Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মা ফাতেমাতুজ্জাহরাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘মা’

মো: শিবলী নোমানী ইবনে সাদেক খান | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

আরবি ভাষায় উম্মুন অর্থ ‘মা’। অর্থাৎ আপনি যদি আরবিতে মা লিখতে চান, তাহলে আপনাকে মাত্র দু’টি অক্ষর ব্যবহার করতে হবে, ১টি আলিফ, অপরটি মিম। আল্লাহ লিখতে আমরা যে অক্ষরটি প্রথমে ব্যবহার করি তা হচ্ছে ‘আলিফ’ আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম লিখতে প্রথমে যে অক্ষরটি ব্যবহার করি, তা হচ্ছে ‘মিম’। এবার ভেবে দেখুন, আল্লাহ এবং তাঁর হাবীবের জাতি নামের আধ্যাক্ষরের সমন্বয়ে যেই নামটি উচ্চারিত হয়, তা হচ্ছে উম্মুন বা মা। হযরত আদম আলাইহিস সালাম এবং মা হাওয়া আলাইহিস সালাম ব্যতীত পৃথিবীর সকল মানুষই কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। আর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম মা মারইয়াম আলাইহিস সালামের একমাত্র সন্তান। পিতৃহীন এক বিস্ময়কর বালক! জন্মের পরেই নিজের মায়ের পবিত্রতা বর্ণনা করে বলেন, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ আমাকে নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন এবং আমাকে কিতাব প্রদান করেছেন (ত্রিশ বছর বয়সে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম কিতাবপ্রাপ্ত হন) আর আমার মায়ের প্রতি অনুগত থাকতে বলেছেন। মায়ের প্রতি অনুগত থাকা সন্তানের জন্য ফরজ। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন এবং হাদিস শরীফে বহু হুকুম-আহকাম রয়েছে। আমি যে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করতে চাচ্ছি, তা হচ্ছে, এ যাবৎ পৃথিবীতে যত মা এসেছেন অথবা আসবেন তাদের মধ্যে কে সর্বশেষ্ঠ? এক কথায় উত্তর, মা ফাতেমাতুজ্জাহরা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন তিনি মায়েদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ? এর উত্তরে বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ, জ্ঞানী-গুণী, পন্ডিত ব্যক্তিগণ হয়তো শত সহস্র ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। যেহেতু আমি সাধারণ, তাই আমার কাছে এত উত্তর নেই। আর খুব বেশি উত্তরের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। শ্রেষ্ঠ মা হওয়ার জন্য যে যোগ্যতাটা থাকা প্রয়োজন, তা হলো সন্তানের প্রতি ভালোবাসা। এখন হয়তো আপনি বলবেন, সব মা-ই তাদের সন্তানকে ভালোবাসে, এতে করে শ্রেষ্ঠ মা হওয়া যায় কিভাবে? এর উত্তর, সব মা তার নিজের জন্ম দেয়া সন্তানকে ভালোবাসে, এ কথা সবাই জানে এবং বিশ্বাস করে। আর মা ফাতেমাতুজ্জাহরা (রা:) উম্মতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামের সকল সন্তানকে ভালোবাসেন। এ পর্যায়ে একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল, এক যুবক সাহাবী মৃত্যুশয্যায় শায়িত কিন্তু শত চেষ্টা করেও তাকে কালেমা পড়ানো যাচ্ছে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের কাছে এই সংবাদ পৌঁছামাত্র তিনি ছুটে যান এবং তার মায়ের কাছে জানতে চান, তিনি তার সন্তানের প্রতি কোনো কারণে অসন্তুষ্ট কি না? উত্তরে তার মা বলেন, আমার সন্তানের জন্মের পর তার বাবা মারা যায়, শুধুমাত্র সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে, নিজের সুখ-শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে, বহু কষ্টে লালনপালন করে ওকে বড় করি এবং বিয়ে দেই। একদিন ওর স্ত্রীর কথা শুনে আমার মাথায় এত জোরে আঘাত করে যে, আমার মাথা রক্তাক্ত হয়ে যায়। ঐ দিনই আমি ওকে অভিশাপ দিয়েছিলাম। এ পর্যায়ে আল্লাহর হাবীব অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে, সেই মহিলা সাহাবীকে বললেন, আপনার সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে তা অমার্জনীয় কিন্তু এখন যদি আপনি তাকে ক্ষমা না করেন, তাহলে সে চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে। এ কথা শোনার পরও যুবকের মা বিন্দুমাত্র বিচলিত হন না উপরন্তু সন্তানকে ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা করেন। মায়ের কথা শুনে আল্লাহর হাবীব অস্থির হয়ে উপস্থিত সাহাবীদের বললেন, তোমরা কাঠ জোগাড় করে আগুন জ্বালিয়ে দাও। সাহাবীগণ কাঠ একত্র করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিলেন। এবার মহানবী বললেন, মৃত্যু পথযাত্রী ঐ যুবককে উক্ত আগুনে নিক্ষেপ করো। আল্লাহর হাবীবের কথা শুনে যুবকের মা আঁৎকে উঠেন এবং চিৎকার দিয়ে বলেন, আল্লাহর দোহাই আমার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন না। আল্লাহর হাবীব বলেন, এটা তো দুনিয়ার সামান্য আগুন, আপনি যদি আপনার সন্তানকে ক্ষমা না করেন, তাহলে এর চেয়ে লক্ষ-কোটি গুণ বেশি উত্তপ্ত আগুনে আপনার সন্তান অনন্তকাল জ্বলবে। রাহ্মাতুল্লিল আলামিনের হেকমত বুঝতে পেরে মা তার সন্তানকে ক্ষমা করে দেন। অতঃপর আল্লাহ হাবীবের পবিত্র জবানের কালেমার উচ্চারণ, যুবকের কর্ণকুহর হয়ে হৃদয় এবং মস্তিষ্কের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় পৌঁছে যায়, ঈমানের নূরে নূরান্বিত হয়ে, মহানবীর উপস্থিতিতে কালেমা শরীফ পড়তে পড়তে জান্নাতে চলে যান। এ ঘটনার দ্বারা এটাই প্রমাণ হয় যে, মা তার নিজের সন্তানকে ক্ষমা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকেন, যদিও সন্তান অপরাধী হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শ্রেষ্ঠ মা কে? মা ফাতেমাতুজ্জাহরা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আমাদের একটি দরুদ শিক্ষা দিয়েছেন। যে দরুদকে আমরা দরুদে ফাতেমী বলে জানি। মা আমাদের বলেছেন, তোমরা জুমার দিন; আসর নামাজের পর উক্ত স্থানে বসে ৮০ বার এই দরুদটি পড়বে, ‘আল্লাহুম্মা সাল্লেআলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদানিন নাবিয়্যিল উম্মিয়ি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা’ তাহলে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! যেই ‘মা’ গোটা পৃথিবীর আদম সন্তানের মুক্তির জন্য চিন্তা করেন, তিনিই তো জগতের শ্রেষ্ঠ ‘মা’। আমাদের জাতীয় কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে পারি, ‘বিশ্ব দুলালি, নবী নন্দিনী, খাতুনে জান্নাত, ফাতেমা জননী’।

জান্নাত হলো সকল অপূর্ণতার পূর্ণস্থান। সেখানে প্রত্যেকটি আদম সন্তানের এক বা একাধিক মা থাকবেন যেমন দুনিয়াতে থাকে (জন্মদাতা মা, দুধ মা ইত্যাদি) অথচ হযরত আদম আলাইহিস সালাম এবং মা হাওয়া আলাইহিস সালামের কোনো মা-ই থাকবেন না। তাহলে জান্নাতে কি তাদের মা ডাকার ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যাবে? উত্তর হচ্ছে না। যুক্তিসঙ্গতভাবে তাদের সন্তানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রমণী মা ফাতেমাতুজ্জাহরা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ‘সাইযয়্যেদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ’ যাঁর শিখিয়ে দেয়া দরুদ পড়ে, কোটি কোটি জাহান্নামি জান্নাতে চলে যাবে, আমাদের আদি পিতা-মাতা তো তাকেই স্বগৌরবে মায়ের মর্যাদায় আসীন করবেন। পবিত্র মুহাররম মাসে মায়ের সন্তানদের কুরবানির বিনিময়ে আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি; মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে আমৃত্যু তার ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।-



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ