পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের উত্তরাঞ্চলের তিনটি জেলা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। হাজার হাজার বছর ধরে মাটির নিচে লুকিয়ে রয়েছে কয়লা, বিটুমিন, পাথর, চুনাপাথর, লোহা। রংপুর, দিনাজপুর ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুসন্ধান এই সম্পদগুলোর খনি আবিষ্কার করা হয়। হাজার-লক্ষ-বিলিয়ন ডলার মূল্যের এসব সম্পদ উত্তোলন করে কাজে লাগানো এখন সময়ের দাবি। মাটির নিচে থাকা এই সব সম্পদ ব্যবহার করলে দেশ হবে আরো সম্পদশালী। খনিজ সম্পদগুলো উত্তোলনে দেশের অর্থনীতি’র চেহারা পাল্টে যাবে। উত্তরাঞ্চলের মানুষের দাবি মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা ওই সম্পদগুলো তুলে কাজে লাগানো হোক। খনিগুলো থেকে ‘সম্পদগুলো’ উত্তোলনে একদিকে হাজার হাজার কর্মসংস্থান হবে; অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি উঠবে নতুন উচ্চতায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলাতেই পাশাপাশি অবস্থিত তিনটি এবং রংপুর জেলার ১টিতে পার্মিয়ান যুগের গন্ডোয়ানা কয়লার অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়েছে। খনি অনুসন্ধানের পর উত্তরের অপার সম্ভাবনাময় খনিজ সম্পদ সম্পর্কে সকলেই ওয়াকিবহাল। কিন্তু তারপরও বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি ও মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ছাড়া অন্যান্য খনিজ সম্পদ আহরণে কোন উদ্যোগ ও কার্যক্রম দৃশ্যমান হচেছ না। অথচ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু না হতেই এশিয়া এনার্জি’র মত বিদেশি কোম্পানি ফুলবাড়ী কয়লা খনি দেখিয়ে বিদেশের শেয়ার মার্কেট থেকে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করে যাচ্ছে। আবিষ্কারের পর কয়েক যুগ ধরে পড়ে থাকা খনিজ সম্পদগুলো উত্তোলনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করার পিছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না এ নিয়েও গুঞ্জন রয়েছে সচেতন মহলে। কেননা ভ‚-গর্ভস্থ এসব মহামূল্যবান খনিগুলোর অবস্থান সীমান্ত সংলগ্ন বিস্তৃত এলাকাজুড়ে। তবে অর্থনীতিকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা বিশ্ব ব্যাংকসহ বিশ্বের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পদ্মা সেতুর মত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা হারাতে চান না দেশের মানুষ। কেননা সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারে উত্তরাঞ্চলের খনিজ সম্পদ উত্তোলন করে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন আনা। আর এ কারনেই মাটির নিচে পড়ে থাকা এসব সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় রয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এবং মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি, ফুলবাড়ী উপজেলায় রয়েছে ফুলবাড়ী কয়লা খনি, নবাবগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে দিঘিপাড়া কয়লা খনি, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে খালাশপীর কয়লা খনি, জয়পুরহাট জেলা সদরে রয়েছে- চুনা পাথর খনি এবং জামালগঞ্জে কয়লা খনি। এছাড়াও সাম্প্রতিককালে দৃশ্যমান হওয়া হাকিমপুর (হিলি) উপজেলায় লৌহ খনির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ ভূতাত্তি¡ক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) বিশেষজ্ঞরা। তবে এসকল খনির মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এবং মধ্যপাড়া পাথর খনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির মজুদের পরিমাণ হচ্ছে ৩৯০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ৬ দশমিক ৬৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা কয়লা উত্তোলনের জন্য কোল বেসিনের ৬টি কোল সীম চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ সিমের কয়লার গড় পুরত্ব ৩৬ মিটার। মাত্র ১১৮ থেকে ৫০৯ মিটার গভীরতায় থাকা উন্নতমানের বিটুমিনাস কয়লা উত্তোলনের জন্য ২০০৫ সালের ৪ জুন প্রথম দফায় চীনা প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোটিয়ামের সাথে ৮২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের একটি ম্যানেজমেন্ট এন্ড প্রোডাকশন (এমএন্ডপি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এভাবেই ২য় এবং সর্বশেষ চুক্তির মাধ্যমে চীনা প্রতিষ্ঠানটি কয়লা উত্তোলনের কাজ করছে। বর্তমানে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে লংওয়াল টপ কোল কেভিং সংক্ষেপে এলটিসিসি পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে। একটি সূত্র মতে, ১৯ জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত এক কোটি এক লাখ ৬৬ হাজার ৬৬ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। সর্বশেষ উত্তোলনকৃত কয়লার পরিমাণ আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে। খনি কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র মতে, যে পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে মজুদের সর্বোচ্চ মাত্র ২০ শতাংশ কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হবে। বাকি কয়লা মাটির নিচেই থেকে যাবে। তারপরও চীনা প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক ব্যবসা করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করছে। উল্লেখ্য, উত্তোলিত কয়লা চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে চুক্তিতে নির্ধারিত মূল্যে বড় পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদান কেন্দ্র ছাড়াও বিক্রি করা হচ্ছে ভাটা, ডাইংসহ কয়লা ব্যবহারকারী দেশীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। উন্নত মানের কয়লা হওয়ায় বড় পুকুরিয়ার কয়লার চাহিদা ব্যাপক।
এদিকে ভূ-গর্ভস্থ থেকে কয়লা উত্তোলনের ফলে বিশাল এলাকাজুড়ে মাটি ডেবে গেছে। ইতিমধ্যেই জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে সকল জমি অধিগ্রহণ করেছে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ। যা বিশাল বিলের আকৃতি ধারন করেছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওপেন পিট পদ্ধতি ব্যবহার করে ভূ-গর্ভে থাকা প্রায় সম্পূর্ণ কয়লা উত্তোলনের চিন্তা-ভাবনা করছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবি করেছে। তবে বিষয়টি এখনও আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ওপেন পিট পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হলে স্থানীয় জমির মালিকদের আর বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে লাভ হবে বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি ও দেশের। যদিও ফুলবাড়ী কয়লা খনি থেকে ওপেন পিট পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনে স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ থেকে প্রতিরোধে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। তবে ওপেন পিট পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনে প্রতিবাদি জনগণের মধ্যে কে কিভাবে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর পেছনে কোনো বহিঃশক্তি ও তাদের সাথে স্থানীয় কোনো মহল জড়িত ছিল না তা খতিয়ে দেখার সময় হয়েছে। কেননা ফুলবাড়ী কয়লা খনি’র আন্দোলনে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার মত অনেক উদাহরণ এখন দৃশ্যমান। ওপেন পিট পদ্ধতির প্রতিবাদকারীদের অন্যতম যুক্তি ছিল বাপ-দাদার ভিটে ছাড়বে না। কেননা ওপেন পিট পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের জন্য পূরো ফুলবাড়ী শহরকে স্থানান্তরিত করতে হবে। এজন্য এশিয়া এনার্জি কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমেই নতুন শহর গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসনের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এতসবের পরও এশিয়া এনার্জির সাথে যে চুক্তি হয়েছিল তা দেশের জন্য লাভজনক না ক্ষতিকারক তাও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেছে। কেননা চুক্তি মোতাবেক উত্তোলিত কয়লার পুরোটাই এশিয়া এনার্জি রফতানিসহ ইচ্ছে মত ভোগ করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকার শুধু সামান্য পরিমাণে রয়েলিটি পাবে। উল্লেখ্য, যে ফুলবাড়ী কয়লা খনির ভ‚-গর্ভস্থ মজুদ বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির প্রায় দ্বি-গুণ। পরিমাণে ৫৭২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। আর বড় পুকুরিয়ার মজুদের পরিমাণ হচ্ছে ৩৯০ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
বড় পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ী কয়লা খনির চেয়েও মজুদ বেশি থাকা দিনাজপুর জেলার আরো একটি কয়লা খনি হচ্ছে দীঘিপাড়া কয়লা খনি। পার্বতীপুর উপজেলার পাশেই নবাবগঞ্জ উপজেলায় দীঘিপাড়া কয়লা খনির অবস্থান। বাংলাদেশ ভূ-তাত্তি¡ক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) প্রাথমিক জরিপে প্রায় ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই খনিতে প্রায় ৮৬৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা মজুদ থাকার কথা বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই খনির ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি’র কাজ সম্পন্ন করেছে জার্মানীর ফুগরো কনসালটিং জিএমবিএইচ নামক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানির ভারতীয় অফিসের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। ৬০টি বোরহোল ড্রিলিং যার মধ্যে ১০টি হাইড্রোজিওলজিক্যাল বোরহোল ড্রিলিং করা হয়েছে। খনির সেন্ট্রাল পার্ট থেকে বছরে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপর আরেকটি খনি হচ্ছে রংপুরের খালাশপীর কয়লা খনি ও দীঘিপাড়া কয়লা খনি দুটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানিকে। ও রংপুরের খা প্রাথমিবড় পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জেলার নবাবগঞ্জ ও প্রাথমিক অনুসন্ধান অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। একটি খনি’র ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি’র কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বড় পুকুরিয়ার পাশেই দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় এর অবস্থান। দিনাজপুর জেলার পাশাপাশি ৩টি উপজেলা ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বড় পুকুরিয়া ছাড়া ফুলবাড়ী ও দীঘিপাড়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন এখন সরকারি সিদ্ধান্তের উপর আটকে আছে।
একই অবস্থায় রয়েছে রংপুরের খালাসপীর কয়লা খনির অবস্থান। এই খনির ফিজিবিলিটি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এই খনিতে কয়লা মজুদের পরিমাণ হচ্ছে ৬৮৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ফুলবাড়ী, দীঘিপাড়া ও খালাসপীর কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন তথা খনির উন্নয়নের দেয়া হয়েছে বড় পুকুরিয়া কোলমাইন কোম্পানিকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।