Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশ যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম : চট্টগ্রামে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রসহ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম : বাংলাদেশ এখন যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অন্যের কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই পরিবর্তন করছি। জাতীয় বাজেট ৫ গুণ হয়েছে এবং ৯০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। দেশের উন্নয়নই তার সরকারের একমাত্র লক্ষ্য বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি গতকাল (শনিবার) বিকেলে নগরীর আগ্রাবাদে দেশের প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের (বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র) উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। তিনি একইসাথে চিটাগাং চেম্বারের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধনের আগে বন্দরনগরীর কুয়াইশ এলাকায় দেশে বঙ্গবন্ধুর এ যাবত নির্মিত সর্বোচ্চ ম্যুরাল ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, কদমতলী ফ্লাইওভার ও বাইপাস সড়কের উদ্বোধন করেন। এছাড়া তিনি আউটার রিং রোড প্রকল্প এবং নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
চট্টগ্রামকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকার ব্যাপক ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রামে নতুন নতুন সড়ক ও ফ্লাইওভার নির্মাণসহ এ নগরীর যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে। এ মহাসড়ককে পরবর্তীতে আট লেনে উন্নীত করার কাজও করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে রেললাইন ডবল করা হয়েছে। মেঘনা ও গোমতী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কর্ণফুলীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণের কাজ খুব শিগগির শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্যানেল হলে কর্ণফুলীর দুইপাড়ে সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন হিসেবে গড়ে উঠবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছর ২০ লাখ টিইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে ৬ কি.মি. দীর্ঘ বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। চট্টগ্রামের গ্যাস সংকটের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা থেকে গ্যাস আমদানির বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারত থেকে আমরা বিদ্যুৎ এনেছি, এখন গ্যাস আনা যায় কিনা সে বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। সেখানে কয়লা ভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। বন্দরের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে শিল্পায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি এবং আনোয়ারায় দু’টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
একদিনে এতগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন চট্টগ্রামবাসী তথা দেশের জন্য গর্ব এবং আনন্দের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্থাপনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাতারে সামিল হওয়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। গত ৭ বছরে দেশব্যাপী যে উন্নয়ন হয়েছে তা ইতিপূর্বে কোন সরকার করতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে জনগণের সম্পত্তি লুটপাট হয়। ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিশ্বমন্দার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের রফতানি তখন কমেনি। বাংলাদেশে বিশ্বমন্দার কোন প্রভাব আমরা পড়তে দেইনি। গত বছরের ৫ জানুয়ারী থেকে বিরোধী দলের টানা আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট জ্বালাও-পোড়াও এবং নাশকতার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতিকে অচল করার অপচেষ্টা করেছিল। তাদের সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ এখন যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম। দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রফতানি আয় ৩২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রিজার্ভ পৌঁছেছে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে। বর্তমানে আমরা ৭২৯টি পণ্য বিশ্বের ১৯২টি দেশে রফতানি করছি।
তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে। দারিদ্র্যের হার কমছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। ৫ কোটি মানুষ নিম্নআয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। সরকারি ও বেসরকারিভাবে দেড় কোটি মানুষের চাকরি হয়েছে। বাংলাদেশ আজ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ, উন্নয়নের রোল মডেল। যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভেদমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আজ গ্রামে বসে মানুষ সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে। কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মানুষ বিনামূল্যে ৩০ পদের ওষুধ পাচ্ছেন। ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বিএনপির আমলে মোবাইল ফোন ব্যবসা একজনের হাতে জিম্মি ছিল। আমরা তা উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। পদ্মা সেতু নিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে টার্গেট করা হয়েছিল। আমরা সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের সময়মত ট্যাক্স দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ব্যবসাবান্ধব। আমরা ব্যবসা করতে চাই না, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে চায়। ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে সরকার। ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন দেশে কি ধরনের পণ্য রফতানির সুযোগ আছে তা ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশের সাথে চীন, মিয়ানমার ও ভারতের অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলা হচ্ছে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে কানেকটিভিটি বাড়ানো হচ্ছে। এর সুফল কাজে লাগাতে হবে। বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে ব্যবসায়ীদের আগ্রহী হতে হবে। নিজেদের অভিজ্ঞতা না থাকলে প্রয়োজনে বিদেশীদের সহযোগিতা নিতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরকে আমি আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
চট্টগ্রামে নির্মিত দেশের প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার যেকোন দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সেন্টারে দেশের সকল রফতানি পণ্য একই ছাদের নিচে প্রদর্শনের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা এককথায় অসাধারণ। বিদেশীরা এখানে এসে আমাদের পণ্যের গুণগতমান সম্পর্কে জানতে পারবে যা আমাদের রফতানি বৃদ্ধি করবে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কারণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বিবেচনায় রেখেই আমরা চট্টগ্রামে পাঁচ তারকা হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু তৈরি করেছি। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দু’টি অর্থনৈতিক জোট সার্ক এবং আশিয়ানের সংযোগস্থল এই চট্টগ্রাম। তাই আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং অর্থনৈতিক কর্মকা- সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এই শহরের গুরুত্ব অত্যধিক। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুব শিগ্গির বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের সভাপতি এম এ লতিফ এমপি।
যেকোন ত্যাগে প্রস্তুত সেনাবাহিনী
দেশের স্বার্থে যেকোন সময় যেকোন ধরনের ত্যাগের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই ত্যাগের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ্য দেশপ্রেমিক কমান্ডিং অফিসার প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার অপরাহ্নে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের রেজিমেন্টাল কমান্ডারদের সম্মেলন এবং নবম টাইগার্স পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে একথা বলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার একটি সক্ষম ও আধুনিক সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। যেন তারা মাথা উঁচু করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সকল দায়িত্ব পালন করতে পারে। তিনি বলেন, জাতির যেকোন প্রয়োজনে, যে কোন ত্যাগ স্বীকারে সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে বলে আমি আশা করি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আত্মপ্রকাশ হয়েছে। সেজন্য আমি আপনাদের পক্ষ থেকে দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত প্রত্যাশা করি। প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠায় সন্তুষ্ট। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডারদের সম্মিলনে অংশগ্রহণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি উল্লেখ করেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তার পরিবারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ তার দুই ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও শহীদ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল এই রেজিমেন্টের অফিসার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে এ রেজিমেন্টের ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাঁচটি ব্যাটালিয়ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেজিমেন্টের সকল ইউনিটের সদস্যদের তাদের ইনিফর্মের কলারে লাল রঙের পাইপিং পরিধান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও অষ্টম ইউনিটের সদস্যদের জন্য এটি একটি গর্বের বিষয়। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের অংশ এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এই বাহিনীর প্রধান অঙ্গ। রেজিমেন্টের সদস্যরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার পাশাপাশি দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অন্যান্য জাতি গঠন কর্মকা-ে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। কেবল দেশেই নয়, তারা দেশের বাইরেও সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রধান এবং উচ্চ পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ছয় প্রকল্প উদ্বোধন
সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিকেলে নগরীর অনন্যা আবাসিক এলাকা ও কুয়াইশের সংযোগ সড়কে স্থাপিত মঞ্চ থেকে সুইচ টিপে প্রধানমন্ত্রী এসব উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এসব প্রকল্পের মধ্যে ৩টির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, ২টি নির্মাণাধীন, আর একটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হল। এর মধ্যে রয়েছে, ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কদমতলী ফ্লাইওভার, ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নগরীর উত্তর পাশের অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক ‘বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে সর্ববৃহৎ ম্যুরাল, ১ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ১৭.১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০ ফুট চওড়া চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড এবং ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা ট্রাংক রোড ও বায়েজিদ সড়কের মধ্যকার লুপ সড়ক তথা বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি চট্টগ্রামের নতুন ও সর্ববৃহৎ প্রকল্প ২ হাজার ৯শ’ ৫৭ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কুয়াইশে একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের ও জনগণের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে লুটপাট হয়। তারা দুর্নীতি করে, এতিমদের হক মেরে খায়। আমরা ক্ষমতায় এলে জনগণ কিছু পায়। আমরা ২০২১ সাল নাগাদ দেশকে মধ্যম আয়ে উন্নীত করব এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠা করব। আওয়ামী লীগ অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেবে। তিনি বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। এসব অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যার প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় ফিরে যান।
এদিকে চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর প্রায় দিনব্যাপী ব্যস্ত সফরে আগমন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকে ঘিরে মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে সমবেত হন। তারা প্রধানমন্ত্রীর ছবিসম্বলিত পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার বহন করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ