারা মারাযাবার পরও তাদের দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়। বিখ্যাত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) বলেছেন; “আউলিয়া কেরামগণ আল্লাহর বন্ধু, তাদের মাযার জিয়ারত করে ইহকালেও পরকারের উপকার অর্জন করতে পারবে।” (দ্রঃ ফতয়ায়ে শামী) বিখ্যাত সূফী সাধক মাওলানা রুমী (রাঃ) বলেছেনঃ উচ্চ স্তরের কামেলদের সাথে সাধারণের তুলনা করো না। যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে একই রূপ দেখা যায়।ঃ (দ্রঃ মসনবী) আল্লাহ বলেন; ‘যে ব্যক্তি আমার ওলীর সাথে শত্রুতা পোষন করে; তাঁর প্রতি আমার যুদ্ধ ঘোষণা”। (বুখারী ও মুসলিম)
এসব ওলীদের মধ্য থেকে কেহ হন জামানার মোজাদ্দেদ। এদের সম্পর্কে রাসুল বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতের জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর প্রারম্ভে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যিনি ইসলাম ধর্মের সংস্কার সাধন করবেন” (আবু দাউদ শরীফ)। আজ এ শেষ জামানায় পথ ভ্রষ্ঠ মানুষের জন্য বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য আল্লাহ ও রাসূল কর্তৃক একজন আধ্যাত্মিক নেতার আবির্ভাব হবে। তিনিই হবেন শেষ জামানার মহানায়ক হযরত ইমাম মাহ্দী (আঃ)। ইসলাম ধর্মের জ্ঞানী ও চিন্তাশীলদের মতে ১৪০০ হিজরীর পর ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে; ইসলাম ধর্মের সংস্কার সাধন করতে ইসলাম বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে। বারো শরীফের ইমাম (রাঃ) বলেছিলেনঃ মাহ্দী সেই যিনি রাসূল কে অনুসরণ-অনুকরণ করবেন; যিনি রাসূলকে ভালবাসবেন, আর রাসুল ও যাকে প্রতিনিধি মনোনীত করবেন। ইমাম মাহদীর পরও তার খেলাফত চলতে থাকবে। এক একজন এক এক দিকে এগিয়ে যাবে। তবে প্রথম যিনি “মোহাম্মদী” প্রচার করবেন তিনিই ইমাম মাহ্দী। তার উপর রাসূলের রাহানী সমর্থন থাকবে এবং খেলাফত পাবেন। রাসূলকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ইব্রাহিমী কতদিন চলবে? উনি তখন চাঁদের দিকে তার শাহাদত অঙ্গুলি নির্দেশ করেন। সেদিন ছিল চাঁদের ১৪ তারিখ। অর্থাৎ ১৪শ হিজরী পর ইব্রাহিমী বিদায় নিবে। রাসূলকে দ্বীন ইসলামের মধ্যে থেকে ইব্রাহিমী প্রচার করতে বলা হয়। তাই আমরা যেসব ফরজ এবাদত করে থাকি এ সবই ইব্রাহিমী বিষয়। তাইতো রাসূল মক্কা ছেড়ে মদীনায় রয়ে গেলেন। ১২ শরীফ তথা মোহাম্মদী তরীকা ছিল সময়ের বিষয়। অতীতে কেবল বড় পীর সাহেব কিছুদিন ১২ শরীফ করেন পরে রাসুল উনাকে এটা বন্ধ রাখতে বলেন সময় হয় নাই বলে। ১২ শরীফের ইমাম (রঃ) এর গভীর রাসূল প্রেম ও কঠোর সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ ও রাসুল তাকে ১৯৭৫ এর ২৫শে আগষ্ট ৮ই ভাদ্র ১৬ শাবান সোমবার বারো শরীফ তথা মোহাম্মদী তরীকা দান করেন।
এ প্রসঙ্গে ইমাম (রঃ) বলেছিলেনঃ “বলা হল এটা রাসূল এর আওয়াজ। ১৯৭৫ এর ২৫শে আগষ্ট ১৬ই শাবান ৮ই ভাদ্র সোমবার তাহাজ্জুদ পড়ে ঘড়ে বসে একটু তন্দ্রাভাব তখন স্পষ্ট আওয়াজ এলো, রাসুল (সাঃ) বললেন; “এখন থেকে মোহাম্মদ রাসুল আল্লাহ বলো, মোহাম্মদী প্রচার করো, আর যখন যা প্রয়োজন আমার কাছে চাও।” মাত্র তিনটি কথা।” (ডাইরী -৯-৬-৮২)। যে বিষয়ে যার বলার হক এবং দায় বর্তায় সেই বিষয়ে তার চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তির গ্রহণ যোগ্যা থাকে না। তাই এরপর হতে তিনি এ তরীকায় বায়াত করতে থাকে-১২ শরীফ প্রচার করতে থাকেন-১২ শরীফ দরবার ও জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। সর্ব ধর্মের মানুষকে তিনি এ তরীকার দাওয়াত দিতেন। মানুষকে ভাল বাসতেন। বিশেষ করে দরিদ্র অসহায় মানুষকে। এ তরীকার মূল মন্ত্র রাসূলকে সর্বাপেক্ষা বেশী ভালবাসা এবং রাসূলের নিজস্ব বিষয়গুলোকে ভালবেসে আত্মার শান্তি ও মুক্তি পথ করে যাওয়া। বেশী করে দরুদ পড়ার জন্য বলতেন। আল্লাহ নিজে দরুদ পড়েন এর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে? তাই হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, “যদি আল্লাহর জিকির ফরজ না হতো তা হলে আমি সব এবাদত বাদ দিয়ে কেবল দরুদ পাঠ করতাম।” (বুখারী) বড় পীর সাহেব (রঃ) বলেছেনঃ “দরুদ পাঠের জন্য আমি গাওছুল আযম হযেছি।” তাই তার কাব্য ‘দেওয়ানে গাওছিয়া’ তে বলেছেনঃ কবরে আমার দেহ যখন ধূলিকণায় পরিণত হবে। তুমি সেই প্রত্যেকটি ধুলিকণা থেকে দরুদ শুনতে পাবে।” গোড়ামী ধর্মান্ধতা-কুসংস্কার এসব গুলো পছন্দ করতেন না। কোরান হাদীসের যুগধর্মী ব্যাখ্যা দিতেন। আধুনিক শিক্ষার সাথে ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় এর জন্য বলতেন। রাসূল প্রেম সৃষ্টি করতে বলতেন। মানুষকে ভালবাসতে বলতেন। তাই বলেছিলেনঃএ দরবার সব ধর্মের মানুষের জন্য খোলা-কেবল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে আসতে হবে। বর্তমান সৌদি ওয়াহিবীরা যে ধর্মের কতটা ক্ষতি করেছে তা বর্তমান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সোলমান ওয়াশিংটনে এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন যে, ৭০ এর দশক হতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মসজিদ মাদ্রাসায় অর্থ ঢেলে ওয়াহাবি মতাদর্শ প্রচার করা হয়। যার ফলে এসব আলেম ওলামাদের মধ্যে মিলাদ-মাহফিল, দরুদ ও ওলী আল্লাহ বিদ্বেষ; নামাজের পর মোনাজাত; ঈদে মিলাদুন্নবী পালন এসব বিরোধীতা দেখা দেয়। (দ্রঃ ৩০-৩-২১০৮ দৈ প্রথম আলো ও ইনকিলাব)
আসেন আমরা যেন ভুল না করি। রাসূলকে ভালোবেসে ১২ শরীফের পতাকা তলে আশ্রয় নেয়। ইমাম (রঃ) বলেছিলেনঃ যতদিন না মুসলমানরা মোহাম্মদীতে না আসবে তত দিন একত্রিত হতে পারবে না। একমাত্র মোহাম্মদী পারবে বিশ্বশান্তি আনতে। তাই ইব্রাহিমী থেকে মোহাম্মদীতে আসতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।